সিলেটের গোয়াইনঘাট একই পরিবারের ৩ জনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।। গুরুতর অবস্থায় আরও একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের বিন্নাকান্দি দক্ষিণ পাড়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে একজন নারী ও বাকী দুজন ওই নারীর শিশু সন্তান। আহত ব্যক্তি ওই নারীর স্বামী বলে জানা গেছে। নিহতরা হলেন-  আলিমা বেগম (৩০), ও তার দুই সন্তান মিজান (১০) এবং তানিশা (৩)। এছাড়া গুরুতর আহত হয়েছেন আলিমা বেগমের স্বামী হিফজুর রহমান। তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, গতরাতের কোন এক সময়ে কে বা কারা রাতে ওই পরিবারের ওপর হামলা চালিয়ে পালিয়ে যায়। নিহতদের সকলের গলা ও মাথায় ধারালো অস্ত্রের কোপ দেখা গেছে। স্থানীয় লোকজন জানান, বুধবার সকালে অনেক বেলা পর্যন্ত ঘুম থেকে উঠছিলেন না হিফজুরের পরিবারের সদস্যরা। দেরী দেখে প্রতিবেশিরা হিফজুরের ঘরের সামনে যান। এসময় ভেতর থেকে কান্নার শব্দ শুনে দরজায় ধাক্কা দেন তারা।

প্রতিবেশিরা জানান, দরজার সিটকিনি খোলাই ছিলো। ভেতরে প্রবেশ করে খাটের মধ্যে তিন জনের জবাই করা মরদেহ ও হিফজুরকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান তারা। পরে পুলিশে খবর দিলে গোয়াইনঘাট থানার এসআই মহসিনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ গিয়ে লাশ তিনটি উদ্ধার করেন এবং হিফজুরকে হাসপাতালে পাঠান। হিফজুরের শরীরের বিভিন্ন স্থানে দায়ের কোপ রয়েছে।

পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে, মরদেহগুলো উদ্ধারের কাজ করছে। নিহত নারীর স্বামী গুরুতর অবস্থায় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আহাদ বলেন, মরদেহ উদ্ধার করে ওসমানী হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। কারা এই হত্যআকান্ড ঘটিয়েছে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) অফিসার এএসপি লুৎফুর রহমান জানান, ঘটনা তদন্তে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। তবে, কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড তা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি।

কী কারণে হত্যা করা হয় মা ও দুই সন্তানকে?

হিফজুর রহমান পেশায় দিনমজুর। নিজের কোনা সম্পদ নেই। একেবারেই হতদরিদ্র। থাকেন মামার বাড়িতে। মায়ের তরফ থেকে পাওয়া জমিতে মাটির একটা ঘর করেছেন। সেখা্নেই স্ত্রী আর দুই সন্তান নিয়ে থাকেন। এই ভাঙা ঘরেই মঙ্গলবার রাতের কোনো এক সময় অথবা বুধবার ভোরে ঢুকে পড়ে আঁতাতায়ী। হিফুজরের স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তানকে কুপিয়ে হত্যা করে তারা। কুপানো হয় হিফুজরকেও। তবে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান তিনি। বুধবার সকালে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে ওসমানী হাসপাতালে প্রেরণ করেছে। তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক।

এদিকে, ঘরে ঢুকে তিনজনকে হত্যার ঘটনায় গোয়াইনঘাট উপজেলাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার বিপুল সংখ্যক মানুষ ওই বাড়িতে ভিড় করেছেন। বুধবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেছেন পুলিশের সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহম্মদ ও পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন আহমদ। পুলিশের প্রাথমিক ধারণা জমি সংক্রান্ত বিরোধের কারণে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটতে পারে। তবে আহত হিফজুর কিছুটা সুস্থ হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে হামলাকারীদের শনাক্ত করা সম্ভব হবে বলে মনে করছে পুলিশ।

বুধবার দুপুরে উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের বিন্নাকান্দি দক্ষিণ পাড়া গ্রামের ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িজুড়ে মানুষের ভিড়। পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরাও জড়ো হয়েছেন সেখানে। ঘরের ভেতরে মাটির মেঝে লাল হয়ে আছে রক্তে। হিফজুরদের প্রতিবেশি, স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, হিফুজর তার মামার বাড়িতে ঘর বানিয়ে থাকেন। তার বাড়ি পাশ্ববর্তী গ্রামে।

তিনি বলেন, হিফজুরের কোনো শত্রু আছে বলে আমার জানা নেই। কারা এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে তা বুঝতে পারছি না। আমি এই হত্যাকান্ডের বিচার চাই। গোয়ানঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আহাদ বলেন, দুর্বৃত্তরা হিফজুরদের ঘরে ঢুকে তাদের বটি দা দিয়েই সবাইকে কুপিয়ে হত্যা করে। রক্তমাখা সেই বটি দা উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা অনেকগুলো মোটিভ নিয়ে কাজ করছি। তবে এটি ডাকাতির কোনো ঘটনা নয়। হিফজুররা একেবারেই দরিদ্র। তাছাড়া ঘরের কোনো জিনিসপত্র খোয়াও যায়নি।

ঘটনাস্থল থেকে সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন আহমদ বলেন, কী কারণে হত্যা করা হয়েছে তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে জমিসংক্রান্ত কোনো বিরোধ রয়েছে কী না খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অনান্য বিষয়গুলোও আমরা খতিয়ে দেখবো। আহত হিফজুরের সাথে কথা বললেও কিছু তথ্য পাওয়া যাবে। এসপি বলেন, পুলিশ খুব আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছি। আশাকরছি দ্রুতসময়ের মধ্যে আমরা ক্লু উদ্ধার করতে পারবো।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার রাতে বিন্নাকান্দি দক্ষিণ পাড়া গ্রামে ঘরে প্রবেশ করে তিনজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহতরা হলেন- হিফজুরের স্ত্রী আলিমা বেগম (৩০), তার দুই সন্তান মিজান (১০) এবং তানিশা (৩)। এছাড়া গুরুতর আহত হয়েছেন হিফজুর রহমান। তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নিহতদের সকলের গলা ও মাথায় কোপানো হয়েছে।

স্থানীয় লোকজন জানান, বুধবার সকালে অনেক বেলা পর্যন্ত ঘুম থেকে উঠছিলেন না হিফজুরের পরিবারের সদস্যরা। দেরী দেখে প্রতিবেশিরা হিফজুরের ঘরের সামনে যান। এসময় ভেতর থেকে কান্নার শব্দ শুনে দরজায় ধাক্কা দেন তারা। প্রতিবেশিরা জানান, দরজার সিটকিনি খোলাই ছিলো। ভেতরে প্রবেশ করে খাটের মধ্যে তিন জনের জবাই করা মরদেহ ও হিফজুরকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান তারা। পরে পুলিশে খবর দিলে গোয়াইনঘাট থানার এসআই মহসিনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ গিয়ে লাশ তিনটি উদ্ধার করেন এবং হিফজুরকে হাসপাতালে পাঠান। হিফজুরের শরীরের বিভিন্ন স্থানে দায়ের কোপ রয়েছে।

 

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn