টের পাবেন, কত ধানে কত চাল: কাদের
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কিছু লোক আছে যারা আওয়ামী লীগ করে, আবার নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহও করে। আওয়ামী লীগ করে নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ যারা করে তাদের দলের প্রতি কোন আনুগত্য, ভালবাসা নেই। যে নেতারা এই বিদ্রোহীদের মাঠে নামান, দলের গলা কাটেন, ছুরিকাঘাত করেন, সেই নেতারা বিদ্রোহীদের চেয়েও বেশি দলের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। বিদ্রোহে যে নেতারা উসকানি দেয় তারা বিদ্রোহীদের চেয়েও খারাপ।’ বিদ্রোহী এবং বিদ্রোহের উসকানি দাতাদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে রিপোর্ট আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সময়মতো সবাই টের পাবেন, কত ধানে কত চাল।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত নগরের পাঁচলাইশ থানাধীন একটি কমিউনিটি সেন্টারে উত্তর জেলা তৃণমূল আওয়ামী লীগের এই প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাংসদ ফজলে করিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন আওয়ামী সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, প্রচারও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম। অনুষ্ঠানে উত্তর জেলার সাতটি উপজেলার ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ের নেতারাও বক্তৃতা করেন।
ছাত্রলীগের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ছোটখাটো ভুলত্রুটি ঘরোয়াভাবে সমাধান করা হবে। কথায় কথায় মুখোমুখি, কথায় কথায় মারামারি, কথায় কথায় খুনোখুনি বন্ধ করুন। আমি ছাত্রলীগকে বলছি, দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় এমন কাজ হলে আমরা সাংগঠনিকভাবে এবং প্রশাসনিকভাবে কাউকে রেহাই দেবো না। নেত্রী পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, ছাত্রলীগ খারাপ খবরের শিরোনাম হবে না। সুনামের ধারায় ফিরে আসো। তা না হলে আরও কঠিন, আরও কঠোর ব্যবস্থা আমরা নেবো। গুটি কয়েকের অপকর্মের জন্য আমাদের বিশাল কীর্তিকে, শেখ হাসিনার কীর্তিকে জিম্মি করতে পারি না। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকব। নেতাদের কাছে অনুরোধ, ছাত্রলীগকে স্বার্থ রক্ষার পাহারাদার হিসেবে ব্যবহার করবেন না। তাতে আপনাদের ক্ষতি হবে, ছাত্রলীগেরও ক্ষতি হবে। ঘরের মধ্যে ঘর করবেন না।’
তিনি আরো বলেন, আমাদের মধ্যে যত ভুল বোঝাবুঝি থাক, ঘরের কথা ঘরেই রাখবেন। ইউনিয়নের আছে উপজেলা, উপজেলার আছে জেলা, জেলার আছে কেন্দ্র। সেক্রেটারির উপর সভাপতি আছে। ঘরের বিচার ঘরে রাখুন। চা দোকানে বসে পার্টির সমালোচনা, নেতার সমালোচনা করলে ইজ্জত বাড়বে না, দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে। অপকর্ম আর খারাপ আচরণের মাধ্যমে যারা দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছেন তাদের আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হবে না বলেও জানান ওবায়দুল কাদের।
প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে কাদের বিএনপির উদ্দেশ্যে বলেন, ‘বিএনপিকে নিয়ে বিচলিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। বিএনপি সব আন্দোলনে ব্যর্থ, নির্বাচনে ব্যর্থ। কুমিল্লাতে জিতে তারা সারা দেশ জয় করে নিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। আমরা নারায়ণগঞ্জে জিতে এত উচ্ছ্বাস দেখাইনি। ইউনিয়ন পরিষদের ৯০ শতাংশ আমাদের। তৃণমূলে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হচ্ছে। এই বিজয়কে জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ের কাছে ঐক্যবদ্ধভাবে নিয়ে যেতে হবে। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ পারবে না।’
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাংসদ ফজলে করিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন আওয়ামী সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, প্রচারও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম। অনুষ্ঠানে উত্তর জেলার সাতটি উপজেলার ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ের নেতারা বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপির সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, ‘এখন বিএনপির আর ইস্যু নেই। তাদের নাকি নির্বাচনে ডাকতে হবে। আরে ডাকতে হবে কেন? আপনারা যখন ক্ষমতায়, তখন আমাদের নির্বাচনে ডেকেছিলেন? কে কাকে ডাকে? নির্বাচন আমার অধিকার। এটা কারোর দয়া নয়, করুণা নয়। সরকার কি করুণা বিতরণ করবে আপনাদের নির্বাচনে আনার জন্য? গরজ আপনাদের। ভুল গতবার করেছেন। ভুলের চোরাবালিতে আটকে আছেন। এই চোরাবালি থেকে বের না হলে আপনাদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব আগামী নির্বাচনে ঝুঁকির মুখে পড়বে।’
বিএনপির উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, এখন সমান অধিকার চান। কে দেবে? সরকার? নির্বাচন কমিশন? সমান অধিকার কুমিল্লায় পাননি? নারায়ণগঞ্জে পাননি? নারায়ণগঞ্জে হারলেন, কুমিল্লায় জিতলেন। এরা জিতেও বলে, আরও ভোট পেতাম, যদি নিরপেক্ষ হতো। কে এদের বোঝাবে? এরা বেপরোয়া হয়ে গেছে ক্ষমতা পাওয়ার জন্য। বেপরোয়া ড্রাইভার রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটায়। বিএনপি বেপরোয়া ড্রাইভারের মতো বেপরোয়া রাজনীতিক হয়ে রাজনৈতিক দুর্ঘটনার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কোন সময় কোনটা ঘটিয়ে ফেলে, বলা যায় না। মাঝে মাঝে যা হয়, এখানে ওখানে, সিলেটে, মিরসরাইয়ে, সীতাকুণ্ডে…যা যা হয়। ঢাকার আশকোনা, কল্যাণপুরে। পেছনে কারা? বিএনপি। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে বলেন, এদের লক্ষ্য বাংলাদেশকে ধ্বংস করে দেওয়া। এই জামায়াত এবং বিএনপি ক্ষমতার লোভে ধর্মকে বারবার ব্যবহার করছে, মানুষ হত্যা করেছে। এরা ধর্মের কথা বললেও ইহুদির হাত-পা ধরতে কুণ্ঠাবোধ হয় না। এদের নিজেদের অন্তরে কোনো ধর্ম নেই।
হানিফ বলেন, ‘কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি নিয়ে বাংলাদেশে দীর্ঘদিনের দাবি ছিল ইসলামি দলগুলোর। সেখানে ১৬ লাখ ছাত্র পড়াশোনা করে। এদের জীবন অন্ধকারের দিকে। এদের ভবিষ্যৎ বলে কিছু ছিল না। সেই কওমি মাদ্রাসা স্বীকৃতি আমাদের প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন। এতে বিএনপির খুশি হওয়ার কথা ছিল। কারণ, বিএনপি সব সময় বলে, তারা নাকি ইসলামের ধারকবাহক। এখন বিএনপির গায়ে জ্বালা ধরেছে। তারা খুশি হতে পারেনি। তারা ভেবেছে, এই কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতির কারণে বিএনপির প্রতি অনাস্থা আসবে।’ মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, কেন্দ্রীয় উপ দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন প্রমুখ।