সাইদুর রহমান- নির্বাচন কমিশন দেশের ৩০০টি সংসদীয় আসন এলাকার মধ্যে এবার অর্ধশতাধিক আসনে পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। বিদ্যমান আইনানুযায়ী সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজ শুরু হয়েছে। আগামীকাল শনিবার বেলা ১১টায় নির্বাচন ভবনে সীমানা পুনর্নির্ধারণ সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞদের প্রতিবেদন পেশ করা হচ্ছে। সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিটি এই রিপোর্ট গ্রহণ করে খসড়া প্রকাশের কাজ শুরু করবে। এই প্রাথমিক তালিকা প্রকাশের ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের একটি রায়ের বিষয়ও বিবেচনায় রয়েছে। নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, কুমিল্লা-১০ আসন নিয়ে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে কমিশন আপিল করেছে। আপিলের আদেশ প্রকাশের তিনদিনের মধ্যে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের খসড়া প্রকাশ করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। গত সোমবার সাতক্ষীরায় সার্কিট হাউজে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা সাংবাদিকদের বলেন, ছিটমহল, নদী ভাঙন ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে ৬০ থেকে ৭০টি আসনে সীমানা পুনর্নির্ধারণ হতে পারে। সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ সংক্রান্ত বিষয়ে কমিশন সচিবালয়ের সাবেক যুগ্ম সচিব লুত্ফর রহমান বিশ্বাসকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ইসি থেকে প্রস্তুত করা প্রাথমিক একটি খসড়া তালিকা তিনি খতিয়ে দেখছেন। এছাড়াও সীমানা পুনর্নির্ধারণের জন্য জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস) এর সংশ্লিষ্টদের বৈঠক হবে। এসময়ে পরামর্শক ও জিআইএস এক্সপার্টরা শনিবার এ বিষয়ে রিপোর্ট পেশ করবেন। প্রাথমিক খসড়া তালিকার বাইরে ইসিতে দেয়া জিআইএস এক্সপার্টদের প্রতিবেদন আমলে নিলে সীমানায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে। কেননা জনসংখ্যা এবং ভোটার সংখ্যাকে বিবেচনায় নিয়ে সীমানা পুনর্নির্ধারণের ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন আনতে হবে। তবে কমিশন চাচ্ছে সীমিত পরিসরে সীমানায় পরিবর্তন আনতে।
ইসির সংশ্লিষ্টদের মতে, আদালতের আদেশ অনুসারে জাতীয় সংসদের কুমিল্লা-১০ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ না করায়  গত ১০ ডিসেম্বর রবিবার বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ নির্বাচন কমিশনের সচিবের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেন। নির্বাচন কমিশন ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেছে। আপিলের রায় নির্বাচন কমিশনের পক্ষে না এলে শুধু কুমিল্লা জেলায় ৪টি আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করতে হবে। ২০০১ সালের নির্বাচনে নাঙ্গলকোট ও কুমিল্লা সদর (দক্ষিণ) উপজেলা নিয়ে পৃথক দুটি নির্বাচনী আসন (যথাক্রমে কুমিল্লা-১১ ও কুমিল্লা-৯) ছিল। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই দুটি আসন পুনর্বিন্যাস করে বিগত ইসি। এতে নাঙ্গলকোট উপজেলার সঙ্গে সীমানা বাড়িয়ে কুমিল্লা সদর (দক্ষিণ) উপজেলার আটটি ইউনিয়নকে যুক্ত করে কুমিল্লা-১০ আসন করে। এভাবে আসন পুনর্বিন্যাস করার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করা হয়। আবেদনে শুধু নাঙ্গলকোট উপজেলা নিয়ে এ আসন করার দাবি করা হয়। এ রুলের ওপর শুনানি শেষে গত বছরের ২০ মার্চ হাইকোর্ট এক রায়ে ওই আসন এলাকা পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে আইনানুযায়ী পদক্ষেপ নিতে ইসিকে নির্দেশ  দেন।
যেসব আসনের সীমানা পরিবর্তন হতে পারে
ইসি সচিবালয় সূত্র জানায়, এবার সীমানা পুনর্নির্ধারণের জন্য  যে নীতি গ্রহণ করা হয়েছে তা হলো-২০১৩ সালের নির্ধারিত জেলাভিত্তিক মোট আসন অপরিবর্তিত রাখা, সংসদীয় আসন জেলাভিত্তিক বণ্টন ও এক জেলার আসনের এলাকা অন্য জেলায় সমপ্রসারণ না করা, যেখানে সম্ভব উপজেলা, পৌর ও সিটি অবিভাজিত রাখা এবং  ভৌগোলিক ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিবেচনায়  নেয়া। এছাড়া এবার বিলুপ্ত ছিটমহল এলকাগুলোকেও সংশ্লিষ্ট আসন এলকার সাথে যুক্ত করা হবে। এবার বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আসছে না। তবে নতুন যে কয়েকটি উপজেলা গঠন করা হয়েছে তাতেও সংশ্লিষ্ট সংসদীয় আসন এলাকাগুলোতে পরিবর্তন আসবে। এতে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে ৬০টির কাছাকাছি আসন। এর মধ্যে রয়েছে ঠাকুরগাঁও ২ ও ৩ আসন; নীলফামারি ৩ ও ৪, কুড়িগ্রাম ৩ ও ৪, সিরাজগঞ্জ-১ ও ২, পাবনা ১ ও ২; চুয়াডাঙ্গা ১ ও ২; ঝিনাইদহ ২ ও ৪; যশোর-৩ ও ৪; মাগুরা-১ ও ২; নড়াইল ১ ও ২; খুলনা ৩ ও ৫; সাতক্ষীরা ৩ ও ৪, জামালপুর ৪ ও ৫; ময়মনসিংহ ৩ ও ৪, মানিকগঞ্জ ২ ও ৩; ঢাকা ২ , ৩, ৪ , ১৪ ও ১৯; গাজীপুর ৩ ও ৫; নরসিংদী ১ ও ২; ফরিদপুর-২ ও ৪; গোপালগঞ্জ ১ ও ২; মাদারিপুর ২ ও ৩; সিলেট ২ ও ৩; মৌলভীবাজার ২ ও ৪; ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৫ ও ৬; কুমিল্লা ১০; নোয়াখালী ১,  ২, ৪ ও ৫;  লক্ষ্মীপুর ২ ও ৩ এবং  চট্টগ্রাম ৭, ৮, ১২, ১৩, ১৪ ও ১৫।   
 
এ দিকে, বর্তমান নির্বাচন কমিশন তাদের কর্মপরিকল্পনা বা রোডম্যাপে এবার ভোটার সংখ্যার ভিত্তিতে সংসদীয় আসনগুলোর সীমানা পুনর্নির্ধারণ এবং সে লক্ষ্যে নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়ার কথা বললেও তা হচ্ছে না। কমিশন নতুন আইন প্রণয়নের জন্য যে প্রস্তাব প্রস্তুত করছে তা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরবর্তী সময়ের জন্য। সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে রোডম্যাপের সর্ব শেষ সময়ও পার হয়ে গেছে গত ডিসেম্বরেই। এ অবস্থায় যত দ্রুত সম্ভব কাজটি সম্পন্ন করতে চায় নির্বাচন কমিশন।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn