বার্তা ডেস্ক:: বিংশ শতাব্দীর অন্যতম জনপ্রিয় বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ কাজী নজরুল ইসলাম। তার কবিতায় বিদ্রোহী মনোভাবের প্রতিচ্ছবির কারণে তাকে বিদ্রোহী কবি বলে আখ্যায়িত করা হয়। বাংলা সাহিত্য, সমাজ ও সংস্কৃতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব এ কবি পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ- দুই স্থানেই সমানভাবে সমাদৃত। ১৮৯৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের চুরুলিয়া গ্রামে এই মহান কবির জন্ম। আজ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২০তম জন্মদিন। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর নানা প্রান্তে আজ পরম শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় যৌবনমুখর এ কবির জন্মদিন পালন করা হবে। চুরুলিয়ার জনৈক সূফী সাধকের মাজারের খাদেম ও উক্ত মাজারের নিয়ন্ত্রণাধীন মসজিদের ইমাম কাজী ফকির আহমদ তার পিতা। ফকির আহমদের মৃত্যুর (১৩১৪) পর কাজী পরিবার চরম দারিদ্র্যের মধ্যে পতিত হয়। দশ বছর বয়সে গ্রামের মক্তব থেকে নিম্ন প্রাইমারী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ (১৩১৬) হন। সংসারের চাপে ঐ মক্তবেই তিনি একবছর শিক্ষকতা করেন। বার বছর বয়সে লেটোর দলে যোগদান এবং দলের জন্য পালাগান রচনা করেন। একজন দূরন্ত স্বভাবের বালক হিসেবে তিনি গ্রামবাসীর কাছে পরিচিতি লাভ করেন। তাঁর জ্বালাতন থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য গ্রামের কয়েকজন মাতব্বর ব্যক্তি কর্তৃক তাকে রাণীগঞ্জের কাছে শিয়ারশোল রাজ স্কুলে ভর্তি করা হয়। স্কুলের বাঁধা ধরা জীবনের প্রতি তিনি অনাগ্রহ প্রদর্শন করেন। সপ্তম শ্রেণীতে ওঠার কিছুদিন পর ১৩/১৪ বছর বয়সে স্কুল ত্যাগ করেন ও বাড়ি থেকে পলায়ন করেন।

কাজী নজরুল ছিলেন সেই মুষ্টিমেয় কবিদের একজন, যিনি রবীন্দ্র প্রভাবের বাইরে বাংলা কবিতায় এক নতুন যুগের সূচনা করেছিলেন। তখন ভারতসহ পৃথিবীর নানা দেশে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন চালু ছিল। তিনি প্রকৃতপক্ষে গোটা ঔপনিবেশিক ব্যবস্থাকেই চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। এদিক দিয়ে নজরুল একক এবং অনন্য। বিশ্বসাহিত্যে তার মতো কবি বাসত্মবিকই খুব কম। তবু কেউ কেউ কাজী নজরুলের সঙ্গে রুশ কবি মায়কোভস্কি ও তুরস্কের কবি নাজিম হিকমতের কাব্যের মিল খুঁজে পান। সবকিছু মিলিয়ে নজরুল এক বিচিত্র ও বহুমুখী প্রতিভা। নজরুল একদিকে ছিলেন বিদ্রোহী, অন্যদিকে মানবতাবাদী। তার গানগুলো জাতিকে জাগরণের পথে প্রেরণা জুগিয়েছে। ইসলামী গানের পাশাপাশি তিনি বেশ কিছু শ্যামাসঙ্গীত রচনা করেছিলেন। কিন্তু কোথাও উদার মানবতাবাদকে বিসর্জন দেননি। তিনি সারাজীবনই মানবতার সাধনা করেছেন। কাজী নজরুলের কবিতা, গান ও গদ্য উপমহাদেশে মানুষকে সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেছে। সাংবাদিক হিসেবে নজরুল অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন।

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম বিস্ময়কর প্রতিভা নজরুল কখনই ধন-সম্পদের প্রতি আগ্রহী ছিলেন না। বলা চলে দারিদ্র্য ছিল তার চিরকালের সঙ্গী। তিনি জগতের দরিদ্র ও বঞ্চিত মানুষের দুঃখ-কষ্ট গভীরভাবে অনুভব করেছিলেন।দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার কারণে হঠাৎ করেই তার সাহিত্য সাধনা স্তব্ধ হয়ে যায়। এরপর তিনি দীর্ঘকাল বেঁচেছিলেন। কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা-গান ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের অন্যতম প্রেরণা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কবিকে সসম্মানে ঢাকায় নিয়ে আসেন এবং তাকে বাংলাদেশের জাতীয় কবির সম্মান দেন। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট ঢাকায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn