গত বছরের ভয়াবহ বন্যায় সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার ছোট-বড় ৮৪টি সড়ক (মোট ১৮০ কিলোমিটার) ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এক বছরেও এসব সড়কের সংস্কারকাজ না হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এখানকার সংসদ সদস্য পরিকল্পনামন্ত্রী হওয়ার পরও এসব সড়ক সংস্কারের প্রকল্প কেন অনুমোদন করা হচ্ছে না, তা নিয়ে বিস্মিত এলাকাবাসী।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জগন্নাথপুর উপজেলার একটি পৌরসভা ও আটটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে উপজেলা সদর ও ইউনিয়নের ভেতরে যাতায়াতের সড়কগুলো ২০২২ সালের ১৬ জুনের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এলজিইডির হিসাব অনুযায়ী, উপজেলায় মোট ১৮০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের সংখ্যা ৮৪। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর একটি উপজেলার কলকলিয়া-তেলিকোনা সড়কটি।  শুক্রবার(২৫ আগষ্ট)   সরেজমিনে এ সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ জায়গায় পিচ উঠে মাটি বের হয়ে গেছে। সড়কজুড়ে শুধু গর্ত আর গর্ত। এ সড়কে কথা হয় অটোরিকশাচালক নিশিকান্ত দাসের সঙ্গে। নিশিকান্ত বলেন, ‘ভাঙাচোরা সড়কে একেবার গেলে আর যাইতে ইচ্ছে করে না। অনেকটা নিরুপায় হয়ে যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করতে হয়।’

কল্যাণপুর গ্রামের বাসিন্দা আবুল খায়ের বলেন, এ সড়ক দিয়ে কলকলিয়া ইউনিয়নের কমপক্ষে ১০ গ্রামের মানুষের জগন্নাথপুর উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে হয়। বেহাল সড়কে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কলকলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) প্যানেল চেয়ারম্যান আবদুল হাশিম বলেন, গত বছরের বন্যায় কলকলিয়া-তেলিকোনা সড়কসহ বেশ কয়েকটি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেহাল সড়কগুলোয় সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এলজিইডি দপ্তরে বারবার কথা বলেও কোনো সুরাহা মিলছে না। পাটলী ইউনিয়নের রসুলগঞ্জ বাজার থেকে লামা রসুলগঞ্জ লাউতলা সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, এ সড়কজুড়েও খানাখন্দ। এ সড়কে কথা হয় লাউতলা গ্রামের বাসিন্দা সমাজকর্মী বুরহান উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, সড়কে ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। লাউতলা এলাকায় সড়ক ভেঙে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সেখানে বাঁশ ফেলে পথচারীরা পার হচ্ছেন। এলাকাবাসীর উদ্যোগে সড়কের বড় বড় গর্ত ভরাটে একাধিকবার খোয়া ফেলা হয়েছে; কিন্তু এলজিইডি সড়কটি মেরামত করছে না। পাটলী ইউপি চেয়ারম্যান আঙুর মিয়া বলেন, বেহাল সড়কের চিত্র এলজিইডি কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরা জানানো হয়েছে। তাঁরা সড়ক সংস্কারের আশ্বাস দিয়েছেন।

উপজেলা নাগরিক ফোরামের নেতা পীর ছালিক আহমেদ বলেন, সড়কগুলোর সংস্কারকাজ বিলম্বিত হওয়ার প্রতিদিন উপজেলার লাখো মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ছোট ছোট গ্রামীণ সড়কের সংস্কার বিলম্বিত হওয়ায় স্থানীয় সংসদ সদস্য পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের বড় বড় উন্নয়ন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এলজিইডিকে দ্রুত সংস্কারকাজ শুরু করতে হবে। উপজেলা প্রকৌশলী সোহরাব হোসেন বলেন, ‘গত বছরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো সংস্কারের জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সিলেট বিভাগের বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি সংস্কারে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ওই প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। আশা করছি, দ্রুত এসব সড়কে দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে কাজ শুরু হবে।’

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn