আওয়ামী লীগের সাধারণ স্ম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে এই দলটি বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আগামিকাল দিনভর নানা বিষয়ে আলোচনা করবেন, প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও তাদের সৌজন্য সাক্ষাৎ হবে বলে কথা রয়েছে। বাংলাদেশে এটা নির্বাচনের বছর, ফলে তার আগে ভারতে আওয়ামী লীগের এই সফরকে অনেকেই বেশ গুরুত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু বিজেপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্কটা ঠিক কেমন? বাংলাদেশে গত প্রায় এক দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা দলটিকে বিজেপি কী চোখে দেখে, আর বিরোধী বিএনপি সম্পর্কেই বা তাদের মনোভাব কী? দিল্লিতে বিজেপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে সেটাই বোঝার চেষ্টা করেছিলাম। বছরদেড়েক আগে ঢাকায় আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে বিদেশি অতিথি হিসেবে সামিল হতে বিজেপির যে প্রতিনিধিদলটি গিয়েছিল, তার নেতৃত্বে ছিলেন দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও এমপি বিনয় সহস্রবুদ্ধে। ড: সহস্রবুদ্ধে বলেন, দুই দেশে দুটো দলের মধ্যে সম্পর্ক রক্ষাকে বিজেপি বরাবর খুব গুরুত্ব দেয়। আর সেই জন্যই আওয়ামী লীগ নেতাদের এই সফর বিজেপির সেই দৃষ্টিভঙ্গিরই প্রতিফলন। আওয়ামী লীগ বা তাদের নেত্রী শেখ হাসিনা ভারতে শুধু কংগ্রেস এবং নেহরু-গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ, এটাকেও নেহাতই একটা ভ্রান্ত ধারণা বলে মনে করেন তিনি।

‘শেখ হাসিনা ভারত ও ভারতীয়দের কাছের মানুষ’

বিজেপি ভাইস প্রেসিডেন্টের কথায়, একজন ব্যক্তি, দলনেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা যে ভারত ও ভারতীয়দের কাছের মানুষ তাতে কোনও ভুল নেই। জীবনের একটা খুব কঠিন সময়ে তিনিও ভারতের সাহায্য পেয়েছেন। কিন্তু সেটাকে যদি শুধু একটা দল বা পরিবারের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা হিসেবে দেখা হয়, তাহলে সেটা মারাত্মক ভুল হবে! বস্তুত নরেন্দ্র মোদির গত চার বছরের শাসনে বিজেপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের যে ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছে, তা এই দু্‌ই দলে অনেকেরই প্রত্যাশার বাইরে ছিল। বিজেপি পলিসি রিসার্চ সেলের অনির্বাণ গাঙ্গুলি মনে করেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে উন্নতির প্রভাবও পড়েছে দুই দেশের শাসক দলের সম্পর্কে। তার কথায়, বিজেপি সব সময় চায় বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হোক – গণতন্ত্রের ধারা বহমান থাকুক, আর তার মধ্যে দিয়ে সে দেশের পলিটি এগিয়ে যাক। আর পাশাপাশি সেখানে ‘ডিসরাপ্টিভ ফোর্স’ বা গণতন্ত্র ধ্বংসকারী শক্তিগুলো যেন পর্যুদস্ত হয়। তিনি বলেন, আর এই যে একটা ধারণা ছিল আওয়ামী লীগ ভারতে কংগ্রেসের ঘনিষ্ঠ, ব্যাপারটা আদৌ সেরকম কিছু নয়। ভারতে যখন যে দল ক্ষমতায় থাকুক, আমরা সব সময় চেয়েছি পররাষ্ট্রনীতিতে একটা ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে। বিজেপিও বাংলাদেশ ও আওয়ামী লীগকে সেই দৃষ্টিতেই দেখে এসেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিজেপির এই নিবিড় সম্পর্কের পটভূমিতেই এই প্রশ্নটাও ওঠা স্বাভাবিক যে বাংলাদেশে নির্বাচনের বছরে ভারতের শাসক দল কি সেখানে প্রভাব খাটাতে উদগ্রীব?

দিল্লিতে আওয়ামী লীগ নেতাদের সোমবার মধ্যাহ্নভোজে আপ্যায়িত করছেন বিজেপি নেতা ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর, তিনি অবশ্য এই জল্পনা সোজা উড়িয়ে দিচ্ছেন। তিনি বলেন, আমরা কোনও দিনই কোনও দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাইনি, হস্তক্ষেপও করিনি। আমরা এটায় বিশ্বাস করি না, আর নিশ্চিন্ত থাকুন কোনও দিন করবও না! তবে এটাও ঠিক যে বাংলাদেশে এখনও প্রধান বিরোধী দল হিসেবে স্বীকৃত বিএনপির সঙ্গে ভারতে বিজেপির কোনও সহজ, খোলামেলা সম্পর্ক গড়েই উঠতে পারেনি। অনির্বাণ গাঙ্গুলি তার কারণটা ব্যাখ্যা করে বলেন, আপনার হয়তো মনে আছে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি যখন বাংলাদেশ সফরে যান, খালেদা জিয়া এসে দেখাও করেননি। সেটা ছিল পরিষ্কার কূটনৈতিক অসৌজন্য। তবে বাংলাদেশে যে দলই ক্ষমতায় আসুক, আমরা সব সময়ই চাই সে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে একটা ফ্রেমওয়ার্ক রেখে এগিয়ে যাক। তিনি বলেন, আমার ব্যক্তিগত মত হল বিএনপি যতক্ষণ না জামাত সম্বন্ধে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করছে, ততক্ষণ সম্পর্কে একটা অস্পষ্টতা রয়েই যাবে। আমরা কেউই তো বিচ্ছিন্ন নই, প্রত্যেকেই আমরা একটা আঞ্চলিক যোগসূত্রে বাঁধা। সেই সামগ্রিকতায় জামাতের পরিকল্পনা কী, বিএনপি-ই বা তাদের সম্পর্কে কী ভাবছে … এগুলো যতক্ষণ না পরিষ্কার হবে ততক্ষণ দীর্ঘমেয়াদে কোনও বন্ধনও গড়ে ওঠা সম্ভব হবে না বলে আমার ধারণা। ফলে আওয়ামী লীগ নেতারা যেভাবে কাল দিনভর দিল্লিতে পার্লামেন্ট থেকে রাজঘাট, বিজেপি দফতর থেকে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় চষে বেড়াবেন – বিএনপির জন্য আপাতত তা ভাবাও সম্ভব নয়। সূত্র: বিবিসি বাংলা।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn