ওয়েছ খছরু-

‘মনে হচ্ছে বড় ভাইকে হারালাম। মেয়র থাকাকালে যখনই কোনো পরামর্শের প্রয়োজন হতো- ফোন দিতাম। তিনি নিজের ভাইয়ের মতো পরামর্শ দিতেন।’- কাঁদো কাঁদো গলায় কথাগুলো বলছিলেন সিলেটের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুতে শোকে কাতর হয়ে পড়েছেন কামরান। সকালে ঘুম থেকে উঠেই তিনি জানতে পারেন মৃত্যুর খবর। কেঁদে ফেলেন তিনি।চট্টগ্রামের মহিউদ্দিন ও সিলেটের কামরান দু’জন প্রায় সময় একসঙ্গে আলোচিত হয়েছেন দেশের রাজনীতিতে। বিপরীত মেরুতে অবস্থান করে দুই জনই দক্ষতার সঙ্গে চট্টগ্রাম ও সিলেটকে শাসন করেছেন। দুর্যোগ-দুর্দিনে একে অন্যের সহযোগিতা নিয়েছেন। এমনকি নির্বাচনের প্রচারণায়ও কামরান কখনো চট্টগ্রামে ও মহিউদ্দিন কখনো সিলেটে এসে প্রচারণা চালিয়েছেন। সেই মহিউদ্দিনের মৃত্যুতে কাঁদছেন সিলেটের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন কামরান। মহিউদ্দিনকে তিনি বড় ভাইয়ের মতো শ্রদ্ধা করতেন। মহিউদ্দিনও তাকে ছোটো ভাইয়ের মতো আগলে রেখেছিলেন। গতকাল দুপুরে কামরান জানালেন- ‘মন ভালো নেই। শূন্য লাগছে। বহুদিন ধরে মহিউদ্দিন ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক। অসুস্থ ছিলেন। আবার সুস্থ হয়েও উঠলেন। মনে করেছিলাম হয়তো তাকে আমরা আবার ফিরে পাবো। কিন্তু চলে গেলেন।’ কাঁদো কাঁদো হয়ে কামরান জানালেন, ‘তার মতো নেতা এই যুগে পাওয়া দুষ্কর। তিনি মাটি ও মানুষের জন্য রাজনীতি করতেন। ভয় করতেন না। আমাকে সাহস দিতেন। যখনই কোনো অসুবিধায় পড়তাম মহিউদ্দিন ভাইকে ফোন দিতাম।’ সিলেটের কামরান ও চট্টগ্রামের মহিউদ্দিনের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। কামরান যখন পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন তখন থেকে মহিউদ্দিনের সঙ্গে তার সম্পর্ক। তখন মহিউদ্দিনও চট্টগ্রামের মেয়র। এরপর সিলেট পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশন হয়। প্রথম নির্বাচন হয় ২০০৩ সালে। ওই সময় বিএনপি ক্ষমতায়। কামরান ছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী। তখন মেয়র ছিলেন এবিএম মহিউদ্দিন। তিনি কামরানকে নতুন সিটি করপোরেশন গড়তে পরামর্শ দিয়েছিলেন। পাশাপাশি যখন নির্বাচন শুরু হয় তখন আর বসে থাকেননি মহিউদ্দিনও। কামরানের ভালোবাসায় ছুটে এসেছিলেন সিলেটে। বিএনপির শাসনমালের নির্বাচনে কামরান কিছুটা তটস্থ ছিলেন। জয় নিয়েও ছিলেন দ্বিধা-দ্বন্দ্বে। তবে-নগরবাসীর ভালোবাসা ছিল তার সঙ্গে। এরপরও মহিউদ্দিন সিলেটে এসে কামরানের পক্ষে ঘরে ঘরে গিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালান। ওই নির্বাচনে মহিউদ্দিনের প্রচারণা কামরানের বিজয়ে ব্যাপক প্রভাব পড়েছিল। শুধু মহিউদ্দিনই নয়, এর পরের বছর যখন চট্টগ্রামে সিটি নির্বাচন হয়- তখন মহিউদ্দিন ছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী। কামরানও ছুটে গিয়েছিলেন চট্টগ্রামে। তিনি ওখানে গিয়ে মহিউদ্দিনের পক্ষে ঘরে ঘরে ভোট প্রার্থনা করেন। ওই নির্বাচনে কামরানের প্রচারণা মহিউদ্দিনের বিজয়ে ভূমিকা রেখেছিলো। গতকাল কামরান জানিয়েছেন, ‘এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আমি বিএনপির শাসনের সময় মেয়র ছিলাম। মেয়রের পাশাপাশি আমরা সিলেট ও চট্রগ্রামে দলকে আন্দোলনে রেখেছি। মহিউদ্দিন ভাই ছিলেন আমার অনুপ্রেরনা। আমরা অদম্য সাহস নিয়ে তখন নগর পরিচালনার পাশাপাশি দলের হয়েও কাজ করেছি।’ তিনি বলেন- ‘মহিউদ্দিন শুধু যে চট্টগ্রামের নেতা ছিলেন তা নয়, তিনি গোটা দেশের স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে আপ্রাণ কাজ করেছেন। তিনি বিশ্বাস করতেন স্থানীয় সরকার শক্তিশালী হলে দেশের মানুষের ভাগ্য আরো সুপ্রসন্ন হবে।’ এবিএম মহিউদ্দিনের স্মৃতিচারন করে কামরান বলেন- ‘একবার আমরা পরিষদ থেকে কাউন্সিলর সহ গিয়েছিলাম চট্টগ্রামে। মহিউদ্দিন ভাই, বাসায় দাওয়াত দিয়ে নিয়ে সবাইকে খাইয়েছিলেন। আমরা তার আথিয়েতায় খুশি হয়েছিলাম। আমরাও তাকে সিলেট থেকে নেয়া উপহার দিয়েছিলাম।’ এদিকে- বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, মহিউদ্দিন চৌধুরী দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে অনেক অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন এবং চট্টগ্রাম মহানগরীর উন্নয়নে ছিলেন একজন কিংবদন্তি পুরুষ। তার মৃত্যুতে দেশ এক সূর্য সন্তানকে হারালো যা কখনও পূরণ হওয়ার নয়। তিনি মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন ও শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn