বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা প্রফেসর হওয়ার জন্য পাগল হয়ে থাকে, তারা পুরোপুরিই অযোগ্য শিক্ষক। যাদের প্রফেসর হওয়ার যোগ্যতা নেই তারা ‘মাননীয় উপাচার্য’ পর্যন্ত হয়ে গেছেন। আর অযোগ্যরা যারা উপাচার্য হয়েছেন এবং হওয়ার স্বপ্নে দেখছেন তাদেরকে সবার আগে বাদ দেওয়া দরকার। বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী সিনেট ভবনে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: নতুন যুগের সন্ধানে’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন ও লেখক সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. রেহমান সোবহান, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের ফেলো ড. রওনক জাহান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ এবং জার্মান ভিত্তিক ফাউন্ডেশন ফ্রেডরিক-এবার্ট-স্টিফটুং (এফইএস)’র ফ্রানজিসকা কর্ন। ড. কামাল বলেন, ‘এখন নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে দলীয় পৃষ্ঠপোষকতার ভিত্তিতে। কিন্তু তা হওয়ার কথা ছিল যোগ্যতার ভিত্তিতে। কিন্তু দলীয় আনুগত্য সে যোগ্যতার মানদণ্ড হতে পারে না।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘পায়ের ধুলা নিয়ে নিয়োগের সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। নীতিগত ভাবে এটাকে নিষিদ্ধ করতে হবে।’ তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: নতুন যুগের সন্ধানে বইটি সময়োপযোগী। প্রশ্নগুলোও সময়োপযোগী। বইটিতে ১৯২১ সালের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রথম ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার ও বাহিরের মাননির্ধারক সংস্থাগুলো কাজ করার আশা দেখা যায়। ২০২১ এর মধ্যে এর বাস্তবায়ন শুধু স্বপ্ন নয়, মহাস্বপ্ন। এটার জন্য সর্বোচ্চ ক্ষমতার কমিশন দরকার। এক্ষেত্রে শিক্ষকদের ব্যাপারে ছাত্রদের মুল্যায়নের সুযোগ দিতে হবে। শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রথম শর্ত মুল্যায়নের সুযোগ। এর মাধ্যমে তথ্য পাওয়া যাবে। যার মাধ্যমে কমিশন ঘাটতিগুলো বুঝতে পারবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘একাত্তরে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা জীবন দিয়েছিলেন, তার মাধ্যমে আমরা সুযোগ পেয়েছিলাম। স্বাধীনতাটা হলো আমাদের জন্য বড় সুযোগ। এই সুযোগটা স্বাধীনতার আগে স্বপ্ন ছিল। স্বাধীনতার পরে অনেকের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে।’ সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. রেহমান সোবহান বলেন, ‘সরকার মোনায়েম খানকে গভর্নর নিয়োগ দেওয়ার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে শাসন করার অপচেষ্টা শুরু হয়। মোনায়েম খান গভর্নর হওয়ার পর মাহমুদ হোসেনকে সরিয়ে ওসমান গনিকে উপাচার্যের দায়িত্ব দেন। এরপর থেকে শুরু হয় দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ। নিয়োগের ক্ষেত্রে লেজুড়বৃত্তি তখন থেকেই শুরু। ছাত্র রাজনীতির জন্ম তখনই। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপকর্মের বিরুদ্ধে সোচ্চার আন্দোলন গড়ে তুলেছিল।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা পরিবর্তনটা দেখেছি। স্বার্থের জন্য কিছু মানুষ বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যবহার করেছে। পরে তারাই আবার ক্ষমতায় উন্নীত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে শাসন করেছে। আমাদের শিক্ষকতার যুগে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতি দেয়া হতো। কিন্তু এখন দলীয় লেজুড়বৃত্তি ছাড়া কোনো শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয় না। এই ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় তথা শিক্ষার মানকে উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। রাজনীতির অনুপ্রবেশ বন্ধ হলে এর সুরাহা হবে।’ ড. রওনক জাহান বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়লেও মানটা কমে যাচ্ছে। বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, শিক্ষক নিয়োগসহ গুরূত্বপুর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে কিছু নীতি কঠোরভাবে মেনে চলা হয়। সেখানে প্রফেসর বা ডিন হওয়ার জন্য আগ্রহ দেখায় না কেউ। প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের ভারে গবেষণা করার সময় পাবে না বলে তারা এ আগ্রহ দেখায় না। আর আমাদের দেশে মতা পেয়ে আইন ভঙ্গ করে অন্যায় কাজ করে। এই অপসংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। শিক্ষকদের নিজেদের স্বার্থে ছাত্র বা ছাত্রনেতাদের ব্যবহার করা ঠিক নয়।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn