তাহিরপুরে আলোচিত সাকিব হত্যাকান্ডের ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।মঙ্গলবার মধ্যরাতে নিহতের পিতা মজিবুর রহমান ওরপে ভাটি মজিবুর তাহিরপুর থানায় এ হত্যা মামলাটি দায়ের করেন।মামলায় আসামিরা হলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি, ঘাগটিয়া গ্রামের সাদেক আলীর ছেলে মোশারফ হোসেন তালুকদার (৫৮), মহিনুর তালুকদার (৫৩), মোশাহিদ তালুকদার (৫৫), একই গ্রামের মহিনুর তালুকদারের ছেলে রফি তালুকদার (২৯), মোশারফ তালুকদারের ছেলে  মোনায়েম হোসেন তালুকদার রাজু (৩৪), মৃত মকবুল হোসেনের ছেলে নুরুজ আলী (৫০), নরুজ আলীর ছেলে কাহার (২৬), বাহার (২২), ছামাদ তালুকদারের ছেলে পটল তালুকদার (৩২), রাজা মিয়ার ছেলে সামছু মিয়া (৫৮)। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরো ৩/৪ জনকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে।

বুধবার দুপুরে তাহিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ ইফতার হোসেন হত্যা মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এ মামলায় এখনও কোনো আসামি গ্রেফতার হয়নি। তবে পুলিশ সর্বোচ্ছ চেষ্টা করছে আসামিদের গ্রেফতার করতে। প্রসঙ্গত, গত সোমবার মধ্যরাতে সাকিব মিয়া (২৫) নামে এক যুবককে রাস্তা থেকে তুলে বাড়িতে নিয়ে হাত পা ভেঙ্গে পিটিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষের লোকজন। নিহত সাকিব উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের ঘাগটিয়া টেকেরগাঁও গ্রামের মজিবুর রহমান ওরপে ভাটি মজিবুরের ছেলে।

জানা যায়, উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের ঘাগটিয়া গ্রামের মোশারফ হোসেন তালুকদারের সঙ্গে একই গ্রামের মজিবুর রহমানের দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দন্ধ চলে আসছিল। ইতিপূর্বে দু’পক্ষের মধ্যে আরও কয়েকবার রক্তক্ষয়ী সংর্ঘষের ঘটনাও ঘটেছে। দু’পক্ষের মধ্যে থানায় একাধিক মামলাও রয়েছে। গত সোমবার সন্ধার দিকে নিহত সাকিব বাড়ি থেকে চক বাজারে যাওয়ার কথা বলে বের হয়ে আসে। রাত ১ টার দিকে সাকিবের পিতা মজিবুর রহমানের কাছে ফোন আসে সাকিব কে মোশারফ তালুকদারের বাড়িতে মারপিট করছে। খবর পেয়ে মজিবুর রহমান গ্রামের তৃতীয় পক্ষের দুইজনকে সঙ্গে নিয়ে মোশারফ তালুকদারের বাড়িতে যেয়ে তার ছেলেকে ফেরত চান। মোশারফ তালুকদারের লোকজন সাকিবকে তার পিতার কাছে না দিয়ে উল্টো মজিবুর রহমানকে মারপিট করে বাড়ি থেকে বের করে দেন। পরে সংবাদ পেয়ে রাত দুইটার দিকে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে মোশারফ তালুকদারের বাড়ি থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় সাকিবকে উদ্ধার করে। গুরুতর আহত অবস্থায় মোশারফের লোকজন তাকে প্রথমে রাতে তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করে। পরে এখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তার অবস্থা বেগতিক দেখে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রেরন করে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর গত মঙ্গলবার সকালে চিকিৎসকধীন অবস্থায় সাকিব মৃত্যুর কূলে ঢলে পড়ে।

নিহতের মা তেরাবজুন বেগম বলেন, সোমবার সন্ধার দিকে চক বাজারে যাওয়ার কথা বলে সাকিব বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে তার ছেলেকে মোশারফের লোকজন রাস্তা থেকে তুলে বাড়িতে নিয়ে মারপিট করে হাত পা ভেঙ্গে মেরে ফেলেছে। মোশারফ গংরা গত বছর আমার ছেলেকে রড দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে এবং আমার বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল। তিনি বলেন, আমার ছেলের খুনিদের বিচার চাই। নিহতের বাবা মজিবুর রহমান বলেন, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে বাড়িতে নিয়ে পিটিয়ে দু-হাত দু-পা ভেঙে মেরে ফেলেছে আমার ছেলেকে। খবর পেয়ে রাত ১টার দিকে মোশারফ তালুকদারের বাড়িতে গিয়ে তাদের হাত পা ধরে আকুতি মিনতি করেছি ছেলেকে উদ্ধারের জন্য। কিন্তু তারা আমার ছেলেকে ফেরত না দিয়ে উল্টো আমাকে মারপিট করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। পরে পুলিশ এসে আমার ছেলেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাটায়। সকালে শুনি আমার ছেলে মারা গেছে। মঙ্গলবার মধ্য রাতে ১০জনকে আসামি করে তাহিরপুর থানায় একটা হত্যা মামলা করেছি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn