ছাতকে রেলওয়ে নিয়ন্ত্রণাধীন দেশের একমাত্র স্লিপার উৎপাদনকারী রাষ্ট্রিয় প্রতিষ্ঠান কংক্রিট স্লিপার কারখানা আবারো বন্ধ হয়ে পড়েছে। ৩ সাপ্তাহ ধরে বন্ধ  রয়েছে প্রতিষ্টানটি। কারখানাটি নিয়মিত চালু রাখতে এবং স্লিপার উৎপাদন বাড়াতে চীনের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। চীনা ওই কোম্পানির পক্ষ থেকে ৩ সদস্যের একটি  প্রতিনিধি দল গত মঙ্গলবার কারখানা এলাকা  পরিদর্শন করেছে। চীনের প্রতিনিধি দলের সমীক্ষা প্রতিবেদনের পর রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা শেষে কারখানার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নির্ধারণ করা হতে পারে বলে জানা গেছে। তবে স্লিপার কারখানাটি ব্যক্তি মালিকানায় ছেড়ে দেওয়া হবে, নাকি যৌথ মালিকানায় চলানো হবে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা। এই কারখানায় উৎপাদিত উন্নতমানের স্লিপার সময়মতো চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন না হওয়ায় রেললাইনের জন্য নিয়মিত সরবরাহ করা যাচ্ছে না।
ছাতক কংক্রিট স্লিপার কারখানাটি ১৯৮৮ সালের ২৭ অক্টোবর তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী আনোয়ার হুসেনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর কারখানায় স্লিপার উৎপাদন শুরু হয়। উৎপাদনের শুরু থেকেই স্লিপার তৈরির প্রধান কাঁচামাল হাইটেনশন স্টিল রড, ইনসাট স্টিলপাত ভারত থেকে আমদানি করা হয়। ছাতক সিমেন্ট কারখানার স্পেশাল ডায়মন্ড ব্র্যান্ড সিমেন্ট, ভোলাগঞ্জ পাথর ও বালু দিয়ে তৈরি করা হচ্ছিল উচ্চ মানসম্পন্ন কংক্রিট স্লিপার। তবে কারখানা চালুর ২৯ বছরের মধ্যে একাধিকবার কাঁচামালসহ নানা সংকট, মেশিনারিজ সমস্যাসহ বিভিন্ন কারণে কারখানাটি বন্ধ হয়েছে। ফলে কারখানায় কর্মরত শ্রমিক ও কর্মকর্তাদের ঘরে বসিয়েই বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হচ্ছে। সরকারিভাবে পরিচালিত এই স্লিপার কারখানাটি পরিচালনায়  কর্মরত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতিরও অভিযোগ রয়েছে।
একটি সূত্র জানায়, কারখানাটি আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারে বড় পরিসরে স্লিপার উৎপাদন বাড়িয়ে দেশের সিলেট-আখাউড়া, আখাউড়া-লাকসাম, দোহাজারী-কক্সবাজার, পদ্মা লিংকের জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী ও ঢাকা-চট্টগ্রাম ডাবল রেললাইনে এসব স্লিপার ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে এবং স্লিপার উৎপাদন বাড়লে পাল্টে যাবে কারখানার দৃশ্যপট- এমন মন্তব্যই করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। স্লিপার কারখানার দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান জাবির বলেন, সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষের  নির্দেশে চীনের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন লিমিটেড (সিসিইসিএল) একটি কোম্পানির  জিউআন, জিয়াংহাই, ইয়াং এবং ওই কোম্পানির বাংলাদেশের কনসালট্যান্ট মাহবুর হক বকশী কারখানা পরিদর্শন করেছেন। কারখানার প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজামান বলেন, কারখানাটি বিক্রি হবে না যৌথ মালিকানায় যাবে- এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা যাচ্ছে না। কারখানার সার্বিক অবস্থা দেখতেই চীনের একটি বেসরকারি কোম্পানির প্রতিনিধি দল এলাকা পরিদর্শন করেছে। কারখানার ওপর সমীক্ষা শেষে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn