মাগুরছড়ায় অগ্নিকাণ্ড : ২০ বছরেও মিলেনি ক্ষতিপূরণ
আজ ভয়াল ১৪ জুন। ২০ বছর আগে এই দিনে মাগুরছড়া গ্যাসকুপে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। বিষ্ফোরণের ২০ বছর অতিক্রান্ত হলেও চুক্তি মোতাবেক মার্কিন কোম্পানি অক্সিডেন্টালের কাছ থেকে আজও ক্ষতিপূরণ আদায় করা যায়নি। অক্সিডেন্টালের উত্তরসূরী শেভরনও এখন দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে এ অবস্থায় ক্ষতিপূরণ আদায়ে তৈরী হয়েছে অনিশ্চয়তা। ১৯৯৭ সালের এইদিন মধ্যরাতে মৌলভীবাজারের মাগুরছড়া গ্যাস কুপে ভয়াবহ বিষ্ফোরন ঘটে। বিষ্ফোরনে মুর্হুতে আগুনের লেলিহান শিখা চারিদিকে ছড়িয়ে নিমিষেই পুড়ে ছাই হয়ে যায় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের প্রায় ২৫ হাজার গাছ জীবজন্তুসহ আশপাশের প্রায় ৮৭.৫০একর এলাকা। চা বাগান, বনাঞ্চল, বিদ্যুৎলাইন, রেলপথ, সড়কপথ, গ্যাসকূপ, পরিবেশ, প্রতিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। পুড়েছিলো মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির (আদিবাসী গ্রাম) বাড়িঘর ও পানগাছ। মাগুরছড়া পুঞ্জির মন্ত্রী (পুঞ্জিপ্রধান) জিডিশন প্রধান সুচিয়াঙ বলেন, ’সেই দিনের কথা মনে হলে এখনও আমরা আৎকে ওঠি। সারা জীবনই হয়তো সেই দুঃসহ স্মৃতি বয়ে বেড়াতে হবে।’
তিনি আরো জানান, তারা ক্ষতিপূরণ বাবদ কিছু টাকা পেয়েছিলেন। ফুলবাড়ি চা বাগানের শ্রমিক অনিক ভূইয়া বলেন, তখন আমি আরো ছোট ছিলাম কিন্তু তখন আমরা এই এলাকায় নানা জাতের পশুপাখির দেখা পেতাম কিন্তু আগুন লাগার পর এখন অনেক প্রাণির দেখাই পাওয়া যায় না।’ মার্কিন কোম্পানি অক্সিডেন্টালের অদক্ষতায় লাগা আগুন গ্যাসকূপের ৮৫০ফুট গভীরতায় পৌছালে বিস্ফোরণে পুড়ে যায় ভূ-গর্ভস্থ উত্তোলনযোগ্য ২৪৫.৮৬ বিসিএফ গ্যাস। যার তৎকালিন মূল্য প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। গ্যাস ছাড়া পরিবেশ ও অন্যান্য ক্ষতির পরিমাণ সেই সময় ধরা হয়েছিল ১০হাজার ১১৬ কোটি টাকা। অক্সিডেন্টাল যৎসামান্য ক্ষতিপুরণ দিয়ে ইউনিকল নামে আরো একটি কোম্পানির কাছে ফিল্ড বিক্রি করে বাংলাদেশ থেকে চলে যায়। পরবর্তীতে ইউনিকল মার্কিন কোম্পানি শেভরনের কাছে গ্যাসকূপ বিক্রি করে এদেশ ত্যাগ করে। এখন শেভরনও তাদের সম্পদ বিক্রি করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। কিন্তু ক্ষতিপূরণ আদায়ে কোন উদ্যোগ নেই সরকারের।
তবে পরিবেবাদী ও বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক সংগঠন ক্ষতিপূরণ আদায়ের দাবিতে আজও আন্দোলন করছেন। লাউয়াছড়া জীববৈচিত্র রক্ষা আন্দোলনের আহবায়ক জলি পাল বলেন, সেই বিষ্ফোরণে লাউয়াছড়ার প্রায় ২৫ হাজার গাছ পুড়েছিলো আর জীববৈচিত্রের ক্ষতির কোন সঠিক হিসেব কেউ করেনি। সেই ধ্বংসযজ্ঞের ছাপ এখনো লাউয়াছড়া বয়ে বেড়াচ্ছে। শেভরণ এই দেশ থেকে সবকিছু গুটিয়ে নিয়ে যাবার আগেই যা করার করতে হবে নয়তো কোন দিন আমরা এই ক্ষতি আদায় করতে পারবো না।’ সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ) মিহির কুমার দো বলেন, ‘ তৎকালিন সময়ে লাউয়া ছড়া জাতীয় উদ্যানের প্রায় ৭শ একর সংরক্ষিত বনাঞ্চল গাছ পালা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং জীববৈচিত্রের মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। পরবর্তীতে একটি কমিটির মাধ্যমে ক্ষয়-ক্ষতিক্ষতি নিরূপণ করে পরিশোধের জন্য সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হলেও এখন পর্যন্ত কোন ক্ষতিপূরণ বন বিভাগ পায়নি।