শিষ্টাচার বহির্ভূত ও রাজনৈতিক বক্তব্য প্রদানের অভিযোগ এনে আইজিপি ও ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের অপসারণ দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব যাদের তারা এখন রাজনীতি ও দুর্নীতিতে ব্যস্ত। কদিন আগেও পুলিশের আইজি রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন আর ডিএমপি কমিশনার বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা শিষ্টাচার বহির্ভূত।

পুলিশের এই দুই শীর্ষ কর্মকর্তার বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে ফখরুল বলেন, তাদের অবিলম্বে অপসারণ করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। নগরের রেজিস্ট্রি মাঠে সিলেট জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) দুপুরে দলটির মহাসচিব এমন দাবি জানান। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার বলে দেশে মেগা উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু আদতে মেগা উন্নয়নের নামে মেগা দুর্নীতি হচ্ছে। ১০ হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু দুর্নীতি করে ৩০ হাজার কোটি টাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দুর্নীতির টাকা কানাডায় পাচার করা হচ্ছে।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদারের সভাপতিত্বে এতে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, এই সরকার দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে। বিচার বিভাগও আজ স্বাধীন নয়। বিচারকদের স্বাধীনতা নেই। ডিসি এসপি আর আইন মন্ত্রণালয় যেভাবে চায় সেভাবে বিচার হয়। তাদের নির্দেশে জামিন হয়। বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, দেশের বিচার বিভাগ পরাধীন। আইন মন্ত্রণালয় আর ডিসি-এসপির নির্দেশে চলে বিচার বিভাগ। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে।

ফখরুল ইসলাম তিনি বলেন, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, যেখানে আমাদের স্বাধীনতা থাকবে, নির্ভয়ে কথা বলতে পারবো। কিন্তু স্বাধীনতার পরই আওয়ামী লীগ জাতির সঙে প্রতারণা করেছে। আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের কারণে ১৯৭৪ সালে দেশে দুর্ভিক্ষ এসেছিলো। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছিলেন।  দেশের অর্থনীতিকে শক্ত ভিত্তি এনে দিয়েছিলেন। এই সরকার এসে আবার সবকিছু নষ্ট করে দিচ্ছে। দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা হবে বলেও মন্তব্য করেন ফখরুল।

তিনি আরও বলেন, বাহাত্তরের সংবিধানকে আওয়ামী লীগই ছিন্নভিন্ন করে, নিজেদের প্রয়োজনে। এর পর একদলীয় বাকশাল সৃষ্টি করে। আওয়ামী লীগ নিজেদের প্রয়োজনে ৭২’র সংবিধান সংযোজন-বিয়োজন করেছে। এর আগে বেলা সোয়া ১১টায় জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে বিএনপির সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা তাহসীনা রুশদীর লুনা।

এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. মো. এনামুল হক চৌধুরী,  খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন,  সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন আহমদ, সহ ক্ষুদ্র ও ঋণ বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বগুড়া পৌরসভার মেয়র ও নির্বাহী সদস্য মো. রেজাউল করিম বাদশা, নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, আবুল কাহের চৌধুরী শামিম,  হাদিয়া চৌধুরী মুন্নী।

সম্মেলনের পর কাউন্সিলে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ পদে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। এই তিন পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৯ জন প্রার্থী। মোট ১ হাজার ৮১৮ জন ভোটার ভোট প্রয়োগ করছেন। কাউন্সিলে সভাপতি পদে আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী ও আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, সাধারণ সম্পাদক পদে আ. ফ. ম কামাল, আলী আহমদ, অ্যাডভোকেট ইমরান আহমদ চৌধুরী ও মো. আব্দুল মান্নান এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট এম মুজিবুর রহমান মুজিব, লোকমান আহমদ ও মো. শামিম আহমদ প্রার্থী হয়েছেন।

এবারের কাউন্সিলে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সভাপতি পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছিলেন। তবে কেন্দ্রের একরকম চাপে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। এর আগে সর্বশেষ ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিলেট জেলা বিএনপির কাউন্সিল হয়। এতে কাউন্সিলরদের ভোটে আবুল কাহের চৌধুরী শামীম সভাপতি ও আলী আহমদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn