সাতক্ষীরা::সাতক্ষীরার কলারোয়ায় একই পরিবারের চারজনকে একাই খুন করেছে  বলে স্বীকার করেছে নিহতের ছোটভাই রাহানুর। একই সঙ্গে নিহত শাহীনুরের ছোটভাই গ্রেপ্তার রাহানুরের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাপাতি ও তোয়ালে উদ্ধার করা হয়েছে। ২১শে অক্টোবর বিকালে সাতক্ষীরা সিআইডি অফিসে আয়োজিত এক প্রেসব্রিফিংয়ে সিআইডি’র অতিরিক্ত ডিআইজি ওমর ফারুক সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। প্রেসব্রিফিংয়ে বলা হয়, নিহত শাহীনুরের ছোটভাই রাহানুর একাই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। রাহানুরের বরাত দিয়ে অতিরিক্ত ডিআইজি ওমর ফারুক বলেন, রাহানুর বর্তমানে কোনো কাজ করতো না। বিগত বেশ কিছুদিন তার কোনো আয় ছিল না। একই সঙ্গে গত ৯-১০ মাস আগে তার বউ চলে যায়। এজন্য সে বড় ভাইয়ের পরিবারের সাথে খাওয়া-দাওয়া করতো। কিন্তু খাওয়া-দাওয়া নিয়ে তার ভাবী সাবিনা খাতুন তাকে গালমন্দ করতো।

এতে তার মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভ জন্ম নেয়। এক পর্যায়ে সে ভাবী সাবিনা খাতুনকে হত্যা করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। এজন্য সে ১৪ই অক্টোবর রাতে পাশের ফার্মেসি থেকে ঘুুমের ওষুধ ও স্থানীয় মুদি দোকান থেকে স্পিড (পানীয়) কিনে তাতে মিশিয়ে তার ভাবী ও ভাইপো ভাতিজিকে খেতে দেয়। রাতে রাহানুর তার বড় ভাইয়ের ঘরে টিভিতে আইপিএল খেলা দেখছিল। রাত দেড়টার দিকে বড়ভাই ঘের থেকে বাড়ি এসে দেখে রাহানুর তার ঘরে বসে টিভি দেখছে। এ সময় বড় ভাই শাহিনুর তাকে টিভি দেখার জন্য বকাঝকা করে বলে তুই বিদ্যুৎ বিল দিস নে, টিভি দেখছিস কেন। এ সময় রাহানুর ভাইকে বলে এ মাসের বিদ্যুৎ বিল আমি দিয়ে দেবো তুমি এই স্পিডটি খাও। বড়ভাই তখন তার দেয়া স্পিডটি খায়। এরপর রাতের কোনো এক সময় সে ঘরের কার্নিস বেয়ে বড়ভাইয়ের ঘরের ছাদের উঠে চিলে কোঠার দরজা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে ঘুমন্ত অবস্থায় ভাইকে জবাই করে হত্যা করে। পরে পাশের ঘরে থাকা ভাবীকেও একইভাবে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডের সময় ভাবী চিৎকার দিলে ভাইপো-ভাতিজিও উঠে যায়। তখন তাদেরও হত্যা করে রাহানুর। কথা বলতে পারে না বলে ৬ মাসের মারিয়াকে বাঁচিয়ে রাখে। পরে সে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাপাতিটি বাড়ির পাশের বড় পুকুরে ফেলে দেয়। অতিরিক্ত ডিআইজি ওমর ফারুক আরও বলেন, রাহানুরের দেয়া তথ্য মতে তাকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে বুধবার পুকুর থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাপাতি ও তোয়ালেটি উদ্ধার করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার (১৫ই অক্টোবর) ভোররাতে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের খলসি গ্রামে মৎস্য ঘের ব্যবসায়ী শাহিনুর রহমান, তার স্ত্রী সাবিনা খাতুন, ছেলে মাহি ও মেয়ে তাসনিমকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। তবে, ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় তাদের ৬ মাস বয়সী শিশুকন্যা মারিয়া। ওইদিন শাহিনুরের শাশুড়ি ময়না খাতুন বাদী হয়ে কলারোয়া থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা (নং-১৪) দায়ের করেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় সিআইডিকে। পরে এ ঘটনায় নিহত শাহিনুরের ভাই রাহানুরকে গ্রেপ্তার করে আদালতে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে সিআইডি। আদালত তার পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn