রংপুর : ১৯৯৪ সালের ৮ অক্টোবর একই দিনে ইসলাম ধর্মের শিক্ষক হিসেবে কামরুল ইসলাম এবং হিন্দু ধর্মের শিক্ষক হিসেবে স্নিগ্ধা সরকার দীপা ভৌমিক নিয়োগ পান। আর নিয়োগ দুটি দিয়েছিলেন সেই সময়ে স্কুলের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট রথীশ চন্দ্র ভৌমিক বাবু সোনা। তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয় এবং কামরুল ও দীপা ভৌমিককে জিজ্ঞাসাবাদের সাথে যুক্ত সংস্থাগুলোর সূত্রে এতথ্য জানা গেছে। তদন্তসূত্রগুলোর তথ্য মতে, রথীশ চন্দ্র ভৌমিকের বিবাহের পর থেকেই পারিবারিক অশান্তি শুরু হয় এবং দীপা ভৌমিক পর পুরুষে আসক্ত ছিলেন। স্কুলে নিয়োগ পাওয়ার পরপরই কামরুলের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন দীপা ভৌমিক। শুধু কামরুলই নয় আরও একাধিক সম্পর্ক ছিল তার। এরমধ্যে একই স্কুলের আরেক শিক্ষক মতিয়ার রহমান এবং বাবু সোনার অফিস সহকারী মিলন মোহন্ত ছাড়াও একাধিক ব্যক্তির সাথে তার ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল। কামরুলের সাথে দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ট সম্পর্কে কোন বাঁধা হয় নি। তবে কামরুল ইসলামের সাথে সম্পর্কের বিষয়টি ছিল ওপেন সিক্রেট। কামরুল ও দীপা ভৌমিককে জিজ্ঞাসাবাদের সাথে যুক্ত তদন্তরত সংস্থাগুলোর সূত্র মতে, কামরুল শুধু দীপা ভৌমিকের পরকীয়া প্রেমিকই নয়, ওই সম্পর্কের সূত্র ধরে দীপা ভৌমিকের কাছ থেকে লাল লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তদন্তসূত্রগুলোর ধারণা রাধাবল্লভে কামরুলের যে দ্বিতল বাড়ি আছে তার আর্থিক যোগানও দিয়েছেন ওই দীপা ভৌমিক। কামরুল যে মোটরসাইকেলটি ব্যবহার করতেন সেটিও দীপা ভৌমিকের দেয়া উপহার কিনা তাও খতিয়ে দেখছে আইনশৃংখলা বাহিনী।

কামরুল ও দীপা ভৌমিককে জিজ্ঞাসাবাদের সাথে যুক্ত তদন্তরত সংস্থাগুলোর সূত্র মতে, ছাত্রজীবনে জাসদ ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত কামরুল ইসলাম ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ওই স্কুলের সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন। সেই সময়ের সভাপতির আনুকুল্যে একজন জুনিয়র শিক্ষক হয়েও নিয়ম বহির্ভূতভাবে কামরুল ইসলাম বিভিন্ন পদ পদবি পান এবং নিয়োগসহ আর্থিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে অনিয়ম দুর্নীতির পাহাড় গড়ে তোলেন স্কুলটিতে। এসময়কার প্রধান শিক্ষক ছিলেন তার হাতের পুতুল। কামরুল ও দীপা ভৌমিককে জিজ্ঞাসাবাদের সাথে যুক্ত তদন্তরত সংস্থাগুলোর সূত্র মতে, সেই সময়ের স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি মারা যাওয়ার পর স্কুলটিতে সভাপতি হিসেবে আসেন অ্যাডভোকেট বাবু সোনা। এরপর তিনি শিক্ষক কামরুল ইসলামের সকল অবৈধ হস্তক্ষেপ কঠোরহস্তে দমন করেন এবং সিনিয়র শিক্ষকদের যথাযথভাবে দায়িত্ব দিয়ে কাজ শুরু করেন। ২০১৫ থেকে ২০১৮ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার মাধ্যমে স্কুলে একাডেমিক বিল্ডিং হওয়ার পাশাপাশি বহু উন্নয়ন হয়েছে। স্কুলের জমি নিয়ে সমস্যা ছিলও তার সমাধান হয়েছে কোর্টের রায়ের মাধ্যমে গত ১৪ মার্চ। কিন্তু কামরুল অবৈধ ক্ষমতা ব্যবহার করতে না পারায় স্কুলের শিক্ষকদের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব তৈরিসহ বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র এবং শৃংখলা বিরোধী কাজ শুরু করেন। আর তাকে রশদ ও সাহস জোগান প্রেমিকা ও সহকর্মী স্নিগ্ধা সরকার দীপা ভৌমিক।

কামরুল ও দীপা ভৌমিককে জিজ্ঞাসাবাদের সাথে যুক্ত তদন্তরত সংস্থাগুলোর সূত্র এবং স্কুল সূত্র মতে, অব্যাহত শৃংখলা বিরোধী কাজের কারণে গত ৪ মার্চ স্কুলের প্রধান শিক্ষক সভাপতির নির্দেশে তিনটি বিষয় উল্লেখ করে কারণদর্শাও নোটিশ প্রদান করেন কামরুল ইসলামকে। কামরুল ইসলাম নোটিশের জবাব দেন। সেই জবাব নিয়ে গত ১৯ মার্চ পরিচালনা কমিটির বৈঠক বসে। বৈঠকে জবাব পর্যালোচনা করে সন্তোষজনক না হওয়ায় কামরুলের সাথে কথা বলার জন্য অভিভাবক সদস্য বিপুল সরকারকে আহ্বায়ক করে একটি তদন্ত কমিটি করে দেন অ্যাডভোকেট বাবু সোনা। গত ২৮ মার্চ স্কুলে দুপুরে ওই কমিটির কাছে সরাসরি নোটিশ ও জবাবের বিষয়ে কথা বলেন কামরুল। এক পর্যায়ে ভুল স্বীকার করেন। এ বিষয়টি খুবই খারাপ ভাবে নেন কামরুল ও দীপা ভৌমিক। কামরুলকে নোটিশ এবং নোটিশের জবাব প্রাপ্তির পর কমিটি করে জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনায় দীপা ভৌমিক খুব নাখোশ হন রথিশ চন্দ্র ভৌমিকের ওপর এনিয়ে কথাকাটাটি হয় স্বামী স্ত্রীর মধ্যে।

কামরুল ও দীপা ভৌমিককে জিজ্ঞাসাবাদের সাথে যুক্ত তদন্তরত সংস্থাগুলোর সূত্র মতে, কামরুলের সাথে দীপার অবাধ প্রেম ও অসামাজিক কার্যকলাপ এবং স্কুলে কামরুলের অবৈধ হস্তক্ষেপে দীপার সমর্থন ও কামরুলকে কারণদর্শাও নোটিশ নিয়ে পারিবারিক বিরোধ উঠে যায় তুঙ্গে। বিষয়টি নিয়ে একটি সমঝোতার জন্য ৩০ মার্চ রাতে পারিবারিক সালিশের  দিনধার্য করা হয় হয়। কিন্তু পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কামরুলের স্কুলের তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হওয়ার পরের দিন এবং দীপার সাথে পারিবারিক সালিশে আগেই দিন ২৯ মার্চেই নিজ বাড়ির নিজ শয়ন কক্ষেই দীপা ভৌমিক ও কামরুল ইসলাম বাবু সোনাকে হত্যা করে। তদন্ত সূত্রগুলোর তথ্য মতে, ২৯ তারিখ রাতে বাড়ি ফেরার সাথে সাথেই ঘুমের ওষুধ খাওয়ানোর পর ওড়না পেচিয়ে বাবু সোনাকে হত্যা করে দীপা ভৌমিক ও কামরুল। লাশের গলায় ওড়না দিয়ে পেচানো সেই দাগ রয়েছে। এসময় তার পরনে শার্ট-প্যান্ট ও পায়ে জুতা ছিল। লাশ পেচানো ছিল বিছানার চাদর ও লুঙ্গি দিয়ে। সুরুত হাল রিপোর্টেও সে বিষয়গুলো উঠে এসেছে। কামরুলে ইসলামের পৈতৃক বাড়ি তাজহাট মোল্লপাড়ায়। তিনি পরিবার নিয়ে নগরীর রাধাবল্লভ এলাকায় বসবাস করলেও মোল্লাপাড়ার বাড়িতেও মাঝেমধ্যে যাতায়াত করতেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn