ভটেরখাল থেকে যুবকের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার

ছাতকের ভটেরখাল নদী থেকে আনুমানিক ২৬বছর বয়সী অজ্ঞাতনামা এক যুবকের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। গত সোমবার রাতে উপজেলার সিংচাপইড় ইউনিয়নের সিরাজগঞ্জ বাজার সংলগ্ন ভটেরখাল নদীর তীরে ভাসমান অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশের পরনে শুধু একটি হাফপ্যান্ট ছিল। গতকাল মঙ্গলবার সকালে পুলিশ ময়না তদন্তের জন্য ওই যুবকের লাশ সুনামগঞ্জ মর্গে পাঠিয়েছে। জাউয়াবাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ নির্মল চন্দ্র দেব জানান, উদ্ধার হওয়া লাশের শরীরের অনেকাংশেই পচন ধরেছে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।

 তীর খেলায় জড়িত এক জুয়াড়ী আটক

ছাতকে ভারতীয় ইন্টারনেট ভিত্তিক তীর খেলা পরিচালনাকারী মো. ফজলুর রহমান নামের এক জুয়াড়ীকে আটক করেছে থানা পুলিশ। সে দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের জাহাঙ্গীরগাঁও গ্রামের আবু তাহেরের পুত্র। মঙ্গলবার দুপুরে তাকে সুনামগঞ্জ জেল-হাজতে পাঠানো হয়েছে।  থানার এসআই শফিকুল ইসলাম জানান, গত সোমবার রাতে তীর খেলার টাকা নিয়ে গোবিন্দগঞ্জে কয়েকজনের সাথে ঝগড়া করছিল জুয়াড়ি ফজলুর রহমান। এসময় তাকে আটক করে থানায় খবর দেয়া হয়। পরে পুলিশ গোবিন্দগঞ্জ এলাকার পুলেরমুখ থেকে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

ছাতক-দোয়ারায় রাজনৈতিক দলগুলোতে বইছে নির্বাচনী হাওয়া

সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক-দোয়ারাবাজার) আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, খেলাফত মজলিস ও জামায়াতে ইসলামীসহ রাজনৈতিক দলগুলোতে বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী হাওয়া। ইতোমধ্যেরাজনৈতিক দলগুলোর সম্ভাব্য একাধিক প্রার্থী প্রচারণা শুরু করেছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা সভা-সমাবেশ ও মিছিল-মিটিংয়ের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের কাছে নিজেদের প্রার্থিতার কথা ঘোষণা দিচ্ছেন। এখানে এখন পর্যন্ত মোট ৫টি রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থী ১৫জন বলে জানা গেছে। তবে এরমধ্যে ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী ১০জন ও ২০ দলীয় জোটের ৫জন প্রার্থী। ১৪ দলের প্রার্থীরা হচ্ছেন- সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগ নেতা শামীম আহমদ চৌধুরী, দোয়ারা আওয়ামীলীগ নেতা ফরিদ আহমদ তারেক, আইয়ূব করম আলী, সুনামগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ মাস্টার, কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির নির্বাহী সদস্য আ.ন.ম ওহিদ কনা মিয়া ও দোয়ারাবাজার উপজেলা সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, ছাতক উপজেলা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান, উপজেলা সভাপতি আবুল লেইছ মো. কাহার, লন্ডন প্রবাসী রুহুল আমিন। ২০ দলীয় জোটের প্রার্থীরা হচ্ছেন- কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন, সাবেক ছাতক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরী মিজান, সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ মুনসিফ আলী, খেলাফত মজলিসের কে›ন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা শফিক উদ্দিন, জামায়াতে ইসলামীর সিলেট মহানগরী শাখার কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ আবদুস সালাম আল-মাদানী। এখানে আওয়ামীলীগে এমপি মানিক ও পৌর মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী নিয়ন্ত্রিত দুটি গ্রুপ রয়েছে। দু’গ্রুপেই রয়েছে তৃণমূল পর্যায়ে শক্তিশালী কর্মী বাহিনী। নির্বাচনের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দল ততোই মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। ১০টি সংসদ নির্বাচন ও একটি উপ-নির্বাচনসহ মোট ১১জন সংসদ সদস্যের মধ্যে এ আসনে ৪ বার আওয়ামীলীগ, একবার বিএনপি, একবার জাসদ, ৩বার স্বতন্ত্র ও দু’বার জাতীয় পার্টির প্রার্থী এমপি নির্বাচিত হন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ এমপিদের মধ্যে ১৯৭৩ সালের প্রথম সংসদ নির্বাচনে আলহাজ আবদুস সামাদ আজাদ, ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের ৭ম, ২০০৮ সালের ৯ম ও ২০১৩ সালের ১০ম নির্বাচনে মুহিবুর রহমান মানিক বিজয়ী হন। স্বতন্ত্র এমপিদের মধ্যে ১৯৭৩ সালের উপ-নির্বাচন ও ১৯৭৯ সালের ২য় নির্বাচনে এএইচএম আবদুল হাই এবং ১৯৯৬ সালের ৬ষ্ঠ নির্বাচনে কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন বিজয়ী হন। জাতীয় পার্টির এমপিদের মধ্যে ১৯৮৬ সালের ৩য় নির্বাচনে এএইচএম আবদুল হাই ও ১৯৯১ সালের ৫ম নির্বাচনে অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ বিজয়ী হন। ১৯৮৮ সালের ৪র্থ নির্বাচনে জাসদ থেকে ও ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত ৮ম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন বিজয়ী হন। জানা গেছে, এ আসনে অনেক রাজনৈতিক দলের অস্থিত্ব নেই। ১৪ দলীয় জোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও জাপা ছাড়া বাকি ১২টি দলের কোনো অস্তিত্ব এখানে নেই। ২০ দলীয় জোটের মধ্যে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও জাগপাসহ ৫টি দল ছাড়া এখানে ১৫টি দলের অস্তিত্ব নেই। এদিকে ২০ দলীয় জোট দীর্ঘদিন ক্ষমতা থেকে দূরে থাকায় একের পর এক মামলা-হামলায় জর্জরিত হয়ে অনেক নেতাকর্মী নিষ্ক্রিয় ও অনেকে চলে গেছেন বিদেশে। এরপরও সরকার দলের নব্য নেতাকর্মীর উৎপাত ও প্রশাসনের স্বজনপ্রীতির কারণে মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা নিষ্ক্রিয় থাকলেও তৃণমূলে রয়েছে তাদের শক্তিশালী ভোট ব্যাংক। বিএনপি মিলন ও মিজান গ্রুপ সভা সমাবেশ ও জাতীয় দিবসগুলো পৃথকভাবে পালন করছেন। সরকারদলীয় মানিক ও কালাম গ্রুপের নেতাকর্মীরাও কর্মসূচি পৃথকভাবে পালন করছেন। সর্বোপরি আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষের মধ্যেও নির্বাচন নিয়ে চলছে নানামুখী আলোচনা-সমালোচনা। তবে দুই উপজেলার উন্নয়ন কর্মকান্ডই এবারের মারাত্মক প্রভাব পড়বে বলে রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহল ধারণা করছেন। তারা বলেন, দুই উপজেলার কোনো গ্রামীণ সড়ক সংস্কার ও মেরামত না করায় এবারের নির্বাচনে এর প্রভাব পড়তে পারে।

