ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানীকে অবরুদ্ধ করে রাখা ও তার কার্যালয়ে ভাঙচুরের ঘটনায় আন্দোলনকারী ৫০ অজ্ঞাতনামার বিরুদ্ধে করা মামলার প্রতিবাদ জানিয়ে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টায় টিএসসি থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পদক্ষিণ শেষে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের বাসভবনের সামনে গিয়ে অবস্থান নেয়। সেখান কিছুক্ষণ অবস্থান শেষে ফের টিএসসি এসে মিছিলটি শেষ হয়। এসময় আন্দোলনকারীরা প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেন। তারা মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানান। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচি দেয়ার হুমকি দেন শিক্ষার্থীরা। এদিকে অান্দোলনকারীদের অনেকেই মামলার নিন্দা জানিয়ে ‘আমি আন্দোলনকারী আমাকে গ্রেফতার করো’ প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে নিজেদের গ্রেফতারের দাবি জানান। মিছিল পরবর্তী সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী মাসুদ আল মাহদী। তিনি বলেন, ‘আমাদের আগের তিনটি দাবির সঙ্গে নতুন দাবি যুক্ত হয়েছে, সেটি হচ্ছে প্রক্টরের পদত্যাগ। ছাত্রীদের ওপর যৌন নিপীড়নের বিচার চাইতে গিয়ে উল্টো আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধেই মামলা করা হয়েছে, এটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যর্থতার চরম বহিঃপ্রকাশ। প্রক্টর পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’ এর আগে বৃহস্পতিবার শাহবাগ থানায় প্রক্টর নিজে বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
উল্লেখ্য, গত সোমবার অধিভুক্ত সাত কলেজ বাতিলের দাবিতে কর্মসূচি পালন করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় আন্দোলনকারী ছাত্রীদের উত্ত্যক্তকরণ, আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ককে উপাচার্যের কার্যালয়ে মারধর এবং অন্যান্যদের হেনস্তার অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে গতকাল বুধবার ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নেতাদের বিচার চেয়ে প্রক্টরের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন হাজার হাজার শিক্ষার্থী। ভাঙচুর করা হয় প্রক্টর কার্যালয়ের সামনের কলাপসিবল গেট। পাঁচ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয় প্রক্টর গোলাম রব্বানীকে। এক পর্যায়ে প্রক্টর অপরাগতা স্বীকার করে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের কার্যালয়ে চলে যান। আন্দোলনকারীদেরও সেখানে চলে যেতে বলেন। এ সময় উপাচার্যকে ৪৮ কর্মঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে আন্দোলনকারীরা ওইদিনের কর্মসূচি শেষ করেন।

ঢাবিতে আন্দোলনকারী অজ্ঞাত ৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

 
সাত সরকারি কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় মেয়েদের যৌন হয়রানির প্রতিবাদে প্রক্টরের কার্যালয় ঘেরাওকালে ভাঙচুরের ঘটনায় ৫০ থেকে ৬০ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে মামলায় কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই মামলার খবরে রাতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা উপাচার্য আখতারুজ্জামানের বাড়ির সামনে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ জানায় শিক্ষার্থীরা। তারা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। এদিকে ‘যৌন হয়রানীকারী’ ছাত্রলীগ নেতা কর্মীদের শনাক্তে গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা এস এম কামরুল আহসান বাদী হয়ে রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রক্টর গোলাম রাব্বানী ও শাহাবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকতা আবুল হাসান। গত সোমবার সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বাধা দেয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠে ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে। আন্দোলনে নামা মেয়েদেরকে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের কয়েকজন নেতা বাজে মন্তব্য করে হয়রানি করেছেন বলেও অভিযোগ উঠে।
একই দিন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ক মশিউর রহমান সাদিককে কৌশলে উপাচার্যের বাসভবনে নিয়ে যায়। পরে তাকে শাহবাগ থানায় দেয়া হয়। সাদিক এরই মধ্যে মুক্তি পেয়েছেন। তবে তিনি মারধরের অভিযোগ এনেছেন। আর মেয়েদের যৌন হয়রানি ও সাদিককে নির্যাতনে জড়িত ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বহিষ্কার ও শাস্তির দাবিতে বুধবার প্রক্টরের কার্যালয় ঘেরাও করে শিক্ষার্থীরা। এ সময় প্রক্টরের অফিসের গেট ভেতর থেকে তালাবদ্ধ ছিল। পরে শিক্ষার্থীরা গেট ভেঙে ফেলে। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভাঙচুরের বেশ কয়েকটি ছবি ও ভিডিও পুলিশের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। এই ছবি দেখেই আসামিদের শনাক্ত করার চেষ্টা করা হবে। প্রক্টর গোলাম রাব্বানী বলেন, বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের পূর্ব গেইট ও প্রক্টর অফিস ভাঙচুরের দায়ে ৫০-৬০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তবে মামলায় কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি।
‘নিপীড়ক’ ছাত্রলীগ নেতাদের শনাক্তে দুই কমিটি
এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় মেয়েদেরকে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার হয়রানির অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন উপাচার্য আখতারুজ্জামান।  বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই সর্বোচ্চ কর্মকর্তা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ এদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা নিপীড়নকারী ছাত্রলীগ নেতাদেরকে বহিষ্কারসহ শাস্তির দাবিতে সোমবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে। এর মধ্যে ব্যবস্থা নেয়া না হলে মঙ্গলবার থেকে লাগাতার কর্মসূচিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তারা।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn