উন্নয়নশীল আট দেশের অর্থনৈতিক জোট ডি-৮-এর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক ২৫ জুলাই ঢাকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ বৈঠকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, নাইজেরিয়া ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সশরীরে অংশ নেবেন। 

ছবি: ডি-৮

এ ছাড়া মিসর, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও তুরস্কের প্রতিনিধিরা বৈঠকে অংশ নেবেন। বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। ডি-৮ প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে মন্ত্রী পর্যায়ের এই বৈঠক আয়োজিত হচ্ছে। ২৪ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ বছরের ফোরামে বাংলাদেশ ও অন্য সদস্য দেশের মধ্যকার ভ্যালু চেইনের বৃহৎ পরিসরের ৬টি ক্ষেত্রের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করা হবে। 

in

ছবি: ডি-৮

এগুলো হলো- পণ্যসামগ্রী, শ্রমনির্ভর পণ্য, শ্রমনির্ভর সেবা, কৃষি, স্বাস্থ্যসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন। এ ছাড়া ৮টি সদস্য দেশের ৪০ জনেরও অধিক প্রতিনিধি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার কথা রয়েছে। আগত দর্শনার্থীদের জন্য এক্সপো জোন-এ ‘বিল্ড ইন বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন’-এ বাংলাদেশের স্থানীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের স্টল থাকবে। যাইহোক, উন্নয়নশীল দেশের এই সংগঠনটি দুই যুগ ধরেই সার্বিক উন্নতিতে কাজ করছে। তাই আজ আমরা এই ব্যাপারে বিস্তারিত জানব। 

 ডি-৮ সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

in

ছবি: ডি-৮

১৯৯৭ সালের ১৫ জুন ইস্তাম্বুলে এক আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের পর অর্থনৈতিক জোট ডি-৮ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়া হয়। অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশনের উদ্দেশ্য হলো বিশ্ব অর্থনীতিতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অবস্থান উন্নত করা, বাণিজ্য সম্পর্কের বৈচিত্র্য আনা এবং নতুন সুযোগ সৃষ্টি করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করা। এটি মূলত একটি আঞ্চলিক ব্যবস্থার পরিবর্তে একটি বৈশ্বিক ব্যবস্থা। কারণ এই সংগঠনের সদস্যদের সার্বিক অবস্থা প্রতিফলিত হয়। অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন (D-8) হলো, একটি ফোরাম যার সদস্য দেশগুলো দ্বিপাক্ষিক এবং বহু-পাক্ষিক প্রতিশ্রুতির উপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়ে না। এছাড়াও অন্যান্য আন্তর্জাতিক বা আঞ্চলিক সংস্থাগুলোতে তাদের সদস্যপদ থেকে উদ্ভূত হয়। তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুলে এর সদরদফতর অবস্থিত।

 ডি-৮ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য

ছবি: ডি-৮

ছবি: ডি-৮

১৯৯৬ সালের অক্টোবরে ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত ‘উন্নয়নে সহযোগিতা’ বিষয়ক একটি সেমিনারে প্রধান মুসলিম উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার ধারণাটি তুরস্কের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী প্রফেসর ডঃ নেকমেতিন এরবাকান উত্থাপন করেন। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া থেকে আফ্রিকা পর্যন্ত বিস্তৃত মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য তিনি আহ্বান জানান। সেমিনারে বাংলাদেশ, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া ও পাকিস্তানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এই সম্মেলনটি ছিল ডি-৮ প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ। পরে একটি ধারাবাহিক প্রস্তুতিমূলক বৈঠকের পরেই ডি-৮ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আগ্রহী দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানদের উপস্থতিতে ইস্তাম্বুল ঘোষণার মাধ্যমে এর কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। তৎকালীন বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডি-৮ ঘোষণার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

ছবি: ডি-৮

ছবি: ডি-৮

১৯৯৭ সালের ১৫ জুন ‘ইস্তাম্বুল ঘোষণার উদ্দেশ্যের মধ্যে ছিল- উন্নয়নশীল দেশগুলোর উন্নতি সাধন ও বিশ্ব-অর্থনীতিতে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করা, পারস্পরিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও সুবিধা বৃদ্ধি করা আর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সবার অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং মানসম্মত জীবন যাপন নিশ্চিত করা। ডি-৮-এর সহযোগিতার প্রধান খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে- আর্থিক ও ব্যাংকিং, গ্রাম উন্নয়ন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, মানবকল্যাণ ও মানবাধিকার, কৃষি, জ্বালানি, পরিবেশ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি। ১৯৯৯ সালের ১ ও ২ মার্চ জোটের দ্বিতীয় সম্মেলন হয়েছিল বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শেখ হাসিনা।

 এবারের সম্মেলনের উদ্দেশ্য

ছবি: ইন্টারনেট

 

প্রতিষ্ঠাকালীন ডি-৮-এর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে আন্ত বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৪ বিলিয়ন ডলার। এটি বর্তমানে ১২৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

১৯৯৯ সালের পর ফের বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত এবারের ডি-৮ সম্মেলনে চলমান বৈশ্বিক জ্বালানি সংকট নিরসনের আলোচনা হবে। ২৫ জুলাই ডি-৮ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিমের বরাত দিয়ে জানা যায়, দেশের তেল ও গ্যাস সংকট সমাধানে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে ডি-৮ সিসিআই বিজনেস ফোরাম। এজন্য নাইজেরিয়া, ইরানের মতো তেল সমৃদ্ধ দেশগুলোর সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আশা করছেন বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের বরাত দিয়ে জানা যায়, প্রতিষ্ঠাকালীন ডি-৮-এর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে আন্ত বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৪ বিলিয়ন ডলার। এটি বর্তমানে ১২৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

ছবি: ইন্টারনেট

 ডি-৮ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ডি-৮ অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (ডি-৮ পিটিএ) দ্রুত কার্যকর করার লক্ষ্যে বাণিজ্য সহজীকরণ কৌশলের খসড়া চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন আরো বলেন, আজারবাইজান সম্প্রতি ডি-৮-এর সদস্য পদের জন্য আবেদন করেছে। এবারের বৈঠকে আজারবাইজানের ডি-৮-এর সদস্য পদ লাভের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডি-৮-এর বিদ্যমান বিধান পর্যালোচনা করা হবে। বর্তমানে ডি-৮ভুক্ত দেশগুলোর অর্থনীতির আকার প্রায় ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ। আর দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ৬০ থেকে ৭০ বিলিয়ন ডলার। তবে সম্ভাবনা কাজে লাগানো সম্ভব হলে এ বাণিজ্যের পরিমাণ ৫০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা সম্ভব।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn