তারিক চয়ন-নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভালো থাকার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর খোলা চিঠি লিখেছেন ৪০ জন বিশ্বনেতা। ওই ৪০ জনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিনটন, বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দল- ডেমোক্রেটিক পার্টি মনোনীত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, আয়ারল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট মেরি রবিনসন, সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে যাওয়া প্রয়াত মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড এম কেনেডির পুত্র টেড কেনেডি জুনিয়রের মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ রয়েছেন।

মঙ্গলবার (০৭ মার্চ) চিঠিটি প্রকাশ করে ‘প্রটেক্ট ইউনূস ডট ওয়ার্ড প্রেস ডট কম’ জানিয়েছেঃ রাজনীতি, কূটনীতি, ব্যবসা, শিল্পকলা এবং শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রের ৪০ বিশ্বনেতা ৭ই মার্চ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি তার সরকারের আচরণ সম্পর্কে চিঠিটি পাঠিয়েছেন। ওই খোলা চিঠিটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত প্রভাবশালী ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকাতে পূর্ণ-পাতার বিজ্ঞাপন হিসেবেও প্রকাশিত হয়েছে।

ইংরেজিতে প্রকাশিত চিঠিটির শুরুতেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ঠিকানা দিয়ে লেখা হয়েছেঃ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আমরা আপনাকে বাংলাদেশের সেসব বন্ধু হিসেবে লিখছি যারা আপনার দেশের জনগণের সাহস ও উদ্ভাবনশীলতার প্রশংসা করে। আমাদের মধ্যে সরকারি কর্মচারী, ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজের নেতা এবং সমাজসেবক রয়েছেন। আমরা সেই কোটি কোটি বিশ্ব নাগরিকদের অন্তর্ভুক্ত যারা বাংলাদেশ থেকে সৃষ্ট এবং সারা বিশ্বে গৃহীত উদ্ভাবনগুলো দ্বারা অনুপ্রাণিত। আপনার দেশের প্রতি এই গভীর শ্রদ্ধার কারণেই আমরা আপনাদের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নাগরিকদের একজন, নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের মহান অবদানকে সমর্থন ও স্বীকৃতি দিতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে আপনাকে অনুরোধ করতে লিখছি।

ড. ইউনূসের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে এবং বাংলাদেশ ও সারা বিশ্বের জন্য তার বেশকিছু অবদানের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে চিঠিতে লেখা হয়েছেঃ বাংলাদেশ এবং সারা বিশ্বের মানবিক অগ্রগতিতে অবদান রাখার জন্য প্রফেসর ইউনূসের স্বাচ্ছন্দ্য ও সামর্থ্যের বিষয়ে আমাদের গভীর উদ্বেগ রয়েছে। আমরা এটা নিশ্চিত আপনি অবগত আছেন যে, বাংলাদেশে এবং গোটা বিশ্বে বিশেষ করে অত্যন্ত দরিদ্র এবং সবচেয়ে অরক্ষিতদের জন্য মুহাম্মদ ইউনূসের অবদান বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত এবং সম্মানিত। উদাহরণস্বরূপঃ

প্রফেসর ইউনূস ইতিহাসের সাতজন ব্যক্তিদের মধ্যে একজন যিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম এবং কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল পেয়েছেন। ওই সাতজনের মধ্যে নেলসন ম্যান্ডেলা, মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র, মাদার তেরেসা এবং এলি উইজেল (এর মতো ব্যক্তিরা) রয়েছেন। তিনি (ইউনূস) ১৯৭৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন এবং এটিকে ৯০ লাখ ঋণগ্রহীতার এক বিশ্বখ্যাত দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন, যাদের ৯৭ শতাংশই নারী। ব্যাংকটি লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিয়েছে এবং সারা বিশ্বের অন্যান্য ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির জন্য মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

১৯৮০’র দশকের মাঝামাঝি সময়ে গ্রামীণ ব্যাংক ২০০-৫০০ ডলারের গৃহনির্মাণ ঋণ দেওয়া শুরু করে যার মাধ্যমে সাড়ে সাত লাখেরও বেশি পরিবারের জন্য শক্তিশালী গ্রামীণ বাড়ি নির্মিত হয়েছে। অধ্যাপক ইউনূস ‘গ্রামীণ শক্তি’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn