বার্তা ডেস্ক :: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রী ধর্ষণ ও ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগে দায়ের করা মামলার তদন্তে পুলিশের গাফলতি আছে বলে মনে করছেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী। একই ধারণা মামলার অন্যতম আসামি ঢাবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের। তিনি বলেন, বিভিন্ন কারণে পুলিশ এই মামলার নিরপেক্ষ তদন্ত করতে পারে না। তবে পুলিশ বলছে, ধর্ষণ মামলার তদন্তের ক্ষেত্রে তারা অত্যন্ত আন্তরিক। গত ২১ ও ২৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর লালবাগ ও কোতোয়ালি থানায় ধর্ষণ, অপহরণ ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে চরিত্র হননের অভিযোগে দুটি মামলা করেন ওই শিক্ষার্থী। মামলায় বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাসহ ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরকেও আসামি করা হয়। মামলার প্রায় ১ মাস হতে চলেছে, এ পর্যন্ত মাত্র ২ জনকে গ্রেফতার করা হলেও তদন্তে তেমন কোন অগ্রগতি দেখাতে পারেনি পুলিশ।

গ্রেফতাররা হলেন- বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সাইফুল ইসলাম ও সংগঠনটির ঢাবি শাখার সহ-সভাপতি মো. নাজমুল হুদা। মামলার তদন্তের বিষয়ে ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী বলেন, আমি ২১ সেপ্টেম্বর লালবাগ থানায় মামলা করি। বিজ্ঞ আদালত ৭ অক্টোবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য করেন। তবে পুলিশ প্রতিবেদন দিতে ব্যর্থ হয়। তারপর আদালতে আবেদন করার পর সেটি আবার ২৭ অক্টোবর করা হয়। ৭ অক্টোবর পর্যন্ত যে সময়টা ছিল তাতে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করার যথেষ্ট সময় ছিল। তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করলে মানুষের মধ্যে যে একটা ধারণা সৃষ্টি হয়েছে- কেন তা প্রকাশ হচ্ছে না; তা স্পষ্ট হতো। ওই শিক্ষার্থী বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় আমি বরাবরই একটা উদাসীনতার ছাপ দেখতে পায়। আসামি গ্রেফতার করতে গিয়ে একটা অদৃশ্য শক্তি বা অজ্ঞাত কারণে তারা গাফিলতি করছে। যার জন্য আমাকে এখানে অবস্থান করতে হচ্ছে। তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনের তারিখ ৭ অক্টোবর থেকে ২৭ অক্টোবরে নেয়ার পেছনেও গাফলতি বা উদাসীনতা আছে।

দীর্ঘ কয়েকদিন ধরে টিএসসিতে অবস্থানরত ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, দুই মামলার প্রধান আসামি গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত আমি এখানে অবস্থান করব। এদিকে মামলার বাদীর মতোই তদন্ত নিয়ে পুলিশের গাফলতির অভিযোগ তুলেছেন অন্যতম আসামি নূরুল হক নুর। তিনি বলেন, তথ্য প্রমাণ না পাওয়ায় তদন্ত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দিতে দেরি করছে। তাই তদন্ত প্রতিবেদনের সময় দিন দিন বাড়াচ্ছে তারা। মূলত এটা একটি রাজনৈতিক মামলা। আমাদের রাজনৈতিক অবস্থান নষ্ট করার জন্য এ মামলা করা হয়েছে। এই মেয়ের সঙ্গে হাসান আল মামুনের তেমন সম্পর্ক ছিল না। ডিপার্টমেন্টের ছোট বোন হিসেবে হাই-হ্যালো সম্পর্ক ছিল। মূলত, নাজমুল হাসানের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তার সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ের কথা চলছিল বলে শুনেছি। মেয়েটি ৩ জানুয়ারি ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করেছে। কিন্তু ৫ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় সারাদেশ উত্তাল ছিল। তখন তিনি কেন অভিযোগ করেননি? তখন অভিযোগ করলে মামলা আরও স্ট্রং হতো। যখন অভিযোগ করেছে তাও ৬ মাস পর। আর ছয় মাস পর ধর্ষণের মত একটি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া অনেক কঠিন। মেয়েটির করা মামলা দুটি পুরোপুরি রাজনৈতিক। রাজনৈতিক না হলে দুটি মামলার ১ নম্বর আসামি গ্রেফতার না করে অন্যদের গ্রেফতার করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটছে। আমার মনে হয় বর্তমানে পুলিশ কোন নিরপেক্ষ তদন্ত করতে পারে না। এজন্য বিচারবিভাগীয় বা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হোক।

এদিকে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বাদী-বিবাদীর অভিযোগ থাকলেও পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) সোহেল রানা বলেন, ‘ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনা পুলিশ সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে।‘ ২১ সেপ্টেম্বর রাতে ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগের মামলায় নুরকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের কয়েক ঘণ্টা পর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।সৌজন্যে : জাগোনিউজ ২৪

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn