খলিল রহমান-

সুনামগঞ্জে হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের আঞ্চলিক কার্যালয় উদ্বোধন করা হয়েছে দেড় বছর আগে। তবে জনবলসংকটে এখনো কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। ফলে হাওরাঞ্চলের মানুষের সমস্যার সমাধান ও জীবনমান উন্নয়নে কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না সংস্থাটি। হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জ শহরের ষোলঘর এলাকায় অধিদপ্তরের আঞ্চলিক কার্যালয় উদ্বোধন করা হয়। সেখানে তিনজন কর্মী দৈনিক হাজিরা ভিত্তিতে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁদের মধ্যে একজন ব্যক্তিগত সহকারী, একজন অফিস সহায়ক ও একজন নৈশপ্রহরী। তিনতলা ভবনটির প্রথম ও দ্বিতীয় তলা দাপ্তরিক কার্যক্রমের জন্য। তৃতীয় তলা রেস্টহাউস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। গত বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় গিয়ে দেখা যায়, মূল ভবনের গেটে তালা দেওয়া। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর তৃতীয় তলা থেকে নেমে আসেন অফিস সহায়ক মো. ইয়াসিন শেখ। তিনি বলেন, ভবনের দেখভাল করা ছাড়া তাঁদের আর কোনো কাজ নেই। তবে মাঝেমধ্যে ঢাকা থেকে কর্মকর্তারা আসেন। তখন তাঁদের ব্যস্ততা বাড়ে। শুরু থেকেই এখানে দায়িত্ব পালন করছেন নৈশপ্রহরী আব্বাস মিয়া। তিনি বলেন, রাতে এখানে নেশাখোরদের আনাগোনা বেড়ে যায়। তারা সীমানাপ্রাচীরের ভেতরে ঢুকে পড়ে। বাধা দিলে হুমকি-ধমকি দেয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশের সাত জেলার হাওরের প্রাকৃতিক সম্পদের উন্নয়ন ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালে ‘হাওর উন্নয়ন বোর্ড’ গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১৯৭৭ সালে এই বোর্ড গঠিত হয়। কিন্তু ১৯৮২ সালে বোর্ডটি বিলুপ্ত করা হয়। ১৯৯৮ সালে কিশোরগঞ্জে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবার হাওর উন্নয়ন বোর্ড গঠনের ঘোষণা দেন। এরপর ২০০০ সাল থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে এই বোর্ডের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথমে এর নাম ‘হাওর উন্নয়ন বোর্ড’ থাকলেও গত বছর তা পরিবর্তন করে ‘হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর’ করা হয়। লোকবলসংকটে এই কার্যালয়ের কোনো কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। সুনামগঞ্জে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, গঠিত জেলা কমিটিতে ওই অধিদপ্তরের একজন প্রতিনিধি থাকার কথা। কিন্তু অধিদপ্তর থেকে জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, জেলা প্রশাসক তাদের পক্ষে একজন প্রতিনিধি দেবেন।

‘হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলন’-এর আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা বজলুল মজিদ চৌধুরী বলেন, ‘দেশের সবচেয়ে বেশি হাওর সুনামগঞ্জ জেলায়। দেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট টাঙ্গুয়ার হাওর এই জেলায়। আমাদের দাবি ছিল, এই অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় যেন এখানেই হয়। কিন্তু তা না করে আঞ্চলিক কার্যালয় করা হয়েছে। দুঃখের বিষয়, আঞ্চলিক কার্যালয়টি উদ্বোধনের দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। হাওরাঞ্চলে গত বোরো মৌসুমে ব্যাপক ফসলহানি ঘটেছে। লোকবলসংকটে আছে। হাওরের সমস্যার শেষ নেই। এমন অবস্থায় এই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু করা জরুরি।’ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মুজিবুর রহমান বলেন, পুরো অধিদপ্তরে মাত্র সাতজন লোক আছেন। এর মধ্যে মাত্র চারজন কর্মকর্তা। অধিদপ্তরের জন্য গত বছরের জুলাইয়ে ১৭৭ জনের লোকবলকাঠামো অনুমোদনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। ওই সুপারিশ অনুমোদিত হয়েছে। এখন নিয়োগ বিধিমালা চূড়ান্ত হওয়ার অপেক্ষায়। প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগের পর ২০১৮ সাল থেকে অধিদপ্তরের কাজ পুরোদমে শুরু হবে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn