আল-আমিন-মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকাণ্ডে ক্যাসিনো চক্র নেপথ্যে রয়েছে বলে মাঠ পর্যায়ে তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও যুবলীগ নেতা মিল্কি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে টিপু হত্যাকাণ্ডের যোগসূত্র থাকতে পারে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন। এই দুই ক্লু নিয়ে মাঠে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে গতকাল পর্যন্ত টিপুকে লক্ষ্য করে গুলি করা সন্ত্রাসীকে চিহ্নিত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। হত্যার কারণ উদঘাটন ও শুটারকে ধরতে পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব, ডিবি পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সংস্থাও মাঠে কাজ করছে। মতিঝিলের ব্যাংকপাড়ায় টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ এবং ক্লাবগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে মতিঝিল এলাকায় একাধিক চক্র সক্রিয় রয়েছে। টিপু এমন কোনো চক্রের শিকার হয়ে থাকতে পারেন বলে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের ধারণা।

এ ছাড়াও ওই এলাকার সাধারণ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানেন যে, ক্যাসিনোকাণ্ডের পর জেলে যাওয়া যুবলীগের সাবেক নেতা সম্রাট ও খালেদের একান্ত আস্থাভাজন ছিলেন টিপু।

দু’জনই জেলখানায় যাওয়ার পর টিপু এলাকায় সক্রিয় ছিলেন। টিপুকে ঠেকাতে আলাদা বলয় গড়ে তোলার চেষ্টা করছিলেন মতিঝিলের একজন সাবেক কমিশনার। তাদের দ্বন্দ্বের বিষয় এলাকার অনেকে জানেন।

পুলিশের ধারণা, টিপু হত্যাকাণ্ডে ওই চক্রটি জড়িত থাকতে পারে। গোয়েন্দা পুলিশ এটাও নিশ্চিত হয়েছে যে, এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যে শুটার জড়িত সে একজন  আন্ডার ওয়ার্ল্ডের সদস্য এবং ভাড়াটে কিলার। একটি জনবহুল এলাকায় এবং সড়কে জ্যামে আটকাপড়া এলাকায় প্রকাশ্যে গুলি করে চলে যাওয়া এমন দুঃসাহসিক কাজ একজন সাধারণ কিলারের পক্ষে সম্ভব নয়। গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে,  যে শুটার গুলি করেছে তাকে রক্ষা করতে ওই এলাকায় একাধিক ব্যাকঅ্যাপ টিম ছিল বলে ধারণা তাদের। আগে থেকেই টিপুর গাড়িকে তারা রেকি করছিল। সংগ্রহকৃত সিসি টিভি ফুটেজে ওই এলাকায় কোনো ব্যক্তি ও তাদের গাড়ি চলাচল সন্দেহজনক হলে তাদেরও চিহ্নিত ও জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনার উদ্যোগ  নেয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, টিপু হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে মতিঝিল থানা এবং পল্টন থানার একাধিক আওয়ামী লীগের নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তারা সবাই এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত না থাকার কথা জানিয়েছে। তবে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করছে পুলিশ। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মতিঝিলের একাধিক নেতা ফেঁসে যেতে পারেন। তার মধ্যে একজন মতিঝিলের যুবলীগের নেতা পুলিশের ব্লাকলিস্টে হয়েছেন। তাকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।  

বৃহস্পতিবার রাতে শাহজাহানপুরের আমতলী এলাকার সড়কে এক অজ্ঞাত আততায়ীর গুলিতে খুন হন টিপু। ওই সময় গাড়ির কাছেই রিকশায় থাকা বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সামিয়া আফনান প্রীতিও গুলিতে নিহত হন। আহত হন টিপুর গাড়ি চালক মুন্না। মাত্র মিনিটখানেকের মধ্যে কিলিং মিশন  শেষ করে গেঞ্জি ও সাদা পায়জামা পরা হেলমেটধারী আততায়ী সড়ক বিভাজক টপকে গুলি করতে করতে রাস্তার অন্য পাশে অপেক্ষায় থাকা একটি মোটরসাইকেলে উঠে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় টিপুর স্ত্রী ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফারজানা ইসলাম ডলি শুক্রবার সকালে শাহজাহানপুর থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল বিভাগের ডিসি নিফাত রহমান শামীম গতকাল জানান, ‘আমরা হত্যাকাণ্ডটি অত্যন্ত সংবেদনশীল হিসেবে নিয়েছি। শুটারসহ এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে কারা আছে তাদের চিহ্নিত করতে মাঠে কাজ করছি। শিগগিরই হত্যাকাণ্ডের কারণ এবং যারা নেপথ্যে আছে তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। ’

মামলার তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঢাকা মহানগর  গোয়েন্দা পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ২০১৩ সালে যুবলীগের নেতা মিল্কী হত্যাকাণ্ডের পর আলোচনায় আসেন টিপু। ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার যোগসূত্র থাকতে পারে বলে তখনই অঙ্গুলি ওঠে। ওই মামলার আসামিও তিনি ছিলেন এবং গ্রেপ্তার হন। পরে জামিনে বের হয়ে আসলে মিল্কী গ্রুপের কুনজরে ছিলেন তিনি।

সূত্র জানায়, এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধও তদন্তের আওতায় এনেছে পুলিশ। আসন্ন মতিঝিল থানায় সভাপতি পদে আবারো আলোচনায় ছিলেন টিপু। তার বলয় শক্তিশালী হওয়ার কারণে অনেকেই ভেবেছিলেন যে, তিনি এবার সভাপতি হতে যাচ্ছিলেন। তিনি সভাপতি হলে ওই এলাকায় তার শক্তিশালী বলয়  আরও বেশি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে  আসতো বলে প্রতিপক্ষ গ্রুপের ধারণা ছিল। সে কারণে তাকে মাঠ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে কি-না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn