জেল খাটলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। জর্জিয়ায় ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল পাল্টে ফেলার ষড়যন্ত্রে তাকে বুধবার জেল দেয় আদালত। তিনি প্রায় ২০ মিনিট জেলে ছিলেন।  জেলখানার ওয়েবসাইটে তার সম্পর্কে বলা হয়েছে, তিনি ৬ ফুট ৩ ইঞ্চি উচ্চতার একজন শ্বেতাঙ্গ পুরুষ। তার ওজন ২১৫ পাউন্ড ৯৭ কেজি। মাথায় স্বর্ণালী স্ট্রবেরির মতো চুল। চোখ নীল।  জেলখানায় তার কয়েদি নম্বর- পি০১১৩৫৮০৯। পরে তাকে দুই লাখ ডলারের বন্ডের বিনিময়ে আটলান্টার ওই জেল থেকে মুক্তি দেয়া হয়। মুক্তি পেয়ে তিনি একে বিচারের নামে প্রহসন বলে উল্লেখ করেন।

বুধবার জর্জিয়ার আদালতে তিনি আত্মসমর্পণ করেন। তাকে আদালত গ্রেপ্তার দেখায়। এ সময় প্রথমবার দ্রুততার সঙ্গে তার ছবি তোলা হয়। ইংরেজিতে একে বলা হয় মাগশট। এ সময় তিনি ক্যামেরার দিকে যেভাবে তাকান তা নিয়েও নানা রকম রিপোর্ট প্রকাশ হচ্ছে। তার এই মাগশটকে ঐতিহাসিক বলা হচ্ছে। কারণ, এটাই পুলিশ তাকে আসামি হিসেবে গ্রেপ্তারের পর প্রথম ছবি। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন ও সাবেক প্রেসিডেন্টদের মধ্যে তিনিই প্রথম জেলবাস করেছেন। তা অল্প সময়ের জন্য হলেও তিনি এক্ষেত্রেও ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। কারণ, ফৌজদারি অপরাধে তিনিই প্রথম জেলে গেলেন। তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা চলছে ৫ মাস ধরে।

জামিন পাওয়ার পর এক্সে (সাবেক টুইটার) ডনাল্ড ট্রাম্প পরে পোস্ট দিয়েছেন। ২০২১ সালের জানুয়ারির পর এটাই (টুইটারে) এক্সে তার প্রথম টুইট। এতে তিনি নিজের ওয়েবসাইটের ঠিকানা এবং ওই মাগশট শেয়ার করেছেন। ক্যাপশনে ইংরেজি বড় হাতের অক্ষরে লিখেছেন- ‘ইলেকশন ইন্টারফেয়ারেন্স। নেভার সারেন্ডার!’ অর্থাৎ নির্বাচনে হস্তক্ষেপ। কখনো আত্মসমর্পণ নয়।ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কর্মকর্তাদের এমন ছবির যে গ্যালারি আছে তাতে ট্রাম্পের ছবি যুক্ত হয়ে সমৃদ্ধ হলো। আগে থেকে এমন ছবি আছে ফ্রাঙ্ক সিনাত্রা, আল ক্যাপওয়ান এবং ড. মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র। ওদিকে নিজের বিরুদ্ধে মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। কারণ হিসেবে বলেছেন, তিনি আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের শীর্ষস্থানীয় প্রার্থী। আগামী বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে তিনি চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সাবেক বা ক্ষমতাসীন কোনো প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি অভিযুক্ত হবেন এমন আশঙ্কা নিয়েই বৃহস্পতিবার বিকালে নিজের প্রাইভেট জেট বিমানে করে নিউজার্সি উড়ে যান। তাকে মোটর শোভাযাত্রা সহকারে ফুলটন কাউন্টি জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই জেলে তিনি প্রায় ২০ মিনিটের মতো ছিলেন। এ সময় জেলের বাইরে অবস্থান নেন তার কয়েক ডজন সমর্থক।

জামিনে মুক্তি পেয়ে ট্রাম্প বাসার পানে পা বাড়ান। এ সময় বিমানবন্দরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ভোটের ফল চ্যালেঞ্জ করা তার এক্তিয়ারে ছিল। তিনি বলেন, আমি মনে করি নির্বাচনে জালিয়াতি করা হয়েছে। নির্বাচনকে চুরি করা হয়েছে। তবে তিনি ২০২০ সালের নির্বাচনে ব্যাপকভাবে ব্যালট জালিয়াতির দাবি প্রমাণ করতে পারেননি। তবু বলেন, এই ফলকে চ্যালেঞ্জ জানানোর সব অধিকার আমার থাকা উচিত। ওই নির্বাচনে জর্জিয়াতে ১২ হাজার ভোটের ব্যবধানে জো বাইডেনের কাছে হেরে যান ট্রাম্প। তিনি এই ফলকে উল্টে দেয়ার ষড়যন্ত্র করেছিলেন বলে গত সপ্তাহে ট্রাম্প ও তার ১৮ জন সহযোগীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। ট্রাম্প যে ফল উল্টে দিতে চেয়েছিলেন তা একটি ফোনকল রেকর্ডে ধরা পড়েছে। তিনি জর্জিয়ার প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তাকে ভোট গণনাকালে ফোন করে ‘ওই ১১,৭৮০ ভোট খুঁজে পেতে’ বলেন। সব মিলে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ১৩টি অভিযোগ আছে। এর মধ্যে নির্বাচনে তাণ্ডব, একজন সরকারি কর্মকর্তাকে তার শপথ ভঙ্গ করতে বলা, জালিয়াতি করার ষড়যন্ত্র এবং মিথ্যা বিবৃতি দেয়ার অভিযোগ অন্যতম। তবে এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন ট্রাম্প। তার সঙ্গে যেসব ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে তার অর্ধেককেই সম্প্রতি ফুলটন কাউন্টি জেলে ঢুকানো হয়েছে। এর মধ্যে আছেন নিউ ইয়র্কের সাবেক মেয়র রুডি গিলিয়ানি, হোয়াইট হাউসের সাবেক চিফ অব স্টাফ মার্ক মিডোস। অন্যদিকে ট্রাম্পের অন্যতম একজন সহযোগী ব্ল্যাক ভয়েস ফর ট্রাম্পের নেতা হ্যারিসন ফ্লোয়েড নিরাপত্তা হেফাজতে রয়েছেন। তিনিও বৃহস্পতিবার আত্মসমর্পণ করেছেন। তবে জামিন পাননি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn