বার্তাডেক্সঃ  হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক টি আলী স্যারের কর্মময় জীবন নিয়ে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি…’ গানের রচয়িতা আব্দুল গাফফার চৌধুরীর লেখা গানের দৃশ্যায়ন করা হয়েছে হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। এতে টি আলী স্যারের ভূমিকায় অভিনয় করেন নাট্য ব্যক্তিত্ব ঝুনা চৌধুরী। দৃশ্যায়ন উপলক্ষে ২৮ জানুয়ারী শনিবার বিকেলে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ঝুনা চৌধুরী বলেন- আমার প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আদর্শ শিক্ষক টি আলী তথা তজম্মুল আলী স্যারের ভূমিকায় অভিনয় করতে পেরে আমি গর্বিত। টি আলী স্যার ছিলেন সত্যিকার অর্থে একজন মানুষ গড়ার কারিগর। প্রথিতযশা সাংবাদিক-কলামিস্ট এবং মহান একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়ে অমর সৃষ্টি ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি…’ গানের রচয়িতা আব্দুল গাফফার চৌধুরী যথার্থই লিখেছেন- ‘শিক্ষাব্রতী মহান পুরুষ/ মানুষ গড়ার কারিগর/ অজ্ঞানতার তিমিরে তুমি যে ছিলে এক বাতিঘর/ জ্ঞানের মশাল করেছো বহন সারাজীবন/ তোমার আলোয় আলোকিত আজ হাজার জন’…।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কারপ্রাপ্ত সংগীত পরিচালক ‘ও আমার উড়াল পঙ্খিরে, একটা ছিল সোনার কন্যা ‘চাঁদনী পশরে কে আমারে স্মরণ করে’ সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গানের সুরকার মকসুদ জামিল মিন্টুর সংগীতায়োজনে গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী রফিকুল আলম।

শনিবার শুটিংয়ে সার্বিক সহযোগিতা করেন হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ আলফাজ উদ্দিন, হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অ্যাডভোকেট মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল, হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি হারুনুর রশিদ চৌধুরী, সাবেক পৌর কমিশনার আব্দুল মোতালিব মমরাজ, দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার ফয়সল মাহমুদ, সমাজকর্মী আনন্দ প্রমূখ। গানটির দৃশ্য ধারণকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষকমন্ডলী, শিক্ষার্থী, সাবেক শিক্ষার্থী ও বিশিষ্টজনরা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়- আদর্শ জীবনযাপন ও শিক্ষার্থীদের প্রতি মমত্ববোধের কারণে সাবেক শিক্ষার্থী ও হবিগঞ্জবাসীর কাছে ছিলেন তিনি অনুকরণীয়। ২০১৯ সালে হবিগঞ্জ-৩ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির এর ঘোষণা অনুযায়ী সরকার হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্রস রোডটির নামকরণ করেন ‘টি,আলী স্যার সড়ক’। সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে হবিগঞ্জ পৌরসভা। বর্তমানে হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পার্শ্বের সড়কটি টি,আলী স্যার সড়ক হিসেবে পরিচিত। ২০১৯ সালে তিনকোনা পুকুরপাড় এলাকায় এমপি মোঃ আবু জাহির এই সড়কের নামক ফলক উন্মোচন করেন। এই গুণী শিক্ষক ২০০০ সালে মৃত্যুর পর তাঁর গুণগ্রাহী ছাত্রদের উদ্যোগে ২০০৪ সালে প্রথম ও ২০১৯ সালে দ্বিতীয় স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ হয়। গুণী এই শিক্ষক হবিগঞ্জে থাকা অবস্থায় গ্রামের বাড়িতে চিকিৎসার অভাবে ৪ ছেলে ও ২ মেয়ে মারা যান। একে একে ৩ থেকে ৬ মাস বয়সি ৪ ছেলে ও দুই মেয়েকে হারান তিনি। সন্তানদের মৃত্যুর সময় স্ত্রীর পাশে শান্তনা হয়েও দাঁড়াতে পারেননি তিনি। জীবন ও তারুণ্যের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলো ব্যয় করেছেন শিক্ষাদান করেই। সন্তানদের জানাজায় পর্যন্ত অংশ নিতে পারেননি এই শিক্ষক।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়- ২০১৯ সালে অবসরপ্রাপ্ত গুণী শিক্ষকদের নিয়ে কাজ করা হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের স্বনামধন্য শিক্ষক সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার কৃতি সন্তান টি, আলী স্যারের নামে প্রতিষ্ঠিত যুক্তরাজ্য ভিত্তিক চ্যারেটি সংস্থা টি,আলী স্যার ফাউন্ডেশন সিলেট জেলার প্রত্যেক উপজেলায় অবসরপ্রাপ্ত দুইজন আদর্শ শিক্ষককে সম্মাননা পদকে মনোনয়নে জরিপ চালিয়ে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় সিলেট জেলার ১২ উপজেলা ২৪ জন মনোনয়নপ্রাপ্ত অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মধ্যে থেকে আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা ৫ জনকে আর্থিক সহযোগিতা এবং জেলার আদর্শ শিক্ষকের স্বীকৃতি হিসেবে ৫ জন শিক্ষককে “টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদক ২০২২ “ভুষিত করেছে সংস্থাটি। 

হবিগঞ্জ  জেলার ৯ উপজেলার ১৮ জন মনোনয়নপ্রাপ্ত শিক্ষকদের জীবনী ধারাবাহিক ভাবে গনমাধ্যমে প্রকাশ করেছে ফাউন্ডেশন ,আগামী ৩০শে এপ্রিল পদকের জন্য মনোনয়ন প্রাপ্ত অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মধ্যে থেকে আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা ৫ জনকে আর্থিক সহযোগিতা এবং জেলার আদর্শ শিক্ষকের স্বীকৃতি হিসেবে ৫ জন শিক্ষককে “টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদক ২০২৩“ভুষিত করেবে সংস্থাটি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn