ছাতকে একজন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা দিয়ে চলছে একটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা। ৬টি পদের বিপরীতে বছরের পর বছর শুন্য রয়েছে ৫টি পদ। এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে শুন্যপদগুলো পূরণ না করে স্বাস্থ্যসেবায় চরম ব্যঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। তবোও এ বিষয় নিয়ে কর্তৃপক্ষের কোন মাথা ব্যথা নেই। নেই বিদ্যুত সংযোগ। পানিও নলকূপের অবস্থাও করুন। প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের ও অভাব রয়েছে। অথচ এ হযবর অবস্থায় স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি এবার সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে। জেলার মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব হওয়ায় হাসপাতালের একমাত্র দায়িত্বপালনকারি পরিবার পরিদর্শিকা পেয়েছেন সার্টিফিকেট ও ক্রেষ্ট।

জানা যায়, ছাতক উপজেলার ছৈলা-আফজলাবাদ ইউনিয়নের বাংলাবাজারে ১৯৮৪ইং সালে স্থাপিত হয় ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ ও স্বাস্থ্য কেন্দ্র। এ কেন্দ্রের অধীনে রয়েছে প্রায় ৪৮টি গ্রাম। ২০১৬ইং সালের গণণা অনুযায়ি এ কেন্দ্রের আওতায় রয়েছে ২৮হাজার ৯শ’ ৯৪টি জনসংখ্যা। দম্পতি ৩হাজার ৭শ’ ৮৪জন ও গর্ভবতি নারি আছেন ৩শতাধিক। এমনটি তথ্য দিয়েছেন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা পদে একমাত্র চাকুরিরত নিশা রানী মজুমদার। তিনি বলেন, ১৯৮৪ইং সালে এখানে চাকুরিতে যোগদান করেন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা পদে। এসময় ফার্মাসিষ্ট পদে যোগদান করেন মাহমুদ হাসান। তিনি যোগদান করার পর ১৯৯৮ইং সালে এখান থেকে ছাতক হাসপাতালে চলে যান। ২০১৫ইং থেকে তিনিও ডিপোটিশনে সিলেট ডিআর এস এ কর্মরত আছেন। পিয়ন পদে আফাজ উদ্দিন ২০১৪ইং সালে যোগদানের একবছর পর তিনিও ছাতক হাসপাতালে চলে গেছেন। ১৯৯৬ইং থেকে অয়া পদটি শুন্য রয়েছে। এদিকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে উপ-সহকারি মেডিকেল অফিসার পদে ডাক্তার সুনিল রঞ্জন যোগদান করেন। তার যোগানের পর ২০১৫ইং সালে তিনিও অবসরে চলে যান। এখন তিনির (পরিবার কল্যান পরিদর্শিকা) পদ ছাড়া বাকি মেডিকেল অফিসার, উপ-সহকারি মেডিকেল অফিসার, ফার্মাসিষ্ট, পিয়ন ও আয়া ৫টি পদ শুণ্য রয়েছে। অন্যান্য পদে কেউ কেউ দায়িত্ব পালন করলেও প্রথম থেকেই মেডিকেল অফিসার পদটি শুন্যের কৌটায় রয়েছে। তিনি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত উল্লেখ করে নিশা রানী মজুমদার আরো বলেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরে তিনিও অবসরে যাচ্ছেন। তিনি চলে গেলে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রটি একদম শুন্য হয়ে পড়বে। তিনি একাই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি পরিচালনা করে এবং ইউনিয়নের মানুষকে নিয়মিত চিকিৎসাসেবা প্রদান করায় গেল ১১জুলাই সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যে তার এ কেন্দ্রটি শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে। জেলার উপ-পরিচালক (ডিডি) মোজাম্মিল হক এ শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা প্রদান করে সার্টিফিকেট ও ক্রেষ্ট দেয়া হয়েছে তাকে। এক প্রশ্ন উত্তরে নিশা রানী মজুমদার বলেন, স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সব দায়িত্ব তিনি একাই সামাল দিয়ে যাচ্ছেন। প্রতি মাসে তিনি এখানে ১০/১৫টি ডেলিভারি করে থাকেন। জটিল রোগিদের উপজেলা ও সিলেট ওসমানী মেডিকেলে প্রেরণের নির্দেশ দেন। এছাড়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রতি মাসে ২৬ ধরণের ঔষধ বরাদ্ধ দিলেও আগষ্ট মাসে দিয়েছেন মাত্র ১০টি আইটেম। এতে রোগিদের চাহিদা মেঠাতে সম্ভব নয়। এলাকার একাধিক লোকজনের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, ছৈলা অফজলাবাদ ইউনিয়নের একমাত্র পরিবার কল্যাণ ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি স্থাপিত হওয়ার পর থেকে মেডিকেল অফিসারসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো শুন্য রয়েছে। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি কোন প্রকার গুরুত্ব দিচ্ছেন না। এতে রিতিমত স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন ইউনিয়নের ২৯হাজার মানুষ। উপ-সহকারি মেডিকেল অফিসার অবসরে যাওয়ার পর দু’বছরের অধিক সময় ধরে তার পদটি শুন্য রয়েছে। ফার্মাসিষ্টও নেই ১৯বছর ধরে। শুধু পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা দিয়ে চলছে স্বাস্থ্যসেবার কার্যক্রম।

যুগ যুগ ধরে গুরুত্বপূর্ন পদশুন্য এ পরিবার কল্যাণ ও স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রটি জেলার মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বে অবধান কেমনে সম্ভব ইহা রিতিমত হাস্যকর বলে স্থানীয় অনেকেই মরে করছেন। তারা বলেন, এখানে দায়িত্বগ্রহণের প্রায় ১৪বছর পরে ছাতকে চলে যান ফার্মাসিষ্ট মাহমুদ হাসান। দায়িত্বপালন না করেই ছাতক হাসপাতালে অবস্থান করে দীর্ঘদিন তিনি বেতন ভাতা উত্তোলন করেছেন। এর ন্যায় পিয়ন আফাজ উদ্দিনসহ প্রায় সকলেই। এ ব্যাপারে সাবেক ইউপি সদস্য আবু তাহের মো. ছিদ্দিক বলেন, ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি দীর্ঘদিন থেকে অবহেলায় পড়ে রয়েছে। এখানে শুরু থেকে মেডিকেল অফিসার নেই, নেই উপ-সহকারি মেডিকেল অফিসার, ফার্মাসিষ্ট, পিয়ন ও আয়া। একমাত্র ভিজিটার দিয়ে চলছে স্বাস্থ্য সেবার কার্যক্রম। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বার বার নিবেদন করেও আজো আলোর মূখ দেখেনি এ ৪৮টি গ্রামের স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি। সমাজসেবি ছায়েদ মিয়া বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ডাক্তার শূন্য এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির খবর কেউ রাখছেন না। হাসপাতালের নির্ধারিত কোর্টার থাকলেও এখানে নিয়মিত কেই থাকছেন না। দীর্ঘদিন থেকে একমাত্র পরিদর্শিকা দিয়ে চলে আসছে চিকিৎসা সেবা। দ্রুত এ সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তিনি আহবান জানান। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গয়াছ আহমদ বলেন, হাসপাতালের মা ও শিশু ভবনটিতে পানি পড়ছে। সম্পূর্ণ অকেজু রয়েছে নলকূপটি। পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিদ্যুত থাকলেও এখানে নেই বিদ্যুত ব্যবস্থা। ১০ আগষ্ট উপজেলা মাসিক উন্নয়ন ও সমন্বয় সভায় চেয়ারম্যান এসব সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn