খালিল রহমান-

বাবা নেই। মাকে নিয়ে দুঃখের সংসার। অনেক কষ্ট করে চালিয়েছেন পড়ালেখা। কাজ করতে হয়েছে নৌকার মাঝি হিসেবেও। তিনি এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় ৪৪তম স্থান অধিকার করেছেন। এখন কীভাবে ভর্তি হবেন, সে দুশ্চিন্তা পেয়ে বসেছে তাঁকে। দরিদ্র এই মেধাবী শিক্ষার্থীর নাম রোমায়েল আহমেদ। তাঁর বাড়ি সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামে। বাবা সনজব আলী কৃষক ছিলেন, মারা গেছেন ২০১৩ সালে। এখন মা তাহমিনা বেগম আছেন তাঁর সঙ্গে। গতকাল বুধবার বিকেলে কথা হয় রোমায়েলের সঙ্গে। জানা গেল, তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। বোনদের বিয়ে হয়েছে। দুই ভাই বিয়ে করে আলাদা থাকেন।

রোমায়েল আহমেদ বলেন, তিনি লক্ষ্মীপুর তাওয়াকুল দাখিল মাদ্রাসা থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৪.৮৮ পেয়ে দাখিল পাস করেছেন। ভর্তি হন সিলেট সদর উপজেলার সফির উদ্দিন হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে। সেখানে বিনা বেতনে পড়তে দেওয়া হয় তাঁকে। কলেজের পাশে জুগিরগাঁও গ্রামের আনোয়ার মিয়ার বাড়িতে জায়গির থেকে লেখাপড়া করছিলেন। এইচএসসি পরীক্ষার ছয় মাস আগে বড় ভাই ও এক মাস আগে মেজ ভাই আলাদা হওয়ার পর মাকে নিয়ে বেকায়দায় পড়েন রোমায়েল। একপর্যায়ে পরীক্ষা না দিয়ে চলে আসতে চান বাড়িতে। তখন গ্রামের বড় ভাই শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আলী আজম তাঁকে উৎসাহ দিয়ে পরীক্ষা দেওয়ান। পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি এসে সংসার চালাতে গ্রামের পাশে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের শিক্ষাতরিতে তিন মাস মাঝির কাজ করেন রোমায়েল। সেই সঙ্গে চলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি। এর মাঝে প্রকাশিত ফলে তিনি জিপিএ-৫ পান। ঢাকায় ভর্তি পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় তাঁর মা প্রতিবেশীর কাছ থেকে দুই হাজার টাকা ধার করে দেন। সে টাকা এখনো শোধ হয়নি। পরীক্ষার সময় আলী আজম ঢাকায় থাকার ব্যবস্থা করে দেন।

মুঠোফোনে রোমায়েল আহমেদ বলেন, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় ৪৪তম হয়েছেন। এখন আইন বিষয়ে পড়াশোনা করতে চান। পড়াশোনা শেষ করে বিচারক হতে চান। কিন্তু তা আদৌ হবে কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন। তিনি আরও বলেন, ‘২২ অক্টোবরের মধ্যে ভর্তি হতে হবে। আমার হাতে কোনো টাকাপয়সা নেই। কীভাবে ঢাকায় যাব, ভর্তি হব, কোথায় থাকব, কীভাবে লেখাপড়া চালাব—বুঝতে পারছি না।’ জানতে চাইলে সফির উদ্দিন হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজির শিক্ষক তনয় কুমার সরকার  বলেন, ‘রোমায়েল খুব গরিব, বিনয়ী ও মেধাবী ছেলে। আমরা তাঁর কৃতিত্বের কথা জানি। সে খুব কষ্ট করে এত দূর এসেছে। সুযোগ পেলে সে আরও অনেক দূর যাবে।’

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn