বিশেষ প্রতিনিধি : নিজেরা অবৈধভাবে চাঁদা আদায় করলে অসুবিধা নেই। আর সরকারকে রাজস্ব দিয়ে বৈধভাবে টোল আদায় করলে সমস্যা। বৈধ ইজারাদারদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করে মিথ্যা অভিযোগ করে ইজারাদারকে ক্ষতিগ্রস্থ করে বৈধ ঘাট ইজারা বিহীনভাবে ভোগ করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন জামালগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি নূরুল হক আফিন্দী ও তার ভাই বিএনপি নেতা এমদাদুল হক আফিন্দীসহ একটি গডফাদারচক্র । অন্যায় অপতৎপরতার অংশ হিসেবে এই চক্রটি বৈধ ইজারাদারের বিরুদ্ধে কিছু বিএনপি কর্মীদের সহায়তা নিয়ে একটি লোকদেখানো মানববন্ধন করায়। তথাকথিত ঐ মানববন্দনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সরকারের দেয়া ইজারাদারকে বাধাগ্রস্থ করে নিজেরা বিনারসিদে চাঁদা আদায়ের পথ সুগম করা।

অনুসন্ধানে জানা যায়,১৪২৮ বাংলা সনের জন্য জামালগঞ্জ উপজেলা থেকে ৫০ লক্ষ টাকা ভ্যাট টেক্স সহ ৬০ লক্ষ টাকা সর্বোচ্চ রাজস্ব দিয়ে ইজারাপ্রাপ্ত হন দূর্লভপুর গ্রামের ওয়াহেদ আলী। গত ১ লা জুন তারিখে দখল সমজিয়ে পেয়ে সরকারী বিধি মোতাবেক টোল আদায় করে যাচ্ছেন তিনি। এই ঘাটটি গতবছরও ইজারা হয়েছে একইভাবে টোলট্যাক্স আদায় হয়েছে। ঐ ইজারাদারদের বিরদ্ধে কোন প্রশ্ন উঠেনি বা মানববন্ধন হয়নি কেননা এই অবৈধ গডফাদারচক্র গতবার ইজারাদার ছিল। এই ঘাটটি কমপক্ষে বিগত ৩৫ বৎসর যাবত ইজারা প্রদান করা হচ্ছে কখনও প্রশ্ন উঠেনি । কথিত এ মানববন্ধন বৈধ ইজারাদারকে সরকারী রাজস্ব আদায়ে বাধা প্রদানের একটি অবাঞ্চিত পদক্ষেপ মাত্র। বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য বিএনপি সভাপতির নেতৃত্বে একটা অপচেষ্টা বলা যেতে পারে। মানববন্দনের আরেকটা কারন হল নিজেরা চাঁদাবাজী করে বৈধ ইজাদারদের উপর দোষ চাপানো।

অনুসন্ধান করে আরো জানা যায়, গত দুই সপ্তাহ যাবত বিএনপি নেতা এমদাদুল হক চাঁদা আদায়ের কোনও প্রকার বৈধতা না থাকার পরও পেশিশক্তির জোরে খালি নৌযান থেকে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা করে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করছেন। এমনকি নদীতে চাঁদাবাজিতে এমদাদুল হক আফিন্দীর সহযোগী হয়ে চাঁদাবাজি করছেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম আফিন্দী রাজুসহ তার আরও ৫-৬ জন সহযোগী। গত দুই সপ্তাহ ধরে এমন চাঁদাবাজি চলমান বলে জানান ভুক্তভোগীরা। বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) ভোররাতে চাঁদাবাজির শিকার নৌযান শ্রমিকরা জানান,সুরমা এবং রক্তি নদী দিয়ে চলাচলকারী বালু ও পাথরের খালি নৌযান,চলমান নৌযান, মালামাল বুঝাই করা নৌযান থেকে পৃথক ৩টি ছোট ট্রলারে করে এমদাদুল হক আফিন্দীর নেতৃত্বে নৌকাপ্রতি দেড় থেকে দুই হাজার টাকা হারে চাঁদা আদায় করছেন স্থানীয় যুবক মিনহাজ আফিন্দী,সালেহ আহমদ আফিন্দী,আব্দুর রহিম ও জয়নুল হক প্রমুখসহ প্রায় ১৮ জন চাঁদাবাজ। চাঁদা না দিলে নৌযান শ্রমিকদের মারধরও করার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

রোমেনা ১ নামক বাল্কহেড নৌকার মাঝি আবুল কালাম বলেন, রক্তি নদীর মোহনায় সেতুর কাছে ছোট একটি ট্রলারে করে এসে ৫-৬ জন যুবক দেশীয় অস্ত্র হাতে নিয়ে নৌকার গতিরোধ করে। এমদাদুল হকের কথা বলে চাঁদা দাবি করে তারা। রসিদ ছাড়া চাঁদা দিতে রাজী না হওয়ায় চাঁদাবাজরা ফিল্মিস্টাইলে আমাকে মারধর করতে থাকে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়। জীবন বাঁচাতে বাধ্য হয়ে তাদেরকে দুই হাজার টাকা চাঁদা দেন ঐ নৌকার চালক। তারা বলেন,আমরা হাজী এমদাদুল হকের লোক এমনকি হাজী এমদাদুল হক আমার সাথে ফোনে কথাও বলেন তার বাহিনীকে চাঁদা দেয়ার জন্য।

জামালগঞ্জের সাচনাবাজার ইউনিয়নের দূর্লভপুর গ্রামের ব্যবসায়ী জিয়াউল হক। তিনি বলেন, রসিদ দিয়ে টাকা নেয়ার কথা বললে চাঁদাবাজরা আমার নৌপরিবহনে থাকা তিনজনকে বেদম কিলঘুষি মেরে বলে এই কিলঘুষিই হচ্ছে রসিদ। এমদাদুল হক আফিন্দীর টাকা নিতে কোন রসিদ লাগে না। আমাদের কাছ থেকে দেড় হাজার টাকা চাঁদা নিয়ে যায় সশস্ত্র যুবকরা। বৈধ ইজারাদার ওয়াহেদ আলী বলেন, এমদাদুল হক তার দলবল নিয়ে নদীতে এসে নৌযান থেকে দেড় দুই হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করেছেন। আমি বিষয়টি প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। অভিযোগের ব্যাপারে,গত এক সপ্তাহ যাবত লাগাতারভাবে সুরমা এবং রক্তিনদীতে টাকা উত্তোলনের কথা স্বীকার করে জামালগঞ্জ থানার দূর্লভপুরগ্রামের মৃত আব্দুল মন্নান আফিন্দীর পুত্র এমদাদুল হক আফিন্দী বলেন,আমি ব্যাক্তিগতভাবে নয় বিআইডব্লিউটি এর নামে কালেকশন করে যাচ্ছি।

নয়াহালট গ্রামের হাসান মাহমুদ ওরফে হাছিন মিয়া হচ্ছেন বিআইডব্লিউটি এর প্রকৃত ইজারাদার আমি তার ব্যাবসায়ী অংশীদার মাত্র। প্রতিফুট ২৫ পয়সা হারে সাচনাবাজার থেকে নোয়াগাও বাজার পর্যন্ত বালুপাথর লোড আনলোডের বার্দিং চার্জ যথানিয়মে আদায় করেন বলে স্বীকার করেন বিএনপি নেতা এমদাদুল হক আফিন্দী। তিনি আরো বলেন,কাগজেপত্রে হাসান মাহমুদ ইজারাদার হলেও আমি তার সাথে ব্যবসায়ীক অংশীদার হিসাবে বার্দিং চার্জ আদায়ে তাকে সহযোগিতা করে যাচ্ছি। আমি যদি তার অংশীদার না হতাম তাহলে নদীতে কালেকশনে যেতাম না। জামালগঞ্জ থানার ফাজিলপুর গ্রামের আব্দুর রহিম ও জয়নুল হক এবং দূর্লভপুর গ্রামের আব্দুল আফিন্দীর মাধ্যমে নদীতে তিনি বিভিন্ন নৌপরিবহন থেকে টাকা উত্তোলন করে যাচ্ছেন বলে স্বীকার করেন।

বিআইডব্লিউটি এর ইজারাদার হাসান মাহমুদ জানান ,২০২১ সালের জুন মাস হতে ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত জামালগঞ্জ থেকে ভীমখালী নোয়াগাও বাজার পর্যন্ত নির্দিষ্ট এলাকা বা সুরমা নদীর ঘাটে রসিদ দ্বারা বাদিং চার্জ আদায় করেন বলে হাসান মাহমুদ বলেন, লেখাপড়ায় কাউকে ভাগীদার বা সাবলীজ দেইনি। আমি নিজেই আমার লোকের দ্বারা কালেকশন করে যাচ্ছি । বিআইডব্লিউটি এর নয়াভাবে টেন্ডার না হওয়াতে নবায়নের মাধমে সাবেক ইজারাদার হিসাবে সর্বশেষ ১৪ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা ইজারামূল্য পরিশোধ করেছি। পূর্বে ২টি নৌকায় ৮জন লোক ছিল। বর্তমানে ১টি নৌকায় চালকসহ ৪ জন লোকবল দ্বারা বৈধভাবে আমরা ইজারা কার্যক্রম চালাচ্ছি। ড্রাইভার এতরাজ ফতেহপুর,ঝুনু মিয়া ও মোজাহিদ নয়াহালট এবং শিরিন মিয়া সাচনাবাজার শাহপুর এই ৪ জন হচ্ছে আমার প্রতিনিধি। বিআইডব্লিউটি এর ইজারাদার হাসান মাহমুদ আরো বলেন,এমদাদুল হক আফিন্দী আমার ভাগীদার হওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমি তাকে আমার ইজারা অংশীদার নিয়োগ করিনি। আমি বৈধভাবে কালেকশন করে যাচ্ছি আর এমদাদুল হক আফিন্দী ও তার লোকজন বিনা রসিদে বেআইনীভাবে চাঁদা উত্তোলন করে যাচ্ছে। এর দায়িত্ব তার উপরেই বর্তাবে। নৌপুলিশ ফাড়ির এসআই রাকিবুল হাসান বলেন,আমরা নৌপথে চাঁদাবাজী বন্ধে জিরো টলারেন্স নিয়ে কাজ করছি। আমরা এখনও এ ব্যাপারে কোন অভিযোগ পাইনি অভিযোগ পেলে চাঁদাবাজী বন্ধে অবশ্যই যথাযথ ব্যাবস্থা গ্রহন করব।

জামালগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল আলম বলেন,আমরা নদীতে পুলিশ মোতায়েন করে চাঁদাবাজদের বিরদ্ধে অভিযান অব্যহত রেখেছি। নদীতে কেউ চাঁদাবাজী করলে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে আমাদের বলতে হবে। তিনি কাউকে ধরে দিতে বললে আমরা পুলিশ প্রশাসন সহযোগিতা করতে প্রস্তত আছি। বিএনপি নেতা এমদাদুল হক পুলিশের শেল্টারে চাঁদাবাজীসহ বালিপাথর বহনকারী এবং খালি নৌপরিবহন এর চালক মালিক ও ব্যবসায়ীদের মারপিট করে যাচ্ছে এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওসি সাইফুল আলম বলেন,আমি চাঁদাবাজদের শেল্টার দেই প্রশ্নই আসেনা। এমদাদুল হকের বিরুদ্ধে আমরা কোন অভিযোগ পাইনি তারপরও নদীতে চাঁদাবাজী করতে দেখলে তদেরকে হাতেনাতে আটক করতে পুলিশ পিছপা হবে না । জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত দেব বলেন,ইজারাদারদের আমরা শর্ত সাপেক্ষে ইজারা দিয়ে থাকি । শর্ত এবং চুক্তি মেনেই তারা টুলটেক্স আদায় করবে কিন্তু ইজারাবিহীন কোন ব্যক্তি বা গোষ্টি কোন ঘাট,মহাল বা নৌপরিবহনের কাছ থেকে কোন সুবিধা নিতে পারবে না। নদীতে কেউ চাঁদাবাজীর শিকার হলে থানা পুলিশে বা আদালতে অথবা আমার কাছে অভিযোগ দিলে অবশ্যই প্রতিকার পাবেন। তিনি চাঁদাবাজ যারাই হউক না কেন তাদের নাম ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার সহ সঠিকভাবে সনাক্ত করে ভূক্তভোগী ব্যাক্তি ও ইজারাদারকে লিখিত অভিযোগ দায়েরের পরামর্শ দিয়ে বলেন,আমরা ইতিমধ্যে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি এবং যেসব চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরের সাহস পাচ্ছে না সেসকল চাঁদাবাজ চক্রের বিরদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহনের চেষ্টা করবো এ নিশ্চয়তা দিতে পারি ।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn