পীর হাবিবুর রহমান-

বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ‘তারেক রহমান বিএনপির বোঝা না আওয়ামী লীগের শত্রু’? এই প্রশ্নে লেখা কলামের কারণে যুক্তিহীন অন্ধ তার চাটুকার সুবিধাভোগী প্রভুভক্ত পোষা একদল কুকুরের মতো ঘেউ ঘেউ করে চিৎকার করছেন। ওয়ান ইলেভেনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার পুত্রগণ ও দলের নেতারা যখন কারাদহন থেকে শুরু করে রিমান্ড নির্যাতনের মুখোমুখি হন তখন এইসব সুবিধাভোগী পোষা কুকুরেরা লেজ গুটিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছিল। বিএনপি-জামাত শাসনামলে হাওয়া ভবনের ভিতরে কেউ প্রবেশ করে, কেউ বা বাইরে ক্ষমতার চারপাশে ঘুর ঘুর করে অগাধ সম্পদের মালিক হয়েছিল এইসব অযোগ্য মোসাহেবরা। বিএনপি ও হাওয়া ভবনের ক্ষমতার জোরে অন্ধ ক্ষমতাধরই হয়ে উঠেনি, তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মঈন উ আহমদের সঙ্গে অসদাচরণই করেনি বিএনপি দলীয় সম্মানিত মন্ত্রী, নেতা, সরকারি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে অনেক পেশাজীবিদের সঙ্গে ও দাম্ভিক উন্নাসিক আচরণও দেখিয়েছিল। ওয়ান ইলেভেনে পলাতক এসব চক্রের পাপের বোঝা বহন করতে গিয়ে ২০০৮ সালের নির্বাচনে টাইটানিকের মত ডুবেছিল বিএনপি। তাদের পাপের কারণে সেদিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ও  প্রধানমন্ত্রীর পুত্র তারেক রহমান ও জনপ্রিয় দল বিএনপিকে বিতর্কিতই নয় কলঙ্কিত হতে হয়েছিল।

খালেদা জিয়া ও বিএনপির বিপদের সময় তারাই এই দেশ ছেড়ে পালিয়েছিল। গোনায় না ধরা হাওয়া ভবনের কর্মচারিরা দেশান্তরী হয়েছিল। জনগণ বা প্রসাশন না জানলেও তারা জানতো তাদের পাপ ও লুটপাট কতটা ভয়ংকর। লন্ডনে নিবাসিত তারেক রহমানকে ঘিরে লেজ নাড়তে নাড়তে তারা আবার সময় মত কাছে ভিড়েছে। ১৯৭৭ সালের করুণ পরাজয়ের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী  শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন। আত্মসমালোচনা, আত্মশুদ্ধির পথে গণ রায় নিয়ে পরবর্তীতে দাপটের সঙ্গে ক্ষমতায় ফিরেছিলেন। ওয়ান ইলেভেনের পর জনপ্রিয় দল বিএনপিতে যে তারেক রহমান দলের সম্ভাবনাময় নেতা হিসেবে উদীয়মান হতে যাচ্ছিলেন, তৃণমূল বিএনপিকে সংগঠিত করতে নেমেছিলেন, তিনি পরবর্তীতে গণতন্ত্রের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সরকারের অদৃশ্য ক্ষমতাধর যুবরাজে পরিণত হয়েছিলেন বলেই, সময় ও গণমাধ্যমের কাছে হাওয়া ভবন ঘিরে তার অযোগ্য সুবিধাভোগী লুটেরা চক্রের উপর দুর্নীতির বরপুত্র বলে চিহ্নিত হয়ে ছিলেন।

সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনের গর্ভে জন্ম নেওয়া বিএনপি যখন ক্ষমতাচ্যুত, ভাঙনে ভাঙনে ভঙুর অবস্থা সেই বিএনপির হাল ধরেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। তার পাশে ছিলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সহচরগণ। জনপ্রিয়তা নিয়ে বিএনপি ক্ষমতা ও রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তন করেছিল। দেশে গণতন্ত্রের সু-বাতাস বইছিল। পরবর্তী ইতিহাস সবার জানা। তারেক রহমান ও তার উথান বিএনপির অভ্যন্তরে বিভক্তি ও রক্তক্ষরণই ঘটায়নি একটি কালো হাত রাজনীতিতে আস্থা-বিশ্বাসের সকল সম্ভাবনা নির্বাসিত করে হত্যা, সন্ত্রাস দমন, নির্যাতন, গ্রেনেড,  বোমা ও জঙ্গিবাদের উথান একদিকে ঘটিয়েছে, আরেকদিকে ত্রাস ও লুঠের স্বর্গরাজ্যে দেশকে পরিণত করেছিলেন। বিএনপি ও এদেশের রাজনীতিতে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনা আগে বলেছি। নতুন করে বলার কিছু নেই। জাতির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের ফসল জাতীয় ঐক্য, সত্তরের ব্যালট বিপ্লব। বঙ্গবন্ধুর ডাকেই স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ, তিনিই  আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক। তিনিই আমাদের রাষ্ট্রের স্থপতি ও জাতির জনক। জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর ডাকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বপুর্ণ ভূমিকা রাখা একজন সেক্টর কমান্ডার।

অনেকে আশা করেছিলেন লন্ডনে নির্বাসিত তারেক রহমান আত্মসামালোচনা, আত্মসংযম, আত্মশুদ্ধির পথে ব্যাপক পড়াশোনা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের মধ্য দিয়ে নিজেকে তৈরি করবেন। কিন্তু তিনি সেই সব প্রভুভক্ত চাটুকারদের নিয়ে পুরোনো পথেই হাটছেন। ইতিহাসের নামে নির্জলা মিথ্যাচার ও সত্যের প্রলাপ করছেন। তার কালো হাত বিএপিকে উগ্রহটকারী পথে টেনেছে। আর অসংখ্য নেতাকর্মী সরকারের দমন নীতি ও মামলার জালে পড়েছেন। একটি জনপ্রিয় দলের জনপ্রিয় নেত্রী হয়েও খালেদা জিয়া এখন কঠিন দুঃসময়ের মুখোমুখি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে খালেদা জিয়া ও বিএনপির জন্য তারেক রহমান ও জামাত বোঝা হয়ে দাড়িয়েছে। তারেক রহমানের ভুল ভ্রান্ত নেতিবাচক রাজনীতি তুলে ধরলেই তার প্রভুভক্ত কুকুরেরা ঘেউ ঘেউ করে চিৎকার করছে। এমনকি ইয়াজউদ্দিনের সময় রাষ্ট্রপতি হতে না পারার গভীর বেদনা নিয়ে নিভু নিভু আশার আলো দেখা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমদও বলেছেন, ‘তারেক বাবার মত যোগ্য সন্তান হয়েছেন’!  বিএনপির পোষ্য বুদ্ধিজীবি এমাজউদ্দিনেরও  জীবনের পরন্ত বেলায় তারেক রহমানের ভুল ধরিয়ে দেওয়ার সাহস নেই। ইতিহাসের শিক্ষাই হচ্ছে, ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেন না।

এখানে প্রকাশিত সব মতামত লেখকের ব্যক্তিগত,  সুনামগঞ্জ বার্তা ডটকম’র সম্পাদকীয় নীতির আওতাভুক্ত নয়।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn