পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্রম ব্যক্তি ছিলেন নুর মিয়া। বাবা নেই। মা অসুস্থ। আছেন স্ত্রী ও তিন শিশু সন্তান। মাছ ধরে এই পরিবারের জীবিকা নির্বািহ করতে হতো তাকে। গত ১৬ সেপ্টেম্বর জগন্নাথপুরের শ্রীধরপাশায় মাদ্রাসার জমি নিলামকে কেন্দ্র করে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হন নুর মিয়া। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে এই পরিবারে এখন চলছে মাতম। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে পড়েছেন সবাই। এমন ঘটনার জন্য যারা দায়ী তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছেন নুরের মা ও স্ত্রী। জগন্নাথপুর উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নের উসনপুর গ্রামের বাসিন্দা নুর মিয়া বাবা মুক্তিযোদ্ধা তছকির আলী। ছোটবেলায় পিতাকে হারিয়ে শ্রবণ প্রতিবন্ধি মাকে নিয়ে নানার বাড়ীতে (শ্রীধরপাশা গ্রামে) আশ্রয় নেন নুর। অভাবের কারণে চতুর্থ শ্রেণির পর আর পড়া হয়নি।  ছয় বছর আগে নুরের বিয়ে হয় মামাতো বোন শ্রীধরপাশা গ্রামের মৃত উমদাই মিয়ার মেয়ে হাবিবা বেগমের সাথে। ফাইজা বেগম (৫), সোহাগ (৩) ও অলিদ (দেড় বছর) নামে তিন সন্তান রয়েছে তাঁর। জেলের কাজ করে এই পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পাগলা বাজারে যান নুর। সেখান থেকে দুপুর সাড়ে বারোটায় নানা বাড়ি শ্রীধরপাশায় আসেন। এসময় মামা আব্দুল হামিদের খোঁজ নিতে তাঁর ঘরে গেলে মামী জানান- মামা মাদ্রাসার জমি নিলামে গেছেন। এ খবর পেয়ে নুর মাদ্রাসা দিকে যাওয়া শুরু করলে রাস্তায়ই তার গায়ে গুলি লাগে। সাথেসাথে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন নুর। পরে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তাকে আনা হয় সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১১দিনের মাথায় মারা যান তিনি।  এ সংবাদ এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে নুর পরিবারসহ এলাকাবাসীর মধ্যে শোকের মাতম দেখা দেয়। রোববার (১ অক্টোবর) দুপুরে শ্রীধরপাশা গ্রামে গেলে নুরের পরিবারসহ প্রতিবেশীরা জানান, নুর ছিলেন এই পরিবারের আহার একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার আয় থেকে পরিবারের ৬ সদস্যের ভরণ পোষণ চলত। তাকে হারিয়ে একেবারে পথে বসেছে পুরো পরিবার।

নুরের শ্রবন প্রতিবন্ধী মা মমতা বিবি ছেলে হত্যার জন্য প্রতিবেশী জাবেদ কোরেশীকে দায়ী করে এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সকলের ফাঁসি দাবি করেন। তিনি আহাজারী করে বলেন, ‘আমরা অসহায়। আমাদের দেখাশুনা করত ভরণ-পোষণ দিত আমার ছেলে নুর। আমি আমার সন্তান হত্যাকারী জাবেদ, আশরাফসহ জড়িতদের ফাঁসি দেখে মরতে চাই। নুরের শিশু সন্তান ফাইজা ও সোহাগ বলে, আমরার আব্বারে যারা মারছে তারার বিচার চাই। আমরারে আর কে বাজার তাইকা চকলেট আইন্না দিবে। আমরা এখন আব্বা কইয়া ডাকতাম কারে। এঘটনায় জাবেদসহ অন্যান্য পলাতক আসামীদের গ্রেপ্তার করতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জগন্নাথপুর থানার উপ পরিদর্শক হাবিবুর রহমান।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn