মারুফ খান মুন্না :: জনপ্রিয় লেখক ডঃ জাফর ইকবালকে উগ্র মৌলবাদীরা নাস্তিক আখ্যা দিয়ে বারবার হুমকি দিয়ে আসছিলো। যদিও জাফর ইকবাল নাস্তিক কি না এ বিষয়ে তারা কোন তথ্য প্রমাণ ছাড়াই দীর্ঘদিন প্রোপাগান্ডা চালিয়ে আসছে। সম্প্রতি জাফর ইকবালের উপর হামলাকারী উগ্রপন্থি যুবক ফয়জুরও জাফর ইকবালকে ইসলাম বিদ্বেষী আখ্যা দিয়ে হামলা চালায় শাবি ক্যাম্পাসেই। কিন্তু কোন তথ্য প্রমান ছাড়া ধর্মান্ধ হয়েই এ হামলা চালিয়েছে সে এমনটাই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। যে বই নিয়ে নাস্তিক উপাধি দিয়ে জাফর ইকবালের উপর হামলা হয়েছে আদৌ সে বইয়ে ইসলাম বিদ্বেষী কিছু আছে কি না সেটা না জেনেই অনেকেই তাকে নাস্তিক আখ্যা দিয়েছেন। এ বিষয়ে তার স্ত্রী ইয়াসমিন হক জানান, তিনি বলেন, ‘সবাই ভাবছে ইসলামের জন্য জাফর ইকবালের উপর হামলা হয়েছে। যে বইটির কথা বলা হয়েছে সেটির ২০০ পৃষ্টার একটি লাইনও সে ইসলাম বিদ্বেষী লিখেনি। এরপরেও প্রতিষ্টিত করা হচ্ছে জাফর ইকবাল ইসলামের বিরুদ্ধে লিখে, সে নাস্তিক। কিন্তু আসল কারণ হচ্ছে ওর মুখ বন্ধ করা। জাফর ইকবাল তো মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের এজন্য ওর মুখ বন্ধ করতেই এতোসব প্রোপাগান্ডা।’
জাফর ইকবাল বুধবার বিকালে শাবি ক্যাম্পাসের মুক্ত মঞ্চে ‘সাদাসিধে কথা’ শীর্ষক অনুষ্টানে বক্তব্য রাখেন তিনি। এসময় তার পাশে থাকায় তিনি সহকর্মী শিক্ষক এবং প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দদের পাশাপাশি মহান আল্লাহপাকের কাছে কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেছেন। তিনি তাঁর বক্তৃতায় বলেন- ‘আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছেন। নিশ্চয় তিনি আমাকে দিয়ে ভালো কিছু করাতে চান। তিনি আমাকে মায়া করেছেন।’ এছাড়াও জনপ্রিয় এই লেখক তাঁর বক্তৃতায় একাধিকবার মহাগ্রন্থ আল কোরআনের আয়াত উদ্ধৃতি করেন। তাঁর উপর হামলাকারী কারাগারে থাকা যুবক ফয়জুল হাসানসহ বিপথে যাওয়া তরুণ সমাজের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন- ‘তুমি যদি একটা মানুষকে হত্যা করো তবে সমগ্র মানবজাতিকে হত্যা করলে। কোরআন শরিফে এই মহান বাণী রয়েছে আছে। যারা তোমাকে বুঝাচ্ছে তারা বিভ্রান্ত করছে।’ তিনি ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তোমরা আরাম আয়েশে থেকে এই যুব সমাজকে এই তরুণদের ব্রেইন ওয়াশ করে, ইসলামের দোহাই দিয়ে এদের বিপথে ঠেলে দিচ্ছো। অথচ নিজেদের সন্তান সন্ততিদের ঠিকই শিক্ষা দীক্ষা দিয়ে মাণুষ করছো।’ তিনি বলেন, ‘আজ যে ছেলেটা আমার উপর হামলা করলো, তার বাবা-মা জেলে, তার ভাই জেলে। পুরো পরিবারটা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে, তার পাশে কেউ নেই। অথচ, কাউকে খুন করলেই শর্টকাটে বেহেশতে যাওয়া যায় এমন ফর্মুলা দিয়েই তোমরা ছেলেটিকে ছেড়ে দিয়েছিলে।’ তিনি আল্লাহকে স্মরণ করে বলেন, ‘আল্লাহ যেনো সবাইকে ঠিক পথে চলার বুঝ দেন।’
উল্লেখ্য, উল্লেখ্য, গত ৩ মার্চ বিকেলে ইইই ফেস্টিভাল চলাকালীন সময়ে ছুরিকাহত হন ড. জাফর ইকবাল। ঐদিন রাত থেকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।গতকাল তাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়া হয়। বিকাল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে (হামলার স্থান) সব শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন বরেণ্য লেখক ও অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল। বুধবার বিকালে শাবি ক্যাম্পাসের মুক্ত মঞ্চে তাঁকে বরণ করে নেয়ার জন্য ‘সাদাসিধে কথা’ শীর্ষক অনুষ্টানে তিনি এ ধন্যবাদ জানান।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn