শ্যামল বণিক অঞ্জনঃ দূর্বাঘাসে শিশির বিন্দু সকালের নরম রোদে ঝিকমিক করে। দিনমান ভ্যাপসা গরম, রৌদ্র মেঘের লুকোচুরি খেলা, থেকে থেকে বৃষ্টি, পাকা তালের ঘ্রাণে ম-ম করে চারদিক। বাতাসে ভেসে বেড়ায় শিউলি ফুলের মিষ্টি সুবাস, অজানা পুলকে শিহরিত হয় মন-প্রাণ। বাতাসে কান পাতলেই যেন শোনা যায় ঢাক কুড় কুড় ধ্বনি। শুভ্র সতেজ শরৎ প্রকৃতি যেন দিয়ে যায় দুর্গা মায়ের আগমনি বার্তা।

শরৎ এলেই সুজয়ের মনটাও কেমন যেন ছটফট করে। সারাক্ষণ মনজুড়ে কেবল ভাবনা একটাই-কখন আসবে পূজার দিন। নতুন জামা জুতা কেনার ধুম। খাওয়া-দাওয়া ঘোরাঘুরি। ঢাকের আওয়ার প্রাণ ভরে ধূপের ধোঁয়ার ঘ্রাণ অনুভব করা, আরতি প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া, পূজার দিনগুলোতে মণ্ডপে মণ্ডপে সবার সঙ্গে ঘুরে প্রতিমা দেখার মজাটাই যে অন্যরকম এক আনন্দ!

গত বছর মহল্লার পূজায় আরতি প্রতিযোগিতায় সুজয় প্রথম স্থান অর্জন করেছিল। সেই ক্রেস্টটা বের করে সুজয় মাঝে মধ্যেই দেখে আর মনের অজান্তেই যেন হারিয়ে যায় স্মৃতির অভয়ারণ্যে। মা মাঝে মধ্যে কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলেন-এক জিনিস বারে বারে দেখার মধ্যে বিশেষ কী আছে? সুজয় বলে, আমার কেন জানি এটা দেখতে খুব ভালো লাগে মা। কত কত প্রতিযোগী ছিল সেই প্রতিযোগিতায়। আমার চেয়ে বয়সে অনেক বড় ছেলেমেয়েরাও তো ছিল। তাদের মধ্য থেকে আমার প্রথম হওয়াটা কি কম কথা, বলত মা?

মা মৃদু হেসে বলেন, তাও তো ঠিক।

বাবা এসে বলেন, দেখতে হবে তো ছেলেটা কার? ওর বাবাও তো জীবনে কোনোদিন কোনো কাজে ব্যর্থ হয়নি।

মা বলেন, হয়েছে বুঝেছি। এবার থামো।

এমন সময় সুজয়ের মায়ের ফোনে একটা ফোন এলো। রিসিভ করে মা বলল, হ্যালো ঠাকুরজি। কেমন আছো?

মা সুজয়কে ডেকে বললেন, সুজয়! এই সুজয়! এই নাও।

কে?

মা জবাবে বললেন, তোমার পিসিমণি।

হ্যালো, পিসিমণি! পূজায় আসবে না? পিশনকে নিয়ে চলে এসো। আর শোন এবার পূজায় আমাকে খুব সুন্দর দেখে একটা ব্লেজার কিনে দেবে কিন্তু।

পিসিমণির অন্তপ্রাণ হলো সুজয়! যাকে কি না এই ছোট পিসিমণি সব থেকে বেশি আদর-স্নেহ করেন, সব আবদার হাসিমুখে মিটান। প্রায় ছাব্বিশ-সাতাশ মিনিটের মতো মোবাইলে কথা হলো পিসিমণির সঙ্গে। কখনো সুখের কথা, কখনো ছোট্ট মনের লুকায়িত কিছু বেদনার কথা, চাওয়া-পাওয়ার কথা বলে ফোন রেখে কোচিংয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি হতে চলে গেল সুজয়। আর মাত্র কয়েকটা দিন পরেই দুর্গাপূজা। কিন্তু এরই মধ্যে ছোট্ট সুজয়ের মনে প্রাণে ওর ভুবনজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে পূজার আমেজ। পূজার খুশি। পূজাকে কেন্দ্র করে নানারকম পরিকল্পনায় যেন মহাব্যস্ততার মধ্যে কাটছে সুজয়ের দিন রাত।  

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn