‘বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির পাগলা ঘোড়ার মুখে লাগাম দিতে হবে
একে কুদরত পাশা-
সুজন- সুশাসনের জন্য নাগরিক, সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির উদ্যোগে বুধবার দুপুর ১২ ঘটিকায় শহরের শহীদ জগৎ জ্যোতি পাঠাগারে, সুনামগঞ্জকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবিতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সুজন জেলা সভাপতি এ্যাডভোকেপ হোসেন তওফিক চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সম্পাদক সাংবাদিক মাসুম হেলালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে, এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুজনের কেন্দ্রীয় সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। বিশেষ অতিথি সাবেক াধ্যক্ষ পরিমল কান্তি দে, ন্যাথানায়েল এডউইন ফেয়ারক্রস, জেলা আইনজীবি সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট সৈয়দ সায়েক আহমদ, দৈনিক সুনামগঞ্জ প্রতিদিন সম্পাদক কামরুজ্জামান চৌধুরী, উন্নয়ন কর্মী তাজিমা হুসেন মজুমদার। সুজন জন-মানুষের এই ভাবনার সাথে সম্পূর্ণরূপে একমত হয়ে সুনামগঞ্জকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবিতে বোরো প্রধান এই জেলায় কৃষকদের বাঁচিয়ে রাখতে চারটি প্রস্তাবনা তুলে ধরে। জেলার ফসলহারা কৃষককে মহা দুদর্শা থেকে পরিত্রাণ দিতে সরকার র উত্থাপিত দাবি ও প্রস্তাবনাগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিবেন এবং সেগুলো দ্রুত কার্যকরে উদ্যোগী হবেন বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সুজন সভাপতি বলেন, আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে আপনাদের সম্মুখে সুনামগঞ্জের ফসলহারা কৃষকদের পক্ষে কিছু কথা বলার উদ্দেশ্যে উপস্থিত হয়েছি। আপনারা জানেন, সুনামগঞ্জে এবার বোরো ফসল চাষ হয়েছে প্রায় সোয়া দুই লাখ হেক্টর জমিতে। সরকারি হিসাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আবাদকৃত ফসলের ৮২ ভাগ বলা হলেও সেটা ৯০ ভাগের বেশি বলে মনে করেন কৃষকেরা। এমন পরিস্থিতিতে বছরের একটিমাত্র ফসল হারিয়ে কৃষক পরিবারগুলোতে হাহাকার চলছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জের তথ্যমতে, ফসলের সুরক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে সরকার ৬৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। সুনামগঞ্জের বৃহৎ ৩৭টি হাওরসহ ৪২টি হাওরে ২০ কোটি ৭০ লাখ টাকা ২২৫টি প্রকল্পের পিআইসি অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হয়। স্থানীয় সরকারের চেয়ারম্যান/সদস্যদের সভাপতি করে গঠিত এসব প্রকল্প অনুমোদন দেন স্থানীয় সংসদ সদস্যগণ। অপরদিকে ৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭৬টি প্যাকেজে ঠিকাদার দিয়ে বোরো ফসল রক্ষায় বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারে দরপত্র আহ্বান করে পাউবো। প্রকল্পের কাজ ২৮ ফেবব্রুয়ারি ও ঠিকাদারদের কাজ ৩১ মার্চ ২০১৭ এর মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বরাদ্দকৃত অর্থ ভাগ-বাটোয়ারা করার অসৎ উদ্দ্যেশে অনেক পিআইসি ও ঠিকাদারগণ কাজ শুরু করেছেন কার্যাদেশ অনুযায়ী কাজ সম্পন্নের শেষ পর্যায়ে এবং বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ার পরে। নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, মোটা অঙ্কের সরকারি বরাদ্দের এই টাকা দিয়ে হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কথা থাকলেও কাজ হয়েছে নামে মাত্র। বরাদ্দকৃত অর্থের একটি বড় অংশ পাউবো প্রকৌশলী, পিআইসি, ঠিকাদারগণ ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। ঠিকাদারের ২০টি বাঁধে কোনো কাজই হয়নি। পাউবো-এর দাবি, কাজ না হওয়া বাঁধের সংখ্যা ১২টি। যার ফলশ্রুতিতে পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেসকল বাঁধের কাজ শুরু হয়নি ঐসকল বাঁধ এবং আংশিক নির্মিত একের পর এক ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে হাওরের ফসল তলিয়ে যেতে শুরু করে।
জাতীয় একটি দৈনিকের অনুসন্ধান থেকে জানা যায়, ৩১ মার্চের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ১১৬টি প্যাকেজের কাজে ঠিকাদারগণ সর্বোচ্চ ২০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করেন। বেশিরভাগ ঠিকাদার সম্পন্ন হওয়া কাজ থেকে বিল তুলে নেন অনেক বেশি। বাঁধ নির্মাণের এই দুর্নীতির সঙ্গে পাউবোর যে তিন কর্মকর্তার নাম ওঠে এসেছে তারা হলেন, সিলেটের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আবদুল হাই, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম সরকার ও সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী আফসার উদ্দিন। অভিযোগের পর সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলীকে কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রনালয়। যদিও তার এই প্রত্যাহারকে গুরু পাপে লঘু দন্ড অথবা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগকে আড়াল করার অপপ্রয়াস হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সুনামগঞ্জের বোরো ফসল নিয়ে দূর্দশার এই চিত্র এবার নতুন নয়। বছরের পর বছর এক ফসলের উপর নির্ভরশীল কৃষকরা দুর্নীতি আর প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করতে করতে অনেকটা সর্বশান্ত। এই অবস্থার পরিবর্তন এখন সময়ের দাবি। সর্বগ্রাসী দুর্নীতির কালো থাবা থেকে বোরো চাষীদের রক্ষা করতে জেলার প্রতিটি বিবেকবান মানুষ আজ স্বোচ্চার, প্রতিবাদমুখর। তারা মনে করেন সুনামগঞ্জের বোরো চাষীরাই জেলার অর্থনীতির মূলচালিকা শক্তি। এই খাতকে সুরক্ষা দিতে না পারলে এই জনপদের মানুষ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি ও অর্থনেতিকভাবে যারপরনাই পিছিয়ে পড়বে। উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন, লক্ষণশ্রী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল অদুদ, আমরা হাওরবাসীর প্রধান সমন্বয়ক রুহুল আমীন, কৃষক বন্ধু অমর চাঁদ দাস, আব্দুল কাইয়ূম, সাংবাদিক আজিজুল ইসলাম চৌধুরী, মাহবুবুর রহমান পীর, পঙ্কজ কান্তি দে, শাহজাহান চৌধুরী, ইমরানুল হক চৌধুরী, দেওয়ান গিয়াস চৌধুরী, জাকির হোসেন প্রমূখ।