ছাতক উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি লায়েককে স্থানীয় সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও মাদক-চোরাচালান সিন্ডিকেট হত্যা করেছে বলে দাবি করেছেন তার ছোট ভাই ও মামলার বাদি মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম। তিনি হত্যাকারীদের মদদদাতা হিসেবে স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিককে দায়ি করে বলেন, মানিক এখন তদন্তের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছেন। ফলে ন্যায় বিচার নিয়ে তারা শঙ্কিত। তার কারণে পুলিশ জজ মিয়া নাটক সাজানোর চেষ্টা করছে। সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, সংসদ সদস্য মানিকের অন্যায় ও অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন আজিজুুল। বুধবার (২৬ এপ্রিল) সিলেট নগরীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি ও অভিযোগ করেন।

নিহত লায়েকের অবুঝ দুই সন্তান ও স্ত্রীসহ স্বজনদের উপস্থিতিতে লিখিত বক্তব্যে আজিজুল ইসলাম দাবি করেন, ছাতক শহরের মন্ডলীভোগের বাসিন্দা যুবলীগ নেতা লায়েক মিয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার ছিলেন। এ কারণে মাদক সিন্ডিকেট ও চোরাচালানের হোতা স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর তাপস চৌধুরী, তার ঘনিষ্টজন আব্দুল কুদ্দুছ শিপলু, এমপি মানিকের ভাতিজা ইশতিয়াক রহমান তানভির, সাদমান মাহমুদ সানি ও আলা উদ্দিনদের সাথে বিরোধ দেখা দেয়। স্থানীয় রাজনৈতিক বিরোধ এবং মাদক ও চোরাচালানসহ নানা অপরাধমূলক কাজে বাধা দেওয়ার কারণে গত ২৮ মার্চ থানার পার্শবর্তী গনেশপুর গোদারাঘাটে সন্ত্রাসীরা তাকে হত্যা করে। হত্যাকান্ডের মাস্টার মাইন্ড ছিলেন কাউন্সিলর তাপস চৌধুরী, তানভির রহমান, সাদমান মাহমুদ সানি ও আলা উদ্দিন। তাদের ইন্ধন দিয়েছেন এমপি মানিক। ঘটনার পর সন্ত্রাসীদের অনেকে এমপির বাসায় আশ্রয় নেয় এবং অনেকে বিভিন্ন স্থান দিয়ে পালিয়ে যান। হত্যাকান্ডের পর ১৮ জনের বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগ দিলে পুলিশ মামলা রুজু করতে টালাবাহানা শুরু করে। এমপি মানিকের মদদে পুলিশ মামলা নিতে কালক্ষেপন এবং আসামিদের পালিয়ে যেতে সহায়তা করে।

বক্তব্যে বলা হয়, মামলা রুজুতে কালক্ষেপন করলে এলাকার লোকজন ৩১ মার্চ মানববন্ধনের ঘোষনা দেন। ছাতক থানা পুলিশ পরদিন মামলা (নং-২৫(৩)২৩) রেকর্ড করে। এতে প্রধান আসামি করা হয় মাদক ও চোরাকারবারি আব্দুল কুদ্দুস শিপলুকে। অন্য আসামিদের মধ্যে ছাতক পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তাপস চৌধুরী, এমপি মানিকের ভাতিজা মন্ডলীভোগের ইশতিয়াক রহমান তানভির, বাগবাড়ীর সাদমান মাহমুদ সানি, কালারুকা ইউনিয়নের মুক্তিরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা, জাফলং ধ্বংসের হোতা আলা উদ্দিন ছাড়াও রয়েছেন মন্ডলীভোগের আবুল খয়ের টুটুল, তাজ উদ্দিন, মিজান মিয়া, সাব্বির, বাশখালা গ্রামের আব্দুল মতিন, মন্ডলীভোগ এলাকার বাবলু, মঞ্জু, শামসুল ইসলাম, সায়মন, মিলন মিয়া, মহসিন, সৌরভ ও এরশাদ আলী।

আজিজুল জানান, ২০২১ সালের ৪ জুলাই ছাতকে নৌ-পুলিশের উপর হামলা করে এসব আসামিরা। এতে ওসিসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় র‌্যাব-৯ ঢাকা থেকে তাপস, সানি ও আলা উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে। ২০১৯ সালের ১৫ মে একই সন্ত্রাসী গ্রুপ পুলিশের উপর গুলিবর্ষন করলে তৎকালীন ওসিসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। সর্বশেষ গত ৫ ফেব্রুয়ারি তার ভাই এখলাছ মিয়াকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করা হয়। সেই মামলায় উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন নেওয়ার কিছুদিনের মধ্যে গত ২৮ মার্চ শিপলু, তাপস গংরা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী লায়েককে খুন করে।

আজিজুল অভিযোগ করেন, হত্যাকান্ডের আগে সাদমান মাহমুদ সানির বাড়িসহ একাধিক স্থানে বৈঠক করে খুনিরা। এমনকি সর্বশেষ ঘটনার আগের দিন সংসদ সদস্য মানিকের বাসার পাশে ‘মুজিবুর রহমান একাডেমিতে’ বৈঠক করা হয়। বৈঠকে পরিকল্পনা করে পরদিন গোদারাঘাটে লায়েককে খুন করা হয়। ঘটনার পর কয়েকজন আসামি ভারতে পালিয়ে যায়। ওই সময় সংসদ সদস্য মানিকও ভারতে যান।

সংবাদ সম্মেলনে আজিজুল ইসলাম ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে জজ মিয়া নাটক সাজানোর চেষ্টা করা হচ্ছে উল্লেখ করে জানান, আসামি ও তাদের পক্ষের লোকজন নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এক ভাইকে তারা মেরেছে প্রয়োজনে আরেক ভাইকে তারা মেরে ফেলবে -এমন কথাও বলে বেড়াচ্ছে। হত্যার সাথে জড়িত ও এর পেছনে কুশিলবদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি করেন তিনি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn