চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের দুইজন বিশ্ববিদ্যালয়ের, তিনজন হাটহাজারী কলেজের শিক্ষার্থী। এদের সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।  শুক্রবার রাতে এবং গতকাল হাটহাজারী, রাউজান ও চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মোহাম্মদ আজিম, নৃবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মো. নুরুল আবছার বাবু, হাটহাজারী কলেজের ১ম বর্ষের ছাত্র মো. নুর হোসেন শাওন, একই কলেজের ২য় বর্ষের ছাত্র মো. মাসুদ রানা এবং কলেজের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম। জড়িত ৬ জনের সবাই চবি ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক উপ-গ্রুপ সিএফসি ও ভিএক্সের কর্মী। 

র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক ল্যাফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ বলেন, সিসিটিভি ফুটেজসহ বিভিন্ন তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে শনিবার রাতে রাউজানের একটা বাড়িতে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় মোহাম্মদ আজিমকে আটক করা হয়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হাটহাজারীর বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে বাকি ৩ জনকে আটক করা হয়। 

র‌্যাব অধিনায়ক বলেন, ওইদিন আনুমানিক ১০টা ১৫ মিনিটে আসামিরা ওই ছাত্রী ও তার বন্ধুর পথ রোধ করে। এত রাতে বাইরে থাকার কারণ জানতে চেয়ে মারধর শুরু করে। তখন ছাত্রীটির বন্ধু বাধা দিলে তাকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি ও লাথি মেরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে। এক পর্যায়ে আসামিরা ভুক্তভোগী ও তার বন্ধুকে জোর করে বেগম ফজিলাতুন নেছা হলের পেছনে নিয়ে যায়। আসামিরা ওই ছাত্রীর বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয় ও অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে।  র‌্যাব জানায়, এই ঘটনায় নেতৃত্ব দেয় মোহাম্মদ আজিম।

আর ওই ছাত্রী ও তার বন্ধুকে আটকানোর পর প্রথম মারধর করে বহিরাগত শাওন। আর এই শিক্ষার্থীর বিবস্ত্র দৃশ্য নিজের মোবাইলে ধারণ করে আজিম। এ সময় আজিম পরবর্তীতে তার সঙ্গে  শারীরিক সম্পর্ক না করলে ধারণকৃত ভিডিও ভাইরাল করে দেয়া হবে বলে হুমকি দেয়। তারা ওই ছাত্রী ও তার বন্ধুকে প্রায় এক ঘণ্টা আটক রেখে দুটি মোবাইল সেট ও নগদ ১৩ হাজার ৭০০ টাকা ছিনিয়ে নেয়। এদিকে ঘটনার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের নাম উঠে আসে। রুবেলের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ, ঘটনায় জড়িতরা তার অনুসারী। এ ছাড়া ভুক্তভোগী সেই ছাত্রী ঘটনার পরের দিন প্রক্টরের কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দিতে গেলে সেখানে উপস্থিত রুবেল তাকে সম্মানহানির অভিযোগ দিয়ে বাধাও দেন। এসব কারণে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশও পাঠায়।

তবে রুবেলের দাবি, ভিকটিক ছাত্রী তার কর্মী। ঘটনার পর সে (ভিকটিম) তাকে প্রথম ফোন দেয়। তাই সে তাকে সহযোগিতা করেছে। বিষয়টি এখন ভুলভাবেই উপস্থাপন করা হচ্ছে। আর আটক ৪ জনের মধ্যে শুধুমাত্র আজিম তার সিএফসি গ্রুপের কর্মী। আর বাকি ৩ জন ভিএক্স গ্রুপের কর্মী। এই ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি কতে মিছিল মিটিংও করেছেন রুবেল। এদিকে ছাত্রী হেনস্তার ঘটনায় জড়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আজীবন বহিষ্কার করা হবে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। তিনি বলেন, আমাদের ছাত্রী হেনস্তার ঘটনায় জড়িত অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আজকালের মধ্যে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn