‘বাবারে আমার সব স্বপ্ন পানিতে তলিয়ে গেছে, এখন আমরা বাঁচব কেমনে’ সম্প্রতি সরেজমিনে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওরে গেলে আহাজারি করেন কৃষক মুক্তার মিয়া (৬৫)। তিনি তাহিরপুর উপজেলার উজান জামালগড় গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বলেন, মহাজনের কাছ থেকে সুদে ৮ (৩০ শতাংশে এক কিয়ার) কিয়ার বোরো ধান চাষ করেছিলেন, যা পানিতে তলিয়ে গেছে। তাছাড়া বাড়ির সামনের দুই কিয়ার জমিতে লাগানো বাদাম খেতও তলিয়ে গেছে অনেক আগেই। ৮ সদস্যের সংসারের এই অভিভাবক এখন হতাশ হয়ে পড়েছেন। হাওর পাড়ের মধ্য তাহিরপুর গ্রামের খেলু মিয়া বলেন, ১০ কিয়ার জমি রোপণ করেছিলাম। বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। এক টুকরো ধানও কাটতে পারিনি। উজান তাহিরপুর গ্রামের আবুল কালাম বলেন, দুই হাল জমি রোপণ করেছিলাম। বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড সদস্য মধ্য তাহিরপুর গ্রামের বাসিন্দা মতিউর রহমান মতি বলেন, এক হাল জমি রোপণ করেছিলাম। এক কিয়ারের মতো কাটা হয়েছে। বাকি সব বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার সব হাওর তলিয়ে গেলেও একমাত্র শনির হাওর কৃষকদের স্বেচ্ছাশ্রমে টিকে রয়েছে। গত ২৫ দিন ধরে হাওরের বাঁধগুলোতে রাত জেগে পালাক্রমে মাটি ভরাটের কাজ করছেন তারা। গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টির পানিতে হাওরের অধিকাংশ জমি তলিয়ে যাচ্ছে। তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, গত ২৫ দিন ধরে কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে হাওরের বাঁধগুলোতে রাত জেগে পালাক্রমে মাটি ভরাটের কাজ করছি। একমাত্র কৃষকের স্বেচ্ছাশ্রমের কাজের ফলেই শনির হাওরটি টিকে আছে। কেবলমাত্র খবর নেই বাঁধ নিয়ে কাজ করা সংশ্লিষ্টদের। তিনি বলেন, অতি বৃষ্টির কারণে হাওরের প্রতিটি বাঁধ বর্তমানে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। গত শুক্রবার দিনভর কৃষকদের নিয়ে লালুরখলা, আহাম্মকখালী, নান্টুখালী, ঝালখালী বাঁধে স্বেচ্ছাশ্রমে মাটি ভরাটের কাজ করছি।

উল্লেখ্য, এ হাওরে তাহিরপুর, জামালগঞ্জ ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার কৃষকরা প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ফসল চাষাবাদ করেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত লালুরখলা ও আহাম্মকখালী বাঁধ দিয়ে পানি উপচে পড়ছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। – জাগো নিউজ

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn