টানা বৃষ্টিপাতের কারণে হাওরাঞ্চলের কৃষকরা বোরো বীজতলা নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। গত তিন দিনের বৃষ্টিতে অনেক কৃষকের বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক কৃষক অঙ্কুরিত বীজ বীজতলায় ফেলতে পারছেন না। যারা বৃষ্টির পূর্বে বীজতলা তৈরি করেছিলেন তারাও ক্ষতির সন্মুখিন হয়েছেন।  সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আজ সোমবারও মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত থাকবে। তবে সন্ধ্যার পর থেকে আস্তে আস্তে তা কমবে এবং আকাশ পরিস্কার হবে।  গভীর হাওরাঞ্চলের একাধিক এলাকার কৃষক জানিয়েছেন, বোরো বীজতলা তৈরির ধুম পড়েছিল; কিন্তু বৃষ্টির কারণে সবকিছু নষ্ট হচ্ছে। একদিকে অঙ্কুরিত বীজ নষ্ট হচ্ছে; অন্যদিকে হাওরের পানি হ্রাস কমে গেছে। এতে করে বোরো জমি চাষাবাদ শুরুতেই হোছট খেয়েছে বলে মন্তব্য তাদের। তাছাড়া অসময়ে এই বৃষ্টিপাতের কারণে চলতি বোরো মওসুমে জমি চাষাবাদের খরচ বেড়ে যাবে বলেও জানান তারা।  তবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. জাহেদুল হক বলেন,‘ জেলার অধিকাংশ এলাকার বোরো বীজতলা তৈরি করা হয়ে গেছে। সামান্য কিছু বাকী রয়েছে। বৃষ্টিপাত না হলে হয়তো কয়েকদিনেই সব শেষ হয়ে যেত। ’
গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাতে বোরো জমি চাষাবাদে কিছুৃটা বিলম্ব হওয়ার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি আরও জানান, চলতি বোরো মওসুমে জেলার ২ লাখ ২২ হাজার ৫৫২ হেক্টর জমির জন্য ১০ হাজার ৮৬৫ হেক্টর বোরো বীজতলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৯৭ ভাগ বীজতলা তৈরি হয়েছে। আগামী মাসেই ধান রোপন শুরু হয়ে যাবে।
জামালগঞ্জের হালির হাওরপাড়ের বেহেলী ইউপির মাহমুদপুর গ্রামের কৃষক আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘গত বছর দেড় হাল জমি করেছিলাম; সব পানিতে তলিয়ে গেছে। এইবছর জমি কমিয়ে এক হাল করার পস্তুতি নিয়েছি। জমি করার শুরুতেই হোছট খেলাম। ২৮ জাতের ৬০ কেজি বীজধান হাওরে ফেলেছিলাম, টানা বৃষ্টির কারণে সব পানিতে পঁচে যাচ্ছে। আরও ২০ কেজি বীজতলার নেয়ার জন্য প্রস্তুতি ছিল, কিন্তু বৃষ্টির কারণে সম্ভব হচ্ছে না।’৮০ কেজি বীজধান ক্রয় ও হাল-চাষ করে বীজতলায় ফেলা বাবদ মোট ৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে এবং সব টাকাই জলে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।  শাল্লার ছায়ার হাওরপাড়ের হবিবপুর ইউপির নিয়ামতপুর গ্রামের কৃষক বলেন,‘ কয়েকদিনের বৃষ্টিতে আমাদের জালার (ধানের চারা) ও বীজতলার অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমি ৫০ কেজি ধান ফেলেছিলাম; অন্তত ২০-৩০ কেজিই নষ্ট হয়ে গেছে। তাছাড়া বৃষ্টির কারণে এখন হাওরের পানি কমছে না। জমি চাষাবাদ ৮-১০ দিন পিছিয়ে যাবে।’  তাহিরপুরের শনির হাওরপাড়ের মধ্য তাহিরপুর গ্রামের কৃষক কালা মিয়া বলেন,‘ বেশী দাম দিয়ে দেশী জাতের লাখাই ধানের ৫০ কেজি বীজ ক্রয় করে বীজতলায় ফেলেছিলেন। কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতে অধিকাংশ বীজ নষ্ট হয়ে গেছে। এখন নতুন করে বীজধান পাওয়া যাবে না। তাই জমি করার সময় ধানের চারা ক্রয় করতে হবে।’   সিলেট আবহওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ বলেন,‘সাগরে নি¤œচাপের কারণে বৃষ্টিপাত হয়েছে। নি¤œচাপের প্রভাব কমে যাওয়ার বৃষ্টিপাত কমে যাবে। আজ সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে সুনামগঞ্জ অঞ্চলের আকাশ আস্তে আস্তে পরিস্কার হবে। ’ শনিবার সিলেট অঞ্চলের বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৩৯ মিলিমিটার ও রবিবার সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৩৮ মিলিমিটার।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn