জামাল উদ্দিন ও তোফায়েল হোছাইন-অর্থপাচার ও দুর্নীতির অভিযোগে দু’টি মামলায় সাজা পেয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান। এই দুই মামলায় সাজা হওয়া ছাড়াও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দু’টিসহ ঢাকার আদালতগুলোয় এখনও ১৯টি মামলার কার্যক্রম চলমান। এসব মামলার প্রায় প্রত্যেকটিতে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন মামলায়ও তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা আছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মামলা সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা। এদিকে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ফজিলাতুন নেসা বাপ্পীর এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, দু’টি মামলায় তারেক রহমানের সাজা হয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ অন্যান্য অভিযোগে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বর্তমানে আটটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, অর্থপাচারের অভিযোগে ২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর তারেক রহমান ও তার বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে আসামি করে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১১ সালের ৬ জুলাই এ মামলার বিচার শুরু হয়। বিচারিক কার্যক্রম শেষে ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩-এর বিচারক তারেক রহমানকে খালাস দিয়ে গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে সাত বছর কারাদণ্ড ও ৪০ কোটি টাকা জরিমানার আদেশ দেন। এরপরে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের পর উচ্চ আদালত ২০১৬ সালের ২১ জুলাই নিম্ন আদালতের রায় বাতিল করে তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন।

এ বছরের গত ৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় কোনও মামলায় তারেক রহমানকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তারেক রহমানকে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক আখতারুজ্জামান ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন। একই মামলায় ৫ বছরের সাজা পেয়ে তার মা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে রয়েছেন। তারেক রহমান ছাড়া আরও চার আসামিকে এ মামলায় ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক। ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করে দুদক। ক্যান্টনমেন্ট ও রমনা থানায় দায়ের করা দুদকের এই দুই মামলা ছাড়া আর কোনও মামলার বিচার কার্যক্রম শেষ হয়নি এখনও। মামলা সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মতিঝিল থানায় দায়ের হওয়া হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের দু’টি মামলা ঢাকার দ্রুত বিচার আদালত-১ এ বিচারাধীন রয়েছে। বর্তমানে মামলাটির আসামি পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন চলছে। এ দু’টি মামলায় তারেক রহমান আসামি। আগামী ১৫ ও ১৬ মে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এ বিচারাধীন রয়েছে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাটি। এ মামলায় মা খালেদা জিয়ার সঙ্গে আসামি রয়েছেন তারেক রহমানও। আগামী ৪ জুন  এ মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে দায়ের হওয়া আরেকটি মামলা ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লার আদালতে রয়েছে। আগামী ১৪ জুন এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। গুলশান থানার ৩৪(৩)০৭ নম্বরের দ্রুত বিচার আইনে দায়ের করা মামলাটি ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরীর আদালতে বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে। আগামী ৮ জুলাই এ মামলার শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।

ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাসের আদালতে বিচারাধীন রয়েছে ১২৩৩/১৪ নম্বরের মামলাটি। আগামী ২৯ মে গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিলের প্রতিবেদনের দাখিলের দিন ধার্য রয়েছে। ৯৫৪/১৪, ৮৪১/১৪, ৩৮০/১৫, ৭২০/১৫ এবং ১৯৬/১৫ নম্বর মামলা রয়েছে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক আহসান হাবিবের আদালতে। আগামী ১৬ মে এসব মামলার শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক সুব্রত ঘোষ শুভ-এর আদালতে বিচারাধীন রয়েছে ৩৮০/১৪ নম্বর মানহানির মামলাটি। আগামী ২৫ জুন মামলাটির শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। এছাড়া ঢাকার অন্যান্য আদালতে বিচারাধীন রয়েছে ১৯৬/১৫, ৬১৭/১৫, ৯৪১/১৫ ও ৩৯৩/১৪ নম্বরের মামলা। সব মামলাতেই তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নসহ অন্যান্য অভিযোগে গুলশান থানার ১০২(৩)৭ ও ১৩(৫)০৭ নম্বর মামলা এবং কাফরুল থানার ৫২(৯)০৭ ও ৬৮(৩)০৭ নম্বর মামলাটি এখনও তদন্তাধীন রয়েছে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি ও মানহানির অভিযোগে দায়ের করা। এছাড়া ঘুষ গ্রহণ, দুর্নীতি ও অর্থ পাচার, আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন, হত্যা ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগে মামলা রয়েছে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে। 

খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতা-কর্মীদের মামলা পরিচালনার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন অ্যাডভোকেট সৈয়দ জয়নাল আবেদিন মেজবাহ।তিনি বলেন, ‘রাজনীতি থেকে দুরে রাখতেই তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সরকার ও তাদের সমর্থকরা একের পর এক মামলা দিয়ে যাচ্ছে। যদিও এসব মামলার কোনও ভিত্তি নেই। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের অন্যতম আইনজীবী সানা উল্লাহ মিয়া  বলেন, ‘ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা রয়েছে। রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার উদ্দেশ্যেই এসব মামলা দায়ের করা হয়।’ তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা কয়েকটি মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে আছেন মোশাররফ হোসেন কাজল। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক হয়রানির উদ্দেশ্যে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে বলে যেসব কথা বলা হয়, সেগুলো ঠিক নয়। এছাড়া অন্য মামলাগুলো আইন অনুযায়ী নিজস্ব