শাহ্ মো. আখতারুজ্জামান-

“গাড়িত বইলে বুক দরফর খরে, মনে হয় ঔ বুঝি গাড়ি উল্টি যাইবো। রাস্তার এই অবস্থা, সরকারি খরমো খরতারা কিতা খরইন বুঝরাম না। ইটা বুঝি সরকারের ডিজিটাল রাস্তা! দেশও বেড়ানিত আইছলাম আর থাকার ইচ্ছা নাই, তাড়াতাড়ি জাইমোগি।”   ছাতক থেকে সিএনজিচালিত একটি অটোরিক্শা করে সুনামগঞ্জ জেলা সদরে যাবার পথে ৬০ বছর বয়সি যুক্তরাজ্য প্রবাসী রহিমা বেগম মনের ক্ষোভ প্রকাশ করেই এই রকম মন্তব্য করেছেন।   দীর্ঘ প্রায় ৫ বছর ধরে ছাতক-দোয়ারা-সুনামগঞ্জ সড়কের ৪ কিলোমিটার রাস্তার কোন সংস্কার কাজ হয়নি। ফলে সড়কের পিচ ভেঙে গেছে, পাথর-ইট উঠে তৈরি হয়েছে অসংখ্য ছোট-বড় গর্তের। উঁচু-নিচু এই রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলছে হেলে-দুলে। ছাতক থেকে দোয়ারাবাজার হয়ে এই বাইপাস সড়কে সুনামগঞ্জ জেলা সদরের দূরত্ব ২৯ কিলোমিটার যেতে ৩০ মিনিটের পরিবর্তে সময় লাগে প্রায় দেড় ঘণ্টা। রাস্তা সংস্কারের বিষয়ে জনপ্রতিনিধিরা নানা আশ্বাসের বাণী দিলেও বাস্তবে কোন কাজই করা হচ্ছে না। সংস্কার হবে আর হচ্ছে করেই সময় চলে যাচ্ছে।

সড়কের দোয়ারাবাজারের জালালপুর গ্রাম থেকে কাটাখালি বাজার পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার ও সনামগঞ্জ সদর এলাকার শান্তিপাড়া গ্রামের ব্রিজ থেকে ব্রাহ্মণগাঁও পর্যন্ত রাস্তার অবস্থা বেহাল দশা। এ সড়কের অধিকাংশ ব্রিজগুলোর সংযোগ সড়ক দেবে গিয়ে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। চালকরা ব্রিজ সচল রাখতে সংযোগ স্থলে বালি-মাটি দিয়েও কোন লাভ হচ্ছে না। ২-৩ দিন পর সেই বালি-মাটি সরে যাচ্ছে।  যার ফলে অনেক সময়ই অটোরিক্শা, টেম্পু, লেগুনা ব্রিজ অতিক্রম করার সময় চালক যাত্রীদের গাড়ি থেকে নামিয়ে দিতে হচ্ছে। এ সড়কের মনোহরপুর, মাইজবাড়ি, শেখেরগাঁও, ধনপুর ও অচিন্তপুর এলাকায় ছোট-বড় খানাখন্দ যাত্রীদের দুর্ভোগের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে।

এই সড়কে নিয়মিত যাতায়াতকারী অটোরিক্শাচালক ছাতকের গণক্ষাই এলাকার সায়েদ মিয়া বলেন- “রাস্তার এই অবস্থার কারণে গাড়ি নষ্ট হলে যাত্রীরা পড়েন ভোগান্তিতে। প্রায় সময় গাড়ি উল্টে গিয়ে ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।”  পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু হেনা আজিজ বলেন- “ছাতক ও দোয়ারাবাজারের মানুষের জেলা শহরের যাতায়তের একমাত্র রাস্তা এটি। সড়ক সংস্কারের ব্যাপারে মাসিক সমন্বয় সভায় একাধিকবার আলোচনা করা হলেও শুধু আশ্বাস দেয়া হচ্ছে, কাজ তো হচ্ছে না।”

সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন- “সড়ক সংস্কারের ব্যাপারে আপতত কোন প্রকল্প হাতে নেই। তবে মানুষের দুর্ভোগ কমাতে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অংশ হিসেবে কিছু কাজ করা হবে। পরবর্তী সময়ে পুরো কাজের প্রকল্প হাতে নেয়া হবে।”

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn