এম এইচ রবিন- করোনা ভাইরাসের কারণে এবার এইচএসসি পরীক্ষা হচ্ছে না। এসএসসি ও জেএসসির ফল গড় করে পরীক্ষার্থীদের ফল দেওয়া হবে। এ ফল প্রকাশ হবে ডিসেম্বরে। এর পর শিক্ষার্থীদের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধ। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ জন্য কৌশল সাজাতে হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের টেকনিক্যাল কমিটিকে। শিক্ষাবিদরা মনে করেন সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে বিশেষায়িত, প্রকৌশল ও মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পদ্ধতি উদ্ঘাটন করা হবে জটিল ও চ্যালেঞ্জিং। সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পর্যাপ্ত আসন আছে। ফলে আসন সংকটে কেউ ভর্তিবঞ্চিত থাকবে না। তবে আগের মতোই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির প্রতিযোগিতা বাড়বে। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষার্থী ‘পাস’ করায় এবার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আগের চেয়ে বেশি শিক্ষার্থী পাবে।এসএসসি ও জেএসসি বা সমমানের পরীক্ষার ভিত্তিতে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কীভাবে মূল্যায়ন করা যায়, সে বিষয়ে গাইডলাইন তৈরির জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি বিশেষজ্ঞ টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করেছে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে কমিটি সুপারিশ দেবে। এর ভিত্তিতে ডিসেম্বরের মধ্যেই মূল্যায়ন শেষ করে ফল ঘোষণা করা হবে। একেবারে ভিন্ন একটি পদ্ধতিতে উচ্চমাধ্যমিকের ফল হওয়ায় এসব শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষাবিদদের মনেও কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ আমাদের সময়কে বলেন, সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে বিশেষায়িত ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির পদ্ধতি নিরূপণ করাই হবে কমিটির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জের জায়গাটা হচ্ছে- শিক্ষার্থীরা নানা ক্রাইটেরিয়া থেকে এসে উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষায় অংশ নেয়। কেউ মাদ্রাসা থেকে, কেউ স্কুল থেকে, কেউ বিভাগ পরিবর্তন করে, আবার কেউ একটিতে (জেএসসি) ভালো ফল করেছে; কিন্তু পরেরটায় (এসএসসি) তেমন ভালো করেনি। এমনটা হতে পারে- কেউ দুটোই ভালো করেছিল; কিন্তু এইচএসসির ফল ভালো হতো না। স্বাভাবিক পদ্ধতিতে সবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় যে ফল, এটার ভিত্তিতে পরবর্তী উচ্চশিক্ষায় ভর্তির মানদ- নির্ণয় হতো। এখন অনেক প্রশ্নের সমাধান খুঁজতে হবে টেকনিক্যাল কমিটিকে।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেন, উচ্চশিক্ষায় ভর্তির জন্য তো উচ্চমাধ্যমিকের ফল বেশি প্রযোজ্য। এখন উচ্চমাধ্যমিকের ফল তৈরি হচ্ছে শিক্ষার্থীর জেএসসি ও এসএসসির ফলের ভিত্তিতে- এমনটা একেবারেই ভিন্ন একটি পদ্ধতি। বুঝতে পারছি না, কীভাবে অনেক টেকনিক্যাল বিষয় সমন্বয় করা হবে। সাধারণ শিক্ষার্থীর পাশাপাশি মাদ্রাসা ও কারিগরি- দুই ধরনের শিক্ষার্থীর মূল্যায়ন তার আগের ফলের ওপর করাটা যেমন চ্যালেঞ্জের আবার এদের জন্য প্রকৌশল এবং মেডিক্যালে ভর্তিও জটিল। জটিলতা এখন যা-ই হোক, এটি নিয়ে বিশেষজ্ঞ টেকনিক্যাল কমিটি কাজ করবে। তারা বিষয়টি যখন প্রকাশ করবে, তখন অনেক প্রশ্নের উত্তর আমরা পাব।

শিক্ষা বোর্ডগুলোর তথ্য অনুযায়ী এবছর উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পরীক্ষার জন্য নিবন্ধন করেছিল ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৯ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ১০ লাখ ৭৯ হাজার ১৭১ জন নিয়মিত এবং দুই লাখ ৬৬ হাজার ৫০১ অনিয়মিত পরীক্ষার্থী রয়েছে। অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে এক বিষয়ে ফেল করেছিল ১ লাখ ৬০ হাজার ৯২৯ জন, দুই বিষয়ে ৫৪ হাজার ২২৪ জন এবং সব বিষয়ে ৫১ হাজার ৩৪৮ জন ফেল করেছিল। এ ছাড়া ৩ হাজার ৩৯০ প্রাইভেট পরীক্ষার্থীরও এবার এইচএসসিতে অংশ নেওয়ার কথা ছিল। গতবার পাস করলেও আরও ভালো ফলের জন্য এবার পরীক্ষায় অংশ নিতে চেয়েছিল ১৬ হাজার ৭২৭ জন।

ইউজিসির তথ্য অনুযায়ী সব পাবলিক, প্রকৌশল, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মহানগরীর সাত কলেজ ও কারিগরিসহ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য আসন রয়েছে ২১ লাখ ২০ হাজার ৯২৫। এর মধ্যে পাবলিক, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজ মিলিয়ে আসন ৬৪ হাজার। এসব আসনেই হয় বেশি প্রতিযোগিতা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের একটি অংশ দেশের বাইরে চলে যায় প্রতিবছর। অনেকে বিভিন্ন কারণে আর পড়াশোনা চালিয়ে নিতে পারে না। ফলে আসন সংকট নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। তবে ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পছন্দের বিষয়ে পড়ার ক্ষেত্রে বরাবরের মতোই চাপের মুখে পড়তে হবে শিক্ষার্থীদের। ভালো ফল করা বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরই স্বপ্ন মেডিক্যাল, বুয়েট বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। শতভাগ শিক্ষার্থী যদি পাস করে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন অনেক কমের কারণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবার বেশি শিক্ষার্থী পাবে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn