শাহরিয়ার বিপ্লব(ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে)

কিছু লিখতে পারি না, দেখতে পারি না, বলতে পারি না। যাই করি নিজের উপর পড়ে। আমার স্ত্রী সরকারী দলের কর্মী। কিছু না পেলেও দায়িত্ব এড়াতে পারবে না। আমার পরিবার তিন প্রজন্মের জন প্রতিনিধিত্ব করছে। রাজনীতিতেও তিন পুরুষের পদচারনা। আমার ভাই ভাতিজারা সরকারী দলেও আছে, বিরোধী দলেও আছে। গ্রামের রাজনীতি তারাই করছেন। তাই, যাই বলি নিজের উপরেই পড়ে। ফসল হারা হয়েছে মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জমি তলিয়েছে। গবাদিপশু নিয়ে বিপদে পড়েছে মানুষ। এই মানুষগুলু কারা। যারা একান্তই গরীব, সারা বছর অন্যের বাড়ীতে কাজ করেন, কৃষিশ্রমিক হিসাবে হেমন্তে কাজ করেন বেতন পান, বর্ষায় মাছ ধরেন অথবা শহরে চলে যান, কেউ গার্মেন্টসে কেউ ইট ভাংতে, কেউ রাজমিস্ত্রি কেউবা রিকশাচালক হয়ে যান। এদের মধ্যে অনেকেই সারাবছর ভি জি ডি, ভি জি এফ, দুস্থমাতা, বিধবাভাতা, বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধিভাতা, কর্মসৃজন প্রকল্পের পারিশ্রমিক, টি আর, কাবিখা, কাবিটা প্রকল্পের সুবিধাভোগী। গ্রামের এই শ্রেনীটা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ?
নাকি যারা এই সুবিধার কোন কিছুই ভাগীদার নয়, কিন্তু হাওরে কিছু জমি আছে, ঘরে দুই/তিনটা গরু আছে। ঘরে কোন চাকুরীজীবী বা ব্যবসায়ী নাই। সারা বছর এই জমির ফসলের উপর নির্ভরশীল। তারা?  এই ফসলটাই তো তলিয়ে গেছে। এখন নিজে খাবে কি, কামলার বেতন দিবে কিভাবে? গরুকেই বা কি খাওয়াবে? এই শ্রেনীটাকে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ বলা হবে কি না?
সরকার কাদের জন্য এই সহায়তা দিচ্ছেন? যারা ফসল হারিয়েছেন তাদেরকে নাকি যারা সারাবছর কাজ করে খান তাদেরকে? যারা সারা বছর কাজ করে খায়, তাদের জন্য এই দলের সরকারই উপরোক্ত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু করেছেন। তারা তো পাচ্ছেন। প্রয়োজনে আরো বাড়ানো হোক। কিন্তু বর্তমান বন্যা পরবর্তী ৫০০ টাকা ও ৩৮ কেজি চালের কর্মসূচী কাদের জন্য, এই বিষয়টি মাথায় ঢুকতেছে না।

৩৮ কেজির জায়গায় ২৭ কেজি, ৩০ কেজির জায়গায় ২২ কেজি, নাম দিতে গেলে ১০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা। একই ঘরে ২/৩ জনের নাম, সবই হোক। ডিলারগন যা করছেন করুক। কিন্তু— আমার যে বোনটি ২ হাল জমি করেছিল, কৃষক হিসাবে যে আত্বপরিচয় দেয়, ভোটার তালিকায় যার নাম রয়েছে কৃষক, যে জমির খাজনা দেয়, ট্যাক্স দেয়, যার ৪ টি গরু আছে, দুইটি কৃষিশ্রমিকের বেতন যার ঘারে রয়েছে, সামাজিক নিরাপত্তার কোন তালিকায় যার নাম নাই,অথচ যে ফসল তুলতে পারলো না, তাকে কোন তালিকায় উঠাবো?? তাকে কি বলবো?? আমার স্ত্রী আমার কথার উত্তর দিতে পারেন না। তিনি সংশ্লিষ্ট দের দরজায় দরজায় ঘুরেও ব্যর্থ হচ্ছেন এই বিষয়টি বোঝাতে। কর্মকর্তারা সবাইকেই কৃষক সংগায়িত করছেন আর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এই সুযোগটাই নিচ্ছেন। কিন্ত জনদরদী প্রধানমন্ত্রী কি এটাই চেয়েছিলেন?? তাই, কিছুই লিখবো না, শুনবো না, দেখবোও না।।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn