ইশতিয়াক রুপু-ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে)-

সুনামন্জের স্হানীয় ওয়াপদা অফিস শুণ্য শিরোনামে একটি খবর আমার দৃষ্টি আকর্ষন করলো। খবর টি পড়ে বহুল পঠিত বাংলা একটি প্রবাদ বাক্য মনে পড়ে গেল। দুষ্ট গরুর চেয়ে শুণ্য গোয়ালই ভালো। অধিকন্ত অনেক প্রকৌশলী গন বলছেন। উনারা অফিসে কোন কার্য় উপলক্ষে আসেন নি। এসেছেন শুধু বেতন ভাতা তুলতে। তাহলে আমার প্রশ্ন বর্তমানে এই অফিস কি শুধু কয়েক জন অসাধু কর্মকর্তাদের বেতন ভাতা সংগ্রহের কার্যালয় রূপে খোলা থাকবে? এবার সুনামগন্জ জেলায় যে নজীর বিহীন ফসলহানি হয়ে গেল। পাশাপাশি জেলার লক্ষলক্ষ কৃষককুল আজ সর্বস্বান্ত হয়ে চরম দারিদ্রতায় নিমজ্জিত। তার জন্য কি শুধু ঐ কয়েক জন গুটিকয়েক ঠিকাদার গন দায়ী ? আমি তা কেনো মানতে রাজী না। তা একটু বলতে চাইছি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড নামের ঐ প্রতিষ্টান টি আদিকাল হতেই কর্মকর্তা ও ঠিকাদার দের জীবন উন্নয়ন প্রতিষ্টান হিসাবে সেবা করে যাচ্ছে। তারা না করতে পেরেছে হাওর রক্ষার উন্নয়ন অথবা ফসল রক্ষার উন্নয়ন। কোনটি নয়। তা হলে আজ যদি স্বভাবত প্রশ্ন উঠে। ঐ অপদার্থ অযোগ্য প্রতিষ্ঠান রেখে লাভ কি? নিশ্চয় এই দাবীকে কোন অবস্হায় পাশ কাটিয়ে যাওয়া যাবে না। এমনকি এই প্রতিষ্টান টি যে মন্ত্রনালয়ের অধীন। সেখানের বর্তমানের বা অতীতের সর্ব্বোচ্চ কর্তা ব্যাক্তিগন কখনোই এর মূল উদ্দেশ্য বা কার্যপরিধি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন না। আজো নয়। প্রসংঙ্গ ক্রমে বর্তমান সর্ব্বোচ্চ কর্তা ব্যাক্তির কথাই বলছি। এ বৎসর নজীরবিহীন ফসলহানিতে তিনি নিয়ে আসলেন। ফুট গজের থিওরী। যা সুনামগন্জের ভাগ্যহতে জনগন মেনে নেয়নি। তবে এর জন্য আমি উনাকে দোষারূপ করবো না। প্রথমত তিনি হাওরের প্রকৃতরূপ ধরন সহ নানা সময়ের নানা কর্মকান্ড সম্পর্কে মোটেই ওয়াকিবহাল নন। তিনি সম্পূর্ণ রূপে মন্ত্রণালয়ের অসৎ কর্মকর্তাদের বানানো তথ্যের উপর নির্ভর শীল। উনাদের সারা বৎসরের সিজন ওয়ারী একটি কর্মতালিকা থাকে । যার আসল চিত্র হলো। মন্ত্রনালয় ভিত্তিক উন্নয়ন বরাদ্দে যতটুক সম্ভব বেশি অর্থের সংস্হান করা। পরে তা কমিশন ভিত্তিক বরাদ্ধ করা।

আমার দূ:খ হয় বিভাগীয় ও জেলার বরখাস্ত কৃত প্রকৌশলীদের জন্য। তারা সহ আরো যারা মাঠ পর্য়ায়ে চাকুরীচূত্য হয়েছেন। উনারা সবাই হলেন বলির পাঠা। উনার শুধু উপরের হুকুম তামিল করেছেন মাত্র। যে প্রক্রিয়াতে আলোচ্য মন্ত্রানলয়ের কাজ চলে তার আগোগোড়া পোষ্ট মর্টেম প্রয়োজন। বাৎসরিক বরাদ্ধে ভাগ বন্টন শুধু যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হয় তা কিন্তু নয়। কোন বিভাগ বা কোন দপ্তরে কত যাবে তা নির্ধারন হয় সংস্হার অধিদপ্তরের মূল কর্মকর্তার অলিখিত কমিন্টমেন্টের ভিত্তিতে। কেননা মোট বরাদ্ধের কত ভাগ জনগন তথা কৃষককুলের জন্য ব্যবহৃত হলো তা এখানে বিবেচ্য বিষয় থাকে না।

আসল বিবেচ্য বিষয় হলো সমান ও সন্তোষজনকভাব সঠিক অংকের ভাগ বাটায়োরা। কেননা এই বাটোয়ারা হতে প্রাপ্ত টাকা দিয়ে পরিশোধ হবে বিদেশে ছেলে মেয়ের পড়াশুনার খরছ। নিউইয়র্ক কিম্বা টরোন্টো নিদেন পক্ষ মালোশিয়ায় একটি পারিবারিক বাড়ী কেনার দাম। এ ছাড়াসমাজের বিভিন্ন ক্লাবের বড় অংকের চাঁদা প্রদান। পিতা বা মাতার নামের ফাউন্ডেশনসহ আরো সামাজিক কাজের ব্যয় নির্বাহ। সর্বশেষে অবসরে যাবার পর জাতীয় নির্বাচনের জন্য মাত্র ১০/১২ কোটি টাকার একটি ফান্ড। কেননা এম পি হতে পারলেই তো। মন্ত্রীর তালিকার শেষ দিকে নাম। তাই এত সব গুরুত্বপূর্ণ সমাজহিতকর কাম কাজে শুধু কি হাওর রক্ষা আর ফসল রক্ষায় নজর রাখলে চলবে। নজর রাখতে হবে পাওনা হিস্যাবে যেনো কমতি না পড়ে। সংগে আরো একটি মাস্টার প্লান তৈরী করে রাখতে হয়। যদি দৈব্য দূর্বিপাকে কখনো কোন সমস্যা এসে যায়।

তাৎক্ষনিক ভাবে ঠিক করে নিতে হয়। নিজের চেয়ার বাঁচাতে কোন পর্য়ায় পর্যন্ত কলিগ দের বলি দিতে হবে। সুতরাং আমি হলপ করে বলতে পারি। এ পর্যন্ত যত কিছু একশন নামের সার্কাস দেখানো হয়েছে। তা সবই পূর্ব পরিকল্পিত। প্ল্যান এর পর প্লান বি এর শুরু। এখন চলছে অবজারভেশন। আরো একশন আসবে ঠান্ডা মাথায় ও ধীরে ধীরে। মামলার বিষয়ে এতটুকু বলা যায়। মামলা হয়তো তার নিজস্ব গতিতে চলবে। যেহেতু বিষয়টি আইন আদালত সম্পর্কিত তাই এই বিষয়ে কোন মন্তব্য না করাই ভালো। তবে একটি চিত্র আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। তা হলো মামালার সকল আসামী রা এই বলে নিজেদের সারাক্ষন ধিক্কার দেবে আর কেদে কেদে বলবে। কমিশনের ভাগ সবাই পাইলো। আর আমরা খাইলাম মামলা। তা সে ঠিকাদার হন অথবা চাকুরীচূত সরকারী কর্মচারী গন। আর কেহ না জানলে সত্য ঘটনা শুধু একজনই জানেন। যিনি দিলেন আর যিনি নিলেন। কেননা কোন সিস্টেমস লসে তিনি পাইলেন আর কাকে কাকে দেবার চুক্তি ছিলো। তা তো ছিলো বড়ই ঘরোয়া।

এতক্ষনের নানা বিশ্লেষনের বাস্তব একটি উদাহরণ দিয়ে আজকের এই লেখা শেষ করবো। আগামিতে এই আকাশ পাতালের ন্যায় বিরাট সমস্যার বিষয়ে আমার স্বল্প জ্ঞানের কিছু পরামর্শ নিয়ে আসবো। প্রায় ৩০/৩২ বছর আগের কথা। আমার এক বন্ধু কোন এক হরিলুট সংস্হার দাপুটে ও দামী ঠিকাদার। হাওরের সুষ্ট পানি নিষ্কাসনের জন্য বৃহৎ কাঠামো নির্মান করবে। অনেক চেষ্টা তদবির করে সাথে নিজের পকেটের টাকা পয়সা খরছ করে। পুরো প্রকল্পের প্রক্কলিত ব্যয় ঠিক করে অধিদপ্তরে পাঠানো হলো। কয়দিন পর অধিদপ্তরের প্রধান খবর করলেন দেখা করবার জন্য। দেখা করবার পর আমার বন্ধুতে প্রথমে জিজ্ঞেস করলেন ঠিকাদারীর বয়স কতো। বন্ধুর কম্পন মিশ্রিত উত্তর শুনে সারা ঘর কাপিয়ে অট্টহাসি দিয়ে বললেন। প্রকল্পের যে ব্যয় দেখিয়েছেন। সেটা সমাপ্ত করে আপনি বা কি নিবেন। আর আমরাই বা কি নেব। যান প্রস্তাবিত প্রকল্পের ব্যয় তিন গুন করে নিয়ে আসেন। তখন হয়তো দু চারটে (?) পয়সা আপনি ও পেলেন। আমরা ও কিছু পাইতে পারি। ঐ প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করে আমার বন্ধুর আর কোন কাজ করবার প্রয়োজন পড়েনি। আজ পর্যন্ত না। বর্তমানে দুজনই আরাম আয়েশে অবসর দিন যাপন করছেন। শুনেছি কর্মকর্তা নাকি আবার হজ্জ ও পালন করে এসেছেন। তবে যে প্রকল্পটির ব্যয় বেড়েছিলো। তা নাকি এখন সম্পুর্ণ পরিত্যক্ত। নকশাতে নাকি ভুল ছিলো। অভাগা জনগেনের কোন কাজে আসেনি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn