নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ারের পোর্ট অথোরিটি বাস টার্মিনালে বোমা বিস্ফোরণ ঘটেছে ১১ ডিসেম্বর। এ ঘটনায় অভিযুক্ত বাংলাদেশি যুবক আকায়েদ উল্লাহকে পুলিশ আহত অবস্থায় আটক করেছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বা তাঁর প্রশাসন সম্ভবত এমন একটি ঘটনার জন্য অপেক্ষা করছিল। তারা সঙ্গে সঙ্গে ঘোষণা দিয়েছে, পারিবারিক অভিবাসন আইন বদলের। বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা এবং ট্রাম্প প্রশাসনের ঘোষণা, স্বাভাবিক কারণেই আমেরিকায় বসবাসকারী বাংলাদেশিদের মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ে। এমন একটি মুহূর্তে এল একটি সুসংবাদ। নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগে নতুন সদস্য হিসেবে চাকরি পেয়েছেন ১২০ জন, যাঁদের ২৫ শতাংশই বাংলাদেশি বা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। আরও সুখবর হলো বাংলাদেশিদের মধ্যে তিনজন নারী সদস্যও আছেন। চাকরির শর্তানুযায়ী এঁরা ভবিষ্যতে পদোন্নতি পেয়ে অফিসারও হতে পারবেন। বর্তমানে নিউইয়র্ক পুলিশে প্রায় ৯০০ বাংলাদেশি বা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কাজ করছেন।  এই পরিসংখ্যান পাওয়ার পর বলা যায়, ভবিষ্যতে আরও বাংলাদেশি আমেরিকাতে এমন সম্মানজনক দায়িত্বে কাজ করার সুযোগ পাবেন। তবে এ জন্য বাংলাদেশিদের আত্মমর্যাদাশীল হওয়ার অনুশীলন করতে হবে। বর্তমানে এ দেশে যে বাংলাদেশিরা বাস করছেন, তাঁদের অনেকেই মার্কিন নাগরিক। অন্যদের প্রত্যাশা, একসময় নাগরিকত্ব পাবেন। তা সত্ত্বে আমেরিকার সঙ্গে বেশির ভাগ বাংলাদেশির মানসিক দূরত্ব অস্বীকার করার নয়। আমেরিকাতে তাঁরা পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকেন। চাকরিবাকরি কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্য করেন। তারপরও কারও কারও কাছে আমেরিকা অন্যের বলে মনে হয়। অনেকটাই নিজভূমে পরবাসী থাকার মতো।
এ অবস্থাতে আকায়েদ উল্লাহর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তা এখানে বসবাসকারী পুরো বাংলাদেশি কমিউনিটির মানসিক অবস্থানকে আরও নাড়িয়ে দিয়েছে। ভাবার অবকাশ করে দিয়েছে। অভিবাসী আলেয়া বেগমের মন্তব্যে তা স্পষ্ট। তিনি বলেছেন, ছেলেটি নিজ মরতে চেয়েছিল, পারেনি। তবে মেরে গেছে সব বাংলাদেশি অভিবাসীকে। বাংলাদেশি-আমেরিকান পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) প্রেসিডেন্ট শামসুল হক সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, সন্ত্রাসী হিসেবে একজন বাংলাদেশির নাম আসার বিষয়টি তাঁদের মর্মাহত করেছে।  তবে বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশিদের আত্মসমালোচনা করার সুযোগ থাকলেও নিজেদের অপরাধী ভেবে হীনমন্যতায় ভোগার কোনো অবকাশ নেই। এ ক্ষেত্রে নতুন সদস্য হিসেবে পুলিশ বাহিনীতে চাকরি পাওয়া পাপিয়া শারমীনের বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, নিউইয়র্ক শহর তাঁকে আত্মমর্যাদা বোঝার সুযোগ দিয়েছে। নিউইয়র্ক শহরের পুলিশ সদস্য কবীর হুমায়ূন বলেছেন, একজন ভিনদেশি হিসেবে নয়, তিনি কাজ করে যাচ্ছেন একজন আমেরিকান হিসেবে।  হুমায়ূন কবির ও পাপিয়া শারমীনের বক্তব্য নিঃসন্দেহে বাংলাদেশিদের মানোজগতের সংকট বা দ্বন্দ্ব দূর করতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। বাস্তবতাও তা–ই। আমেরিকাকে ভিন দেশ নয়, নিজের দেশ ভাবতে হবে। কারণ অভিবাসী বাংলাদেশিরা ও তাঁদের আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে এই মাটিতেই।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn