মিজানুর রহমান শাহীন (ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)– গাইবান্ধা জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের স্বল্পশিক্ষিত অত্যন্ত সৎ ড্রাইভার ছিলেন মফিজ। তার শেষ জীবনের সঞ্চয় এবং মা বাবার দেয়া সামান্য জমি বিক্রয় করে ঢাকা রুটের পুরাতন বাস ক্রয় করে ঢাকা -গাইবান্ধা রুটে বাসটি চালু করলেন। গরীব-দরদী মফিজ সাহেব দিনমজুর লোকদের স্বল্প ভাড়ায় ঢাকা নিয়ে যেতেন। এক সময় বয়সের ভারে মফিজ সাহেব অন্য ড্রাইভার দিয়ে বাস চালানো শুরু করলেন। কিন্তু দিন মজুর শ্রেণীর লোকেরা ভাড়া সাশ্রয় এর জন্য তাঁর বাড়িতে ধরনা দেওয়া শুরু করলো। তাদের উপকারের জন্য সাদা কাগজে মফিজ লিখে সুপারভাইজার কে দিতে বলতেন এবং বাসের ছাদে নামমাত্র ভাড়ায় ঢাকা যাতায়াতের সুবিধা করে দেয়ার ব্যবস্হা করতেন। বাসের সুপারভাইজার মফিজ স্বাক্ষর যুক্ত কাগজ সংগ্রহ করে কম ভাড়া আদায় করতেন। তাই বাসের ছাদে উচ্চস্বরে সুপারভাইজার বলতেন, কয়জন মফিজ আছো ছাদে? অথ্যাৎ কয়টা মফিজের স্লিপ আছে?
আর এভাবে গরিবের উপকারী বন্ধু মফিজ শব্দটি চালু হয়। আজ আমরা ঠাট্টাকরে মফিজ শব্দটি উচ্চারণ করি। কিন্তু বুকে হাত দিয়ে বলেন!”মফিজ “হওয়ার যোগ্যতা আপনার আমার কি আছে? এখন আসুন মূল কথায়ঃ ব্যাকডেটেড পিছিয়ে থাকা জনগণ ভাইভা বোডে নব্বই ডিগ্রি এ্যাংগেলে ভ্র-কুঁচকে বলা হয়”ও…! তোমার বাড়ি উত্তরবঙ্গে। তারপর যা হবার তাই হয়।একটা কমন চিত্র। ব্যাপারটি কি সত্যি এ রকম?আসলেই কি সত্যি ব্যাকডেটেড। যাদের মানসিকতা এমন তারা কি আপডেটেড…? আজকের প্রভাবশালী জনপ্রিয় লেখক আনিসুল হক কোথাকার? সৈয়দ শামসুল হক কোথাকার? কবি শেখ ফজলুল করিম কোথাকার ছিলেন? ফকির মজনু শাহ, আব্বাস উদ্দীন কোথাকার ছিলেন? তেভাগা আন্দোলনের সফল নায়ক হাজী দানেশের বাড়ি কোন বঙ্গে ছিল? প্রফুল্ল চক্রবতী আর ক্ষুদিরাম বসু জানেন কোথাকার ছিল? যে মেয়ে ম্যাডামটা আজকে ভাইভাতে বসে উত্তরবঙ্গকে ব্যাকডেটেড বলে, সে হয়তো ভূলে গেছে মেয়ে মানুষদের পড়াশোনার ইতিহাস?
উত্তরবঙ্গের বেগম রোকেয়া না থাকলে আজকে কি হতো? তানিয়া আমিররা আইনজীবি হতে পারতো না। বিমানের পাইলট হতে পারতো না কানিজ ফাতেমারা। ওয়াসফিয়ার হিমালয় জয় করা লাগতো না। চুলায় আগুন দিতে দিতে জীবন শেষ করতে হতো। মৌয সেনদের রাজধানী কোথায় ছিল? ঢাকা তো দু চারশো বছর আগে রাজধানী হল। ঢাকা অনেক জুনিয়র, সিনিয়র রাজধানী হল মহাস্থানগড়! “নয় বছর দেশ চালানো এরশাদ সাহেব কোথাকার?শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কোন বঙ্গের। বগুড়ার ম্যাডাম খালেদা জিয়ার জন্ম দিনাজপুর। দেশের সংকট সময়ে সাহসী সেনাবাহিনী প্রধানরা কোন বঙ্গের ছিল?বিখ্যাত সাংবাদিক থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী হয়ে যাওয়া মশিউর রহমান যাকে আমরা জাদু মিয়া নামে চিনি তার বাড়িটা ও উত্তরবঙ্গে রংপুরে।
কিংকতব্যবিমৃঢ…! বাংলাদেশের বিপদ কালীন সময়ে হাল ধরা রাষ্ট্রপতিরা আর সেনা প্রধানরা কোন বঙ্গের। একবার বাংলা একাডেমিতে আন্ধলিক বিতর্ক হচ্ছে। এই বিতর্ক নিজের অন্ধলের ভাষায় করতে হয়। একটু মজাও করতে হয়। রংপুরের জন্য বিতর্কের যে অংশটুকু চ্যানেল আই এ দেখানো হলো সেটি ছিল সংক্ষেপে এরকম “হামার দ্যাশের জনক বঙ্গবন্ধু ছাওয়া শেখ হাসিনা। বিয়ার জন্য পাএ খুঁজিবার নাগচে। কোনোটে ভাল পাএ পায় নাই। শ্যাষে সবারচাইতে ভালো পাএ কোনটে পাইচে কনতো বাহে। হামার অমপুরে!!
বাদ দেন সারাদেশে শত সহস্র ছেলে থাকতে বঙ্গবন্ধু ওনার মেয়েকে উত্তরবঙ্গের ছেলের সাথে বিয়ে দিল কেন? বঙ্গবন্ধু জানতেন ওয়াজেদ জিনিয়াস, ল্হ ইজ রিয়েলি স্মাট। দেশ চালায় কোন বঙ্গের মানুষ? কোন বঙ্গের পুএবধূ? মজলুম জননেতা হামিদ খান ভাসানী, জাতীয় চার নেতার এক নেতা ক্যাপ্টেন মনসুর, জেনারেল জে.এন চৌধুরী (সাবেক ভারতীয় সেনাপ্রধান), সাবেক বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অবঃ) এ,কে খন্দকার, স্যামসন এইচ চৌধুরী। বাংলাদেশের সববৃহৎ ওষুধ প্রস্তুতকারি প্রতিষ্টান স্কয়ার ফামাসিউটিক্যালস লিঃ প্রতিষ্টাতা কোন বঙ্গের? সঙ্গীত শিল্পী তপন মাহমুদ, বাপ্পি লাহিড়ী, বেবী নাজনিন, শিল্পী আন্জুমনোয়ারা বেগম, জৈবন্নেসা জামান, শাকিলা জাফর, খুরশিদ আলম প্রমুখ আরো অনেকে নামকরা উত্তরবঙ্গের। ডলি সায়ন্ত্বনী,বাদশা বুলবুল খ্যাতিমান উপস্হাপক ফজলে লোহানী, গদ্যরীতির সাথক রুপকার সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরী, কবি বন্দে আলী মিয়া, জনপ্রিয় চিত্র নায়িকা সুচরিতা সেন, টিভি ব্যক্তিত্ব চন্ধল চৌধুরী, জাহিদ হাসান, তৌকির আহমেদ, নায়ক আলিরাজ, বৃন্দাবন দাস সহ অনেকে।
স্বপ্নাতুর কবি ইসমাইল হোসেন সিরাজী, ডক্টর আব্দুল্লাহ আল মুতী শরফউদ্দিন, মাওলানা খন্দকার আব্দুর রশিদ তকবাগীশ, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, যাদব চন্দ্র চক্রবতী, রজনী কান্ত সেন, ফতেহ লোহানী, কন্ঠ শিল্পী কনকচাপা, মুসা ইব্রাহীম একজন বাংলাদেশী পবতরোহী এবং সাংবাদিক, যিনি প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রণালয় মুহাম্মদ নাসিম, জুনায়েদ আহমেদ পলক, আইসিটি মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ব যুবনেতা এরা সকলেই উত্তর বঙ্গের সন্তান। ভূলে যাবেন না সজিব ওয়াজেদ জয় একজন রংপুরের সন্তান।
হাসের মত প্যাকপ্যাক করে ভাইভাবোডে উত্তরবঙ্গের মফিজ বলে তাড়িয়ে দিলে প্রেসিডেন্ট জিয়া, জেনারেল এরশাদ, আনিসুল হকদের পেতই না বাংলাদেশ। ভারতসহ বিশ্বে ১৫০টির বেশী দেশে পণ্য রপ্তানি করে সারা বিশ্বে সুনাম আনছে প্রাণ আর,এফ,এল গ্রুপ, দুঃখিত ভাই এটাও উত্তর বঙ্গের। সারাবিশ্বে ফ্যাশান দুনিয়ার রাণী বলে সমাদৃত বিবি রাসেল, এই মানুষটার বাড়িও রংপুরে।
নাটোরের বনলতা সেন এর কথা কে না জানে? অসংখ্য রহিমুদ্দি, করিমুদ্দি ভরসা কিংবা আমজাদ খান চৌধুরী পুরা উত্তর বঙ্গ জুড়ে। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম এর বাড়ি সিরাজগঞ্জে। মেধার অভাব উত্তর বঙ্গে নেই, কিছু কিছু চেয়ারে বসা বিচারকের সুস্থ মানসিকতার অভাব আছে। কথিত মহান ব্যক্তিরা উত্তরবঙ্গে বলে যখন পাঠিয়ে দিলেন তারা হয়তো তখন ভাসানী, ক্যাপ্টেন মনসুর আনিসুল হককে কিংবা ভবিষ্যত কোন রাষ্ট্রপতি কে হারিয়ে ফেললেন। সাথে সাথে এক ধ্যাপ পিছিয়ে গেল বাংলাদেশ। আমি একটা কথা সবসময় বলি, মনে রাখবেন রাষ্ট্র শাসনের নবাবীত্ব উত্তরবঙ্গ থেকে এসেছে। তাই উত্তরবঙ্গের মানুষকে মফিজ বলার আগে এই কথাগুলো একবার ভেবে দেখব।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn