পুরো আসর জুড়ে উত্থান পতনের মাঝে এগিয়েছে রংপুর রাইডার্স। আর ওপর দিকে শুরু থেকেই ধারাবাহিক কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। কিন্তু শেষ চারে পৌঁছেই যেন বদলে যায় দল দুটির পারফরম্যান্স! দারুণ ধারাবাহিক ক্রিকেট খেলতে থাকে মাশরাফি বিন মুর্তজার রংপুর। আর তামিম ইকবালের কুমিল্লা যেন নিজেদের ছায়া হয়েই রইল। যে ব্যাটিং নিয়ে গ্রুপপর্বের পুরোটা জুড়েই রংপুরের দুশ্চিন্তা, সেই ব্যাটিংই গড়ে দিল পার্থক্য।  এলিমিনেটর রাউন্ডে ক্রিস গেইল। আর কোয়ালিফায়ারে সতীর্থ জনসন চার্লস। গেইলের দেখানো পথ ধরে এদিন তুলে নিলেন ক্যারিয়ারের প্রথম টি-টুয়েন্টি সেঞ্চুরি। আর পুরো আসর জুড়ে নিজের খোলসে থাকা ব্রেন্ডন ম্যাককালামও জ্বলে উঠলেন। আর তাতেই পুড়ল কুমিল্লার স্বপ্নের ঘর। শিরোপা পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে ৩৪ রানে হেরে গেছে দলটি। আর রংপুরকে প্রথমবারের মতো স্বপ্নের ফাইনালে তুলে নিয়ে নিলেন মাশরাফি। মঙ্গলবারের ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ঢাকা ডায়নামইটস।

চার্লস-ম্যাককালামেই জয়ের ভিত গড়েছিল কুমিল্লা
গেইল ঝড় তো আগের দিনই থামানো গেছে শুরুতে। কিন্তু কে জানতো তার জাতীয় দলের সতীর্থ তেমন নাম-ডাকহীন জনসন চার্লসও একহাত নিয়ে নেবেন কুমিল্লা ভিক্টরিয়ান্সকে! তাই ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ের ম্যাচে। গেইলের দেখানো পথ ধরেই তুলে নিলেন সেঞ্চুরি। আর পুরো আসর জুড়েই যে ব্যাটসম্যান সংগ্রাম করেছেন, সেই ব্রেন্ডন ম্যাককালামও তুললেন ঝড়। করলেন আসরে নিজের প্রথম ফিফটি। দুইজনের রেকর্ড পার্টনারশিপে রংপুর রাইডার্স পেয়ে যায় বিরাট সংগ্রহ। সেই চ্যালেঞ্জ নিতে গিয়ে মাশরাফিদের বোলিংয়ের সামনে আসলে ম্যাচ জয়ের পরিস্থিতি একটু এগিয়েই আর তৈরি করতে পারেনি তামিমের কুমিল্লা। মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে সোমবার ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা দেখে শুনেই শুরু করেছিল রংপুর। প্রথম দুই ওভারে আসে মাত্র ৬ রান। তবে দশম ওভার থেকেই তাণ্ডব শুরু করেন চার্লস ও ম্যাককালাম। ক্রেমারের সেই ওভারে ১টি করে ছক্কা হাঁকান দুই জনই। তবে পরের দুই ওভার দারুণ করেন কুমিল্লার পেসার আল-আমিন হোসেন ও হাসান আলী। দেন মাত্র ৯ রান। কিন্তু সেখানেই বোলারদের সাফল্য শেষ। এরপর প্রতি ওভারেই রংপুরের ব্যাটসম্যানদের ঝড়ের মুখে পড়েন কুমিল্লার বোলাররা। রোববারই হাফসেঞ্চুরির খুব কাছেই ছিলেন চার্লস। ২৬ বলে ৪৬ রান করেছিলেন তিনি। এদিনের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে মিড উইকেটে ঠেলে দিয়ে নিজের হাফ সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন এ ক্যারিবিয়ান। ৪টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৩৪ বলে তার ফিফটি। এরপর আরও আগ্রাসী তিনি। পরের ফিফটি করতে এবং শেষ ওভারে সেঞ্চুরি তুলে নিতে বল খেলেছেন ২৮টি। শেষ পর্যন্ত মাত্র ৬৩ বলে করেন অপরাজিত ১০৫ রান। ৯টি চার ও ৭টি ছক্কায় সাজান নিজের ইনিংসটি। আসরের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি এটা। এলিমিনেটর রাউন্ডে চার্লসের রংপুর সতীর্থ গেইল খেলেছিলেন অপরাজিত ১২৬ রানের ইনিংস।

প্রথম ২১ বলে ২২ রান করেছিলেন ম্যাককালাম। এরপর হাফসেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ৩৪ বলে। শুরুতে সংগ্রাম করলেও পরে আর থেমে থাকতে হয়নি। আল-আমিন হোসেনের করা ১৭তম ওভারে মেরেছেন ৩টি ছক্কা। এর আগে ক্রেমারকেও টানা দুটি ছক্কা হাঁকিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত হাসান আলীর বলে বোল্ড হওয়ার আগে খেলেন ৭৮ রানের ইনিংস। ৪৬ বলের এ ইনিংসে চার মেরেছেন মাত্র ১টি। তবে ছক্কা ৯টি! চার্লস ও ম্যাককালাম এদিন গড়েন ১৫১ রানের জুটি। যেটা দ্বিতীয় উইকেটে বিপিএলের সর্বোচ্চ রানের জুটি। ভেঙ্গে দেন তৃতীয় আসরে বরিশাল বুলসের বিপক্ষে করা চিটাগং ভাইকিংসের শাহরিয়ার নাফীস ও ডেভিড মালানের ১৫০ রানের জুটির রেকর্ডটি। বিপিএলের ইতিহাসে এটি আবার তৃতীয় সর্বোচ্চ রানের উইকেট জুটি। মূলত চার্লস ও ম্যাককালাম জুটিতে ভর করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৩ উইকেটে ১৯২ রানের বিশাল সংগ্রহ পায় রংপুর। কুমিল্লার পক্ষে ১টি করে উইকেট নিয়েছেন সাইফ উদ্দিন, হাসান আলী ও মেহেদী হাসান। নানা নাটকের পর আগের দিন বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচের বাকিটা সোমবার আবার খেলানোর সিদ্ধান্ত নেয় বিপিএল গভর্নিং কমিটি। পরে মঙ্গলবার তারা ব্যাখ্যা দেয় যে দুই দল পরের দিন খেলতে রাজি হওয়ায় ম্যাচটা সোমবারে গড়ায়। কিন্তু ওখানেও প্রশ্ন। এবং নানা প্রশ্ন। সেই প্রশ্নের জবাবটাও জানা। বিপিএল কর্তৃপক্ষ তাদের ক্ষমতাবলে এমনটা করতে পারে এবং সেটি ক্রিকেটেরই স্বার্থে! সেটা মেনে নিলে আসলে কার্টল ওভার কিংবা সুপার ওভারের ম্যাচের চেয়ে পুরো ম্যাচটাই বরং দর্শকদের জন্য হলো আনন্দময়। আর প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্য দিয়েই সাকিব আল হাসানের ঢাকার প্রতিপক্ষ হলো মাশরাফির রংপুর।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn