‘আমি আপনার প্রতি ভীষণ দুর্বল। জর্জিয়া যাওয়ার আগে আমি ভেবেছিলাম চিরদিনের জন্য সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো। আমি আশা করি এমন আশঙ্কা সত্য নয়। আমরা একে অন্যকে খুব বেশি করে জানি। আমরা সব কথা শেয়ার করেছি। একসঙ্গে হারিয়ে গিয়েছি কত্ত! আমি আশা করি ভালবাসার সেই বন্ধন ও বেদনা কোনোদিনই ছিন্ন হবে না’! ঠিক ধরেছেন এটি একটি প্রেমপত্রের ভাবানুবাদ। এমন প্রেমপত্র প্রেমিক ডেভিড ওর্মসবি-গোর’কে লিখেছিলেন জ্যাকুলিন কেনেডি ওনাসিস। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫তম প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির স্ত্রী।

অন্যদিকে ডেভিড ওর্মসবি-গোর হলেন যুক্তরাষ্ট্রে বৃটেনের ওই সময়কার রাষ্ট্রদূত। ডেভিড ওর্মসবি-গোর ও জ্যাকুলিনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল বলে অনেক আলোচনা। কিন্তু সেই আলোচনা আবারো জোরালো হয়েছে। কারণ, ওয়েলসে অবস্থিত ডেভিড ওর্মসবি-গোর পরিবারের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে জ্যাকুলিনের লেখা কিছু প্রেমপত্র। সেগুলো এখন নিলামে তোলা হয়েছে। এ নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে অনলাইন এনবিসি নিউজ। এতে বলা হয়েছে, ডেভিড ওর্মসবি-গোরকে লেখা জ্যাকুলিনের বেশ কতগুলো চিঠি উদ্ধার করে তা নিলামে তোলা হচ্ছে মার্চের শেষের দিকে। এ নিলাম থেকে আয় হবে এক লাখ ২০ হাজার থেকে এক লাখ ৯০ হাজার ডলার পর্যন্ত এমনটাই আশা করা হচ্ছে। ১৯৬৩ সালের নভেম্বরে আততায়ীর গুলিতে নির্মমভাবে খুন হন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি। তারপর ডেভিড ওর্মসবি-গোর ও জ্যাকুলিনের প্রেমপর্ব নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। বলা হয়েছে, জ্যাকুলিনকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির ঘনিষ্ঠ বন্ধু ডেভিড ওর্মসবি-গোর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন জ্যাকুলিন। কিন্তুডেভিড ওর্মসবি-গোরকে লেখা জ্যাকুলিনের প্রেমপত্রগুলো কি বলে! সত্যি কি তাদের প্রেমপর্ব শেষ হয়ে গিয়েছিল! তারই সুর বাজে ডেভিড ওর্মসবি-গোরকে লেখা জ্যাকুলিনের ১৯৬৮ সালের ১৩ই নভেম্বরে লেখা প্রেমপত্রে। তাতে জ্যাকুলিন ও গোর ‘অনেক জীবন, অনেক মৃত্যু, অনেক আশা আর অনেক বেদনা’র কথা শেয়ার করেছিলেন। গ্রিক-আর্জেন্টিনার শিপিং ধনকুবের, বিলিয়নিয়ার অ্যারিস্টটল ওনাসিসের সঙ্গে বিয়ের এক মাস পরে গোরকে এ কথা শেয়ার করেছিলেন জ্যাকুলিন। নতুন আবিষ্কৃত চিঠিতে তারই অনুরণন শোনা যায়। জ্যাকুলিন লিখেছেন তাদের ভালবাসা আর বেদনার কথা। বলেছেন, তিনি আশা করেন তাদের ভালবাসা ও বেদনার বন্ধন কোনোদিন ছিন্ন হবে না। ওই চিঠিতে জ্যাকুলিন যে জর্জিয়ার কথা উল্লেখ করেছেন তার ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে রিপোর্টে।

বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডিকে হত্যার কয়েক সপ্তাহ পরেই ১৯৬৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ডেভিড ওর্মসবি-গোর ও জ্যাকুলিন কেনেডি জর্জিয়ার থমাসভিলের কাছে গ্রিনউড প্লানটেশন এলাকায় সফরে গিয়েছিলেন। তিনি সেখানকার সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেছিলেন ওই চিঠিতে। ওই প্লান্টেশন বা বনায়নের মালিক ছিলেন তাদের বন্ধু জন জে হুইনি। তিনি গ্রেট বৃটেনে যুক্তরাষ্ট্রের একজন সাবেক রাষ্ট্রদূত ছিলেন। আগামী ২৯শে মার্চ লন্ডনে নিলামকারী প্রতিষ্ঠান বোনহ্যামস অকশনসে এ চিঠিগুলো নিলামে বিক্রি করা হবে। এরই মধ্যে এসব চিঠির কিছু বোনহ্যামের নিউ ইয়র্ক অফিসে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। এসব চিঠি সম্প্রতি চামড়ার দুটি লাল ব্রিফকেস থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ওয়েলসে ডেভিড ওর্মসবি-গোর এর পারিবারিক বাড়ি থেকে।

উল্লেখ্য, ১৯৮৫ সালে মারা যান ডেভিড ওর্মসবি-গোর। তার অন্ত্যোষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিয়েছিলেন সাবেক ফার্স্টলেডি জ্যাকুলিন। সঙ্গে ছিলেন তার দেবর সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি। তাহলে কি শেষ দিন পর্যন্ত ডেভিড ওর্মসবি-গোর-এর জন্য ভালবাসা জিইয়ে রেখেছিলেন জ্যাকুলিন! জ্যাকুলিন তার কাছে নিজের নিঃসঙ্গতার কথা প্রকাশ করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন ‘আপনার কাছে যত যন্ত্রণা রয়েছে তার সবটাই নিয়ে নিতে আমি সবকিছুই করবো’। তবে তিনি তাকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান। জ্যাকুলিন আরেকটি চিঠি লিখেছিলেন। সেই চিঠিতে অ্যারিস্টল ওনাসিসের নাম লেখা রয়েছে। তাতে জ্যাকুলিন লিখেছেন, আপনি আমাকে জানেন। আপনার আরও জানা উচিত যে, আপনার চিঠিতে যে পুরুষের কথা লিখেছেন তিনি সেই পুরুষ নন, যাকে আমি বিয়ে করতে পারি। আপনি এবং আমি আমাদের জীবন, মৃত্যু, আশা ও বেদনার অনেকটাই শেয়ার করেছি। আমরা চিরদিনের জন্য তা শেয়ার করে যাবো। এর মধ্য দিয়েই আমরা একত্রিত থাকবো চিরদিন’। জ্যাকুলিন আরও লিখেছেন, ‘যদি কোনোদিন বেদনা লাঘব করতে পারি, যদি একটু স্বস্তি পাই তা হবে তার সঙ্গে, যে এ বিশ্বে আমার জীবনসঙ্গী নয়। অতীতেও নয়। বেদনাও নয়। জ্যাকুলিনের মনে ভীষণভাবে ধরে গিয়েছিল ডেভিড ওর্মসবি-গোর’কে। তাই তিনি লিখেছেন, আমি একজন বুদ্ধিমান, উদার মনের মানুষকে খুঁজে পেয়েছি, যিনি আমাকে একাকীত্ব থেকে রক্ষা করতে চান। যদি তিনি পারেন তাহলেই শুধু আমি সিদ্ধান্ত নিতে পারি। আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn