বিজয় রায়-
ছাতক সিমেন্ট কারখানা অবৈধভাবে কারখানার কাঁচামাল চুনাপাথর আবারো খোলাবাজারে বিক্রির অভিযোগ তুলেছেন এখানের চুনাপাথর ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ। দেশের গর্বিত সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত সেনাকল্যাণ সংস্থার নাম ব্যবহার করে অবৈধ পন্থায় কারখানার চুনাপাথর বিক্রি করা হচ্ছে বলে তাদের অভিযোগ। সেনাকল্যাণ সংস্থা ছাড়া অন্য কোন ব্যবসায়ী বা প্রতিষ্ঠানের কাছে কারখানার চুনাপাথর বিক্রি না করার জন্য ব্যবসায়ীদের সাথে কারখানা কর্তৃপক্ষের যে শর্ত ছিল, তা ভঙ্গ করে কারখানার চুনাপাথর খোলাবাজারে আবারো বিক্রি করার অভিযোগ তুলেন তারা। অবৈধভাবে চুনাপাথর বিক্রি করার অভিযোগে সিমেন্ট কারখানা ঘাট থেকে ২০ এপ্রিল চুনাপাথর লোড করা একটি বাল্কহেড আটক করেন ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ।
গত কয়েক মাস ধরে কারখানার কাঁচামাল চুনাপাথর বিভিন্ন অজুহাতে খোলাবাজারে বিক্রি করা নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন এখানের ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের সংগঠন ছাতক লাইমষ্টোন ইর্ম্পোটার্স এন্ড সাপ্ল-ায়ার্স গ্র“পের   পক্ষ থেকে প্রতিবাদ হিসেবে নদীপথে মাইকিং করে খোলাবাজারে পাথর বিক্রি বন্ধ ও সিমেন্ট কারখানা ঘাট থেকে বার্জ, কার্গো ও বাল্কহেডে কারখানার বিক্রিত চুনাপাথর লোড নিতে নিষেধ করা হয়। এ জটিলতা নিরসনে ১৭ মার্চ এমডি’র কার্যালয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সাথে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের এক সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে কারখানার এমডি কাজী রুহুল আমিন, ভারপ্রাপ্ত জিএএম প্রকৌশলী আবু সাইদ, উপ-প্রধান প্রকৌশলী মাহবুব এলা, প্রধান প্রকৌশলী(যান্ত্রীক) আখতারুজ্জামান, ডেপুটি চীপ একাউন্টেনডেন্ট গাজী সিরাজুল ইসলাম, প্রশাসনিক বিভাগীয় প্রধান অমল পালসহ কর্মকর্তাগন ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, সেনাকল্যান সংস্থা ছাড়া অন্য কোন ব্যবসায়ী বা প্রতিষ্ঠানের কাছে কারখানার চুনাপাথর বিক্রি করবেন না বলে ব্যবসায়ীদের আশ্বস্থ করেছিলেন। কিন্তু এক মাস যেতে না যেতেই একইভাবে সেনাকল্যাণ সংস্থার নাম ব্যবহার করে আবারো কারখানার চুনাপাথর অবৈধভাবে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ তুলেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কারখানার কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী চুনাপাথর ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ছাতক সিমেন্ট কারখানার প্রধান কাঁচামাল চুনাপাথর সেনাকল্যাণ সংস্থার নাম ব্যবহার করে খোলাবাজারে বিক্রি করে আসছেন কতিপয় অর্থলোভী কর্মকর্তা-কর্মচারী। এতে চুনাপাথর ব্যবসায়ী ও চুন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এখানের প্রাচীনতম চুনাপাথর ব্যবসায়ও দেখা দিয়েছে চরম মন্দাভাব। ভারতের মেঘালয় রাজ্যে কারখানার নিজস্ব খনি প্রকল্প নন-গোট্টাই থেকে রজ্জুপথে সংগৃহীত চুনাপাথর কারখানায় কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে প্রতিষ্ঠার পর থেকে। বিগত দিনে রজ্জুপথে সংগ্রহ করা প্রতিমাসে ১৮হাজার মেট্রিক টন চুনাপাথর ছাড়াও কারখানার বাড়তি উৎপাদনের জন্য এখানের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও চুনাপাথর ক্রয় করতো কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে কারখানায় ক্লিংকার ও  সিমেন্ট উৎপাদন সর্বনিু হওয়ার সুবাদে কারখানার সুযোগ সন্ধানী এসব অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ব্যবসার ও লুটপাটের উদ্দেশ্যে অব্যবহৃত চুনাপাথর সেনাকল্যাণ সংস্থার নাম ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন। কারখানার নামে আমদানীকৃত এসব চুনাপাথর খোলাবাজারে বিক্রি করার কোন বৈধতা না থাকলেও তারা কৌশলে বিক্রি করে যাচ্ছেন। সেনাকল্যাণ সংস্থার নাম কাগজে-কলমে ব্যবহার করে কারখানা কর্তৃপক্ষ কার্গো-বাল্কহেড যোগে নদীপথে ঢাকার কাঁচপুর, নারায়নগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার চুন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে কৌশলে বিক্রি করছেন বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। ছাতক লাইমষ্টোন ইর্ম্পোটার্স এন্ড সাপ¬ায়ার্স গ্র“পের প্রেসিডেন্ট আহমদ শাখাওয়াত সেলিম চৌধুরী জাজান, কারখানা কর্তৃপক্ষ সমোঝতা শর্ত ভঙ্গ করে আবারো সেনাকল্যাণ সংস্থার নামে খোলাবাজারে চুনাপাথর বিক্রি করছে।  বেআইনীভাবে কারখানার চুনাপাথর খোলাবাজারে বিক্রি করে কারখানা কর্তৃপক্ষ এখানের ব্যবসায়ীদের অপূরনীয় ক্ষতি করে যাচ্ছেন। চুনাপাথর লোডসহ একটি বাল্কহেড আটকের কথা স্বীকার করে তিনি জানান, সেনাকল্যানের নাম ব্যবহার করা হলেও মুলত অপু নামের এক ব্যবসায়ীর এ পাথর নারয়নগঞ্জে যাচ্ছিল। যা বাল্কহেডের চালান পত্রে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে। আটকের এক সপ্তাহ গড়িয়ে গেলেও সেনাকল্যাণ সংস্থার কোনা কর্তৃপক্ষ এখনও তাদের সাথে যোগাযোগ করেননি। এতে আরো স্পষ্ট হয় এ মাল সেনাকল্যাণ সংস্থার নয়। অবৈধ পথ পরিহার করে এখানের ব্যবসায়ীদের স্বার্থে খোলাবাজারে সিমেন্ট বিক্রি বন্ধ করার জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান তিনি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn