সিলেট :: সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে গত ২৫ নভেম্বর সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার শ্রীধরপাশা গ্রামে নিরীহ নূর আলী হত্যাকান্ড নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের পরিপ্রেক্ষিতে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেছেন একই গ্রামের সরোয়ার আলম কোরেশী। বুধবার দুপুরে সিলেট জেলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সরোয়ার আলম কোরেশী বলেন, ‘গত ২৫ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলনে নূর আলীর স্ত্রী পরিচয়ে জনৈক লিলু বেগম যে বক্তব্য দিয়েছেন আমরা তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। গণমাধ্যমে এই হত্যাকান্ডের আদ্যপান্ত প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনমূলকসংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর প্রকৃত সত্যকে আড়াল করতে এই সংবাদ সম্মেলনে চরম মিথ্যাচার, কাল্পনিক ও বানোয়াট বক্তব্য রেখে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দেয়ার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। তার পুরো বক্তব্যটাই মিথ্যাচার আর বিভ্রান্তিতে ভরা।’ তিনি বলেন, ‘শ্রীধরপাশা গ্রামে আমাদের কোরেশী পরিবারে বসবাস। আমাদের দাদা উমরা মিয়া কোরেশীর উদ্যোগে গ্রামবাসীর সহযোগিতায় প্রায় ৬৫ বছর আগে গ্রামে দারুল উলুম মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। উমরা মিয়া মারা যাওয়ার পর আমাদের কোরেশী পরিবারবর্গ মাদ্রাসাটির দেখভাল ও পরিচালনা করে আসছেন। গ্রামের একটি কুচক্রী মহল ঈর্ষান্বিত হয়ে দীর্ঘদিন থেকে আমাদের পরিবারের এই কল্যাণমূলক কর্মকান্ডকে নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার চেষ্টা শুরু করে। গত ১৬ সেপ্টেম্বর মাদ্রাসার নিলাম শেষে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফয়সল, আব্দুল মালিক গংরা অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে একদল সন্ত্রাসী বাহিনী আমাদের বাড়িতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুরু করে উপর্যুপরি গুলিবর্ষণ-অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট। তাৎক্ষণিক এই জঘন্যতম ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় হতবাক ও স্তম্ভিত হয়ে পড়ে এলাকাবাসী। পুরো ঘটনা ছিলো পূর্ব পরিকল্পিত ও সাজানো। ফয়সল ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা অস্ত্রশস্ত্রসহ গোপনে প্রস্তুতি নিয়ে এ হামলার ঘটনা ঘটায়। ঘটনার দিন নিলাম শেষে হঠাৎ করে ফয়সল ও তার সন্ত্রাসীরা কিছু বুঝে উঠার আগেই জাবেদ কোরেশী ও আশরাক কোরেশীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তখনি আব্দুল মালিক ও ফয়সলের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা গুলিবর্ষণ করতে করতে বাড়ি ঘেরাও করে ফেলে।’

‘এ সময় গুলির মুহুর্মুহু আওয়াজে নারী-শিশুরা প্রাণ ভয়ে চিৎকার শুরু করে। সন্ত্রাসীরা বাড়ির আঙিনায় দোকানপাট ভাঙচুর, ধানের মিলে আগুন ধরিয়ে দেয়। উপায়ন্তর না পেয়ে জাবেদ আলম কোরেশী তার লাইসেন্সধারী বন্দুক হাতে নিয়ে আত্মরক্ষার্থে বাড়ির দেয়ালে গুলি ছুঁড়েন। ঘটনার পর আমরা জানতে পারি ফয়সল ও তার বাহিনীর এলোপাথাড়ি গুলিবর্ষণে নূর আলীসহ উভয় পক্ষের অনেকেই আহত হন। তবে নূর আলীর হাতে ছিটা গুলি লাগলেও তেমন গুরুতর আহত হননি তিনি। ঘটনার পর উভয় পক্ষ এ নিয়ে মামলা দায়ের করে। আমাদের মামলায় ঘটনার মূল নায়কদের আসামী করলেও নূর আলীকে আমরা আসামী করিনি। কারণ নূর আলী আমাদের কোন প্রতিপক্ষ নয়।’ সরোয়ার আলম কোরেশী অভিযোগ করে বলেন, ‘সংবাদ সম্মেলনে নূর আলীর স্ত্রীর পরিচয়ে লিলু বেগমের বক্তব্যে ফয়সলকে আত্মীয় হিসাবে উল্লেখ করেছেন। অথচ কোন কালেই ফয়সল এবং নূর আলীর মধ্যে কোন আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল না। নূর আলীর বাড়ি দক্ষিণ সুনামগঞ্জের আমরিয়া গ্রামে। ঘটনার দিন উপস্থিত নূর আলীর হাতে ছিটা গুলি লাগে। চিকিৎসার জন্যে গ্রাম থেকে হেঁটে এসে মোহাম্মদগঞ্জ বাজারে লেগুনায় উঠে জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। অনেকেই সেদিন তার হাতে ছিটাগুলির চিহ্ন দেখেছেন। বুকে পিটে কোথাও কোন গুলির চিহ্ন পায়নি। জেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হতে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে ভর্তি করানো হয় তাকে। এই সুযোগে মানবতার দোহাই দিয়ে ফয়সল তার পাশে দাঁড়িয়ে চিকিৎসার ব্যয়ভার গ্রহণের দায়িত্ব নেয়। চতুর ফয়সল নূর আলীকে সহজেই আয়ত্বে নিয়ে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিজেই ভর্তি করে দেন। নূর আলীকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দুইদিন পর ছেড়ে দেয়। কিন্তু ফয়সল এর আরো দুইদিন পরে তাকে ফের ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিলে ১১ দিনের মাথায় পেটে অপারেশনে তার মৃত্যু হয়। প্রশ্ন হলো নূর আলীকে দুইদিনের মাথায় ছাড় দেয়ার পর পুনরায় তাকে কেন ভর্তি করানো হলো। কিংবা গুরুতর আহত হলে প্রথমবার তাকে কেন আইসিইউতে ভর্তি করানো হলো না। পুলিশ ফয়সলকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে খুনের প্রকৃত রহস্য বেরিয়ে আসতে পারে বলে আমাদের বিশ^াস।’ ‘সংবাদ সম্মেলনে ফয়সলকে নির্দোষ প্রমাণ করতে কথিত লিলু বেগম নূর আলীর স্ত্রীর পরিচয় দাবী করে বক্তব্য দেন। অথচ শ্রীধরপাশা গ্রামে সংঘটিত গুলিবর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, সন্ত্রাসী হামলা, দোকান লুটসহ যাবতীয় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও নূর আলী হত্যাকান্ডের মূল নায়ক হচ্ছে অবৈধ অস্ত্রধারী এই ফয়সল। সে আমাদের মামলার প্রধান আসামী। তাকে যত দ্রæত সম্ভব গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিলে নূর আলী হত্যার প্রকৃত খুনের রহস্য জানা যাবে।’

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn