তাঁতী লীগ হচ্ছে ‘রাস্তার ভাসমান দোকান’ -কাদের
তাঁতী লীগ নেতাদের ‘ভাড়া করে লোক এনে দল ভারি করার’ চর্চার তীব্র সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। মঙ্গলবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে তাঁতী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ-উত্তরের সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি। কাদেরের বক্তব্যের মাঝখানে মিলনায়তনের শেষদিকের একজন স্লোগান দিয়ে ওঠেন। এ সময় কাদের তার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তুমি কী তাঁতী লীগ করো? করলে তাঁত কী বলো?’ এরপর তিনি বলেন, এই যে এত লোক, এত স্লোগান; এদের অনেকেই তাঁতী না। তাদের ভাড়া করে এনেছে নেতারা। কিন্তু দীর্ঘবছর ধরে যারা তাঁতী লীগে আছে তারাই কমিটিতে প্রাধান্য পাবে। মঞ্চে বসা নেতাদের উদ্দেশে কাদের বলেন, দল ভারী করতে ভাড়া করা লোক যারা এনেছে তারা যেন কমিটিতে স্থান না পায়। এসব প্র্যাকটিস বন্ধ করুন, ভালভাবে চলুন।
তিনি বলেন, কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক আজই ঘোষণা করবেন। পূর্নাঙ্গ কমিটি এক সপ্তাহের মধ্যে ঘোষণা করবেন। এখন দেরিতে কমিটি দেওয়া ট্রেন্ড হয়ে গেছে, এতে যোগ্যদের পরিবর্তে অযোগ্যরা স্থান পায়। দর কষাকষি চলে। কিন্তু নেতা হবে যোগ্যতায়। এ সময় কাদের তার পেছনে দাঁড়ানো কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ফটোসেশন? ক্যামেরায় চেহারা দেখানো? লোক এখানে দেখতে চাই না, ওখানে (দর্শকসারিতে) দেখতে চাই। এখানে এত নেতা! এরপর তাঁতী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চের কর্মীদের সরিয়ে দিলেও কিছুক্ষণ পরই আবার তারা কাদেরের পিছনে দাঁড়ান। ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি বলেন, এরা তো রাস্তার ভাসমান দোকান, সকালে উচ্ছেদ করলে বিকালে এসে আবার বসে। আর এরা কিনা আবার আমাদের দলের নেতা! কত নেতা, এদিকে নেতা, ওদিকেও নেতা; ডানে-বামে নেতা।
এ সময় দর্শকসারি থেকে ‘কাউয়া’ ‘কাউয়া’ রব ওঠে। এরপর কাদের বলেন, পিছনে (মঞ্চে) সব সমস্যা, সামনে কোনো সমস্যা নেই। নেতাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অন্তর্কলহ করবেন না, ঘরের ভিতর ঘর তুলবেন না, মশারির ভিতর মশারি দিবেন না। ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। সম্মেলনের প্রচারনার সমালোচনা করে কাদের বলেন, এত নেতা, এত বন্দনা; ভয় করে। এই চাটুকার, মোসাহেবরা জঙ্গিবাদের চেয়ে ভয়ঙ্কর। এরা অনেক ক্ষতি করতে পারে। আপনি যা না তা বলবে, পামে আকাশে উঠিয়ে দিবে। এ কারণেই বলি, স্টেজে লোক কম তুলেন। তিনি বলেন, কত ব্যানার, এত ছবি! এই ছবির লোকগুলো কারা? এরা বসন্তের কোকিল হয়ে আসে। বসন্ত চলে গেলে চলে যায়। এসব মৌসুমী অতিথিদের দরকার নেই। দুঃসময়ের কর্মীদের মূল্যায়ন করতে হবে।
কাদের বলেন, কিছু লোক আছে, তারা তাঁত শিল্পের ধারেকাছেও নেই। এখন বসন্তের কোকিল হয়ে এসেছে, পদের জন্য এসেছে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ঢাকা শহরের কিছু প্রতিষ্ঠিত লোক, বড় ব্যাংকের লোক, মিডিয়ার মালিক; তারা তাঁতী লীগের পোস্ট পেতে এসেছিল। এদের দুঃসময়ে ১০ হাজার পাওয়ারের বাতি জ্বালিয়েও খুঁজে পাওয়া যায় না। সুসময়ে যারা আসে, দুঃসময়ে তারা সবার আগে পালায়। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক নেছার উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন তাঁতী লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার শওকত আলী, সাধারণ সম্পাদক খগেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ। এর আগে গত ১৯ মার্চ কেন্দ্রীয় তাঁতী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।