সুরমা, চেলা ও পিয়াইন নদীতে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত : লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি

ছাতকে থেমে থেমে হওয়া বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ফের উপজেলার নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সর্বত্র দেখা দিয়েছে বন্যা। এরপরও এখনো বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। থেমে থেমে হওয়া ভারি বর্ষণে জনজীবনে নেমে এসেছে চরম বিপর্যয়। এখনো পাহাড়ি নদী ধলাই, পিয়াইন, চেলা, মরা-চেলা, সুরমা নদী ও ১২টি খালসহ হাওর-বিলের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বিগত চৈত্রমাসের আগাম বন্যায় উপজেলার ৮৫হাজার কৃষকের প্লেট থেকে বোরো ফসল কেড়ে নেয়া পর পরপর ফের দুটি বন্যায় রীতিমতো বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন উপজেলার কয়েক লক্ষাধিক বানবাসী কৃষক ও সাধারণ খেটে-খাওয়া মানুষ।

উপজেলার ছাতক সদর, ইসলামপুর, নোয়ারাই, কালারুকা, চরমহল্লা, জাউয়াবাজার, সিংচাপইড়, ভাতগাঁও, দোলারবাজার, দক্ষিণ খুরমা ও উত্তর খুরমা ইউনিয়নের একধিক স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত একসপ্তাহ থেকে  থেমে থেমে হওয়া বর্ষণে পাহাড়ি নদী ধলাই, পিয়াইন, চেলা, মরা-চেলা, সুরমা নদীসহ বিভিন্ন খাল ও হাওর-বিলের পানি অব্যাহত বৃদ্ধি ঘটতে থাকে। এতে করে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামীণ কাচা রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠতে শুরু করে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এনজিও দ্বারা পরিচালিত বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঢলের পানি প্রবেশ করায় তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন অঞ্চলের গ্রামীন রাস্তা-ঘাটে পানি উঠে পড়ায় মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাত্রায় দেখা দিয়েছে চরম বিপর্যয়। ফলে হাট-বাজার ও ব্যবসা-বাণিজ্যে পড়েছে এর নেতিবাচক প্রভাব। তাছাড়া হাওর-বিলসহ সর্বত্র ঢলের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গো-খাদ্যের অভাবে গবাধি পশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন বানবাসি লোকজন।এখনো পাহাড়ি নদী ধলাই, পিয়াইন, চেলা, মরা-চেলা, সুরমা নদীসহ উপজেলার খাল-বিল ও হাওরে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

 ৮জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের

ছাতকে এক প্রবাসির বাসার কেয়ারটেকার মহিলা ধর্ষণ ও লক্ষাধিক টাকা লুঠের অভিযোগে ৮জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।  মামলা দায়েরের পর থেকে আসামিরা গাঁ-ঢাকা দিয়েছে বলে জানা গেছে। ছাতক থানায় দায়েরি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী ২০০৩ইং) এর ৯(১) তৎসহ দঃবিঃ ১৪৩/৪৪৭/৪৪৮/৩৪১/৩৭৯ ধারায় মামলা নং ৬/১৭৩, তাং ০৩.০৭.২০১৭ইং মূলে অভিযোগ করা হয়, ২জুলাই গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউপির সুহিতপুর গ্রামের লন্ডন প্রবাসি নূরুন নাহারের বাসার কেয়ারটেকার নাজমা আক্তার (৩৫)কে ধর্ষণ ও ১লাখ টাকা লুঠে নেয়া হয়েছে। সুহিতপুর গ্রামের জনৈক আলিম ও ফয়জুল হকসহ ৮জন এঘটনায় জড়িত বলে মামলায় বলা হয়। ঘটনার পর লোকজন তাকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসি বিভাগে (স্মারক নং ২৪৮, তাং ০২.০৭.২০১৭ইং) ভর্তি করেন। এঘটনায় চিকিৎসাধিন নাজমা আক্তার সহোদর আব্দুল খালিকের মাধ্যমে ছাতক থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে থানায় এটি এফআইআর করা হয়। এরপর থেকে আসামিরা গাঁ-ঢাকা দিয়েছে বলে জানা গেছে।

–হেলাল আহমদ

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn