শহীদনূর আহমেদ, সুনামগঞ্জ :: দীর্ঘদিন ধরে মনের মধ্যে একটা চিন্তা কাজ করে এমন একটি উদ্যোগ বা কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করা যা অসহায়, পিচিয়ে পড়া, ছিন্নমূল মানুষের ইচ্ছে পূরণ করবে। সপ্তাহ কিংবা মাসে হলেও অভাবগ্রস্থ মানুষের খোঁজ করে তাঁর প্রত্যাশা পূরণ করা হবে।  ইতোমধ্যেই উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আশা করছি দ্রুতই কার্যক্রম শুরু করবো। সমাজের বঞ্চিত, অসহায় পিচিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ইচ্ছে পূরণে কাজ করেন অনেক স্বেচ্ছাসেবী, মানবিক তরুণ। তাদের মননে মগজে তাড়িত করে কি করে অভুক্ত মানুষকে আহার দেয়া যায়, কি করে বস্তুহীনকে বস্তু দেয়া যায়, দুর্যোগ মহামারিতে কি করে অসহায়ে পাশে দাঁড়ানো যায়। মানবতার এমন ফেরিওয়ালাদের সম্মানে কুর্ণিশ করি বারংবার।

বলছি এমন এক মানবিক তরুণের কথা। বিপদগামী তরুণদের আদর্শ সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের কান্দিগাঁও গ্রামের উদ্যমী তরুণ ইয়াকুব শাহরিয়ার।  আত্মকেন্দ্রিক, স্বার্থবাদিতার যুগে বিরামহীনভাবে দীর্ঘদিনযাবত পিচিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ইচ্ছে পূরণে কাজ করছে ইয়াকুব। মুমূর্ষূ রোগীর চিকিৎসার টাকা সংগ্রহে ক্যাম্পেইন করা, অসহায় মেধাবী শিক্ষার্থীর শিক্ষার পথ সুগম করা, শীতার্ত মানুষকে শীতবস্ত্রের ব্যবস্থা করাসহ নানাবিধ সামাজিক উদ্যোক্তা সে।

গত ৬ বছর ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করে এমন অজস্র মানবিক কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করছে সে। এবারও ইয়াকুব তার ইউনিয়নের ১২৫টি দুরিদ্র পরিবারের মাঝে শীতের লেপ বিতরণ করেছে। কনকনে এই শীতে গরম কাপরের লেপ পেয়ে খুশি উপকারভোগীরা। মানুষগুলোর হাসি দেখে তৃপ্তির হাসি ইয়াকুবের ঠোঁটে। প্রতি শীতে শীতার্ত মানুষের শীত বস্ত্রের ব্যবস্থা করে সে। গত ঈদে দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েদের ঈদের পোশাকের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলো সে। ৫টির উপরে চিকিৎসা তহবিল করেছে ইয়াকুব।

অসহায় মুমূর্ষূ রোগীর জীবন বাঁচাতে ইয়াকুব শাহরিয়ারের মানবিক উদ্যোগুলো উদাহারণ হয়ে থাকবে যুগের পর যুগ। ব্যক্তিগত কাজেই নিয়মিত যাতায়াত হয় গ্রামের বাড়িতে। সেদিন ৭০ বছরের এক বৃদ্ধাকে আফসোস করতে দেখলাম শীতের একটি লেপ-কম্বলের জন্য। তীব্র শীতে প্রতিবেশী এই বৃদ্ধা মহিলার শীত নিবারণের একমাত্র উপায় পুরনো ছেড়া একটি খাতা। আহ-হাড়কাঁপানো শীতে কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে বৃদ্ধা মহিলার শরীরের কাঁপন দেখেছি স্বচক্ষে।

আমাকে দেখে তিনি বললেন ‘ওবা সাংবাদিক আমার নামটা দিও। একটা কমল অইলে ঠান্ডা থাকি বাঁচতে পারতাম।’ বৃদ্ধা মহিলাকে দাদি সম্ভোধন করে বললাম যান আপনার কম্বলের ইচ্ছে পূরণ করবো শীঘ্রই। একবিংশ শতাব্দীর অত্যাধুনিকতার যুগেও দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছেন দেশে ২০% এর বেশি লোক। যা বিভিন্ন সমীক্ষায় উঠে এসছে। এখনও ফুটপাত, বাস, রেলস্টেশন, লঞ্চঘাট, ছাউনী খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন অনেক ছিন্নমূল পরিবার। যাদের অন্য, বস্তু, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ নানাবিধ সমস্যার অন্ত নেই। মুজিব শতবর্ষে বর্তমান সরকার আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহহীন/ ভূমিহীন পরিবারকে ঘর উপহার দিচ্ছেন। ভিক্ষুক  পুনঃবাসর্নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। নিঃসন্দেহে এমন মানবিক উদ্যোগ দেশের দারিদ্র দূরীকরণে ভূমিকা রাখবে। সরকার বাহাদুরকে ধন্যবাদ।

বঞ্চিত মানুষই কেবল জানে বঞ্চনার যাতনা কেমন। অসহায়,অভাবি মানুষটির কষ্ট পরিমাণ করতে পারলে হয়তো সুখি আর অসুখীর মধ্যে পার্থক্য করা যেত। সহায়ক পরিবেশ ও পারিপারস্কিতার সাম্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হতো একটি সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা। ইয়াকুব শাহরিয়ারের মতো তরুণরাই এই ইতিবাচক সমাজ গঠন করতে পারবে। ইয়াকুব একজন প্রতিশ্রুতিশীল মানবিক তরুণ। একাধারে একজন বস্তুনিষ্ট সাংবাদিক, প্রভাষক, সাহিত্যিক ও সংগঠক সে। ২০ বারের অধিক রক্ত দিয়েছে সে। ফেইসবুকের মাধ্যমে ক্যাম্পেইন করে রহমাজান আলীর চিকিৎসায় ৫৮ হাজার, অসহায় সজীবের চিকিৎসায় ৭০ হাজার, স্কুলছাত্রী সুমিকে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা সংগ্রহসহ ক্যাম্পইন অব কাকুলী, ছাবিরুনের চিকিৎসা সহায়তা প্রদান সহ অসংখ্য মানবিক ও সামাজিক কাজের উদ্যোক্তা সে। নানা সীমাবদ্ধতার মারিয়ে উদ্যোমী তরুণ ইয়াকুব নিজেকে প্রকাশ করেছে ইচ্ছে পূরণের ফেরিয়ালা হিসেবে। সামাজিক দায়বোধ থেকে এভাবে তরুণরা এগিয়ে আসলো আগামীর পথ হবে সুগম, মুসৃণ।  শুভকামনা রইলো ইয়াকুবের মতো ইচ্ছে পূরণের ফেরিয়ালাদের জন্য।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn