১৯৭১ সালে চার বছর বয়স ছিল এমন একজনকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। আদালতের এ নির্দেশের কথা জানিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরিতে নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন মন্ত্রী। আগামী তিন দিনের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে বলেও জানান তিনি। সোমবার (১৩ নভেম্বর) স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের বৈঠকের শুরুতে প্রশ্নোত্তর পর্বে মন্ত্রী একথা জানান। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফিরোজ রশীদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় যার বয়স চার বছর ছিল, তাকেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে আদালত আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, তাদের ২৩ বছরের এরিয়ার ভাতা দিতেও বলা হয়েছে। চার বছরের শিশুকে কী করে আমরা মুক্তিযোদ্ধা বানাবো? আদালতের এমন আদেশে আমরা বিব্রত হচ্ছি। আমরা কী করবো, কোথায় যাব– সেই জায়গা পাচ্ছি না। তবে, আমরা বাস্তবতাগুলো আদালতে বলেছি। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি, এই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবো।’

আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মন্ত্রী বলেন, ‘তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা কি না, তা দেখে আদালত যদি আদেশ দেন, তাহলে সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।’ মন্ত্রী আরও বলেন, তার আমলে বীরাঙ্গনা, মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী-কলাকৌশলী ও বিদেশে যারা জনমত সৃষ্টিতে কাজ  করেছেন এবং মেডিক্যাল কোরের সদস্য ছাড়া নতুন কাউকে মুক্তিযোদ্ধা করা হয়নি। অমুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতা নেওয়ার কথা স্বীকার করে জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম মিলনের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘অমুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধার ভাতা নেওয়াটা সত্যিই লজ্জাজনক। নতুন করে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা যাচাই-বাছাইকালে কেউ অমুক্তিযোদ্ধা প্রমাণিত হলে আমরা তাদের ভাতা বন্ধ করে দেই। কিন্তু মহামান্য আদালত যাচাই-বাছাই স্থগিত করেছেন এবং ওই অমুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। এ কারণে আমরা তাদের ভাতা দিতে বাধ্য হচ্ছি।’ মুক্তিযোদ্ধাদের অধিকারকে মৌলিক অধিকার বলে আদালতে ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে বলেও মন্ত্রী এ সময় উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা হওয়াটা মৌলিক অধিকার নয়, যিনি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, এটা তার অধিকার। আইনের ভুল ব্যাখ্যার কারণে সমস্যায় পড়ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কেউ প্রকৃত অর্থে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন কিনা আদালত যদি তা দেখে আদেশ দেন, তাহলে আমরা এই সংকট থেকে মুক্তি পেতে পারি।’

জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ নোমানে প্রশ্নের জবাবে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের (১৯৯৬-২০০১) আমলে মুক্তিযোদ্ধা বলতে লাল বার্তায় যাদের নাম ছিল, তাদেরই বোঝাতো। তবে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, সেখানে কিছু ত্রুটি রয়ে গেছে। এরপর বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে সরকারি কর্মকর্তাদের দিয়ে কোনও ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়াই নতুন করে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় ৩৩ হাজার জনকে অন্তর্ভুক্ত করে। যাদের অধিকাংশই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়নি। এখন এগুলো বাদ দিতে গিয়ে আমরা সমস্যায় পড়েছি। সরকারের বিরুদ্ধে ১১৬টি মামলা হয়েছে। এ কারণে সঠিক তালিকা তৈরি করতে পারছি না। এই অমুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাদ দিতে পারছি না।’ এ সময় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীকে বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে উপস্থাপনের পরামর্শ দেন। আরেক প্রশ্নের জবাবে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আগামী তিন দিনের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। কোনও মুক্তিযোদ্ধা বাদ পড়লে তারা আবেদন করতে পারবেন। পরে তা যাচাই-বাছাই করে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।’

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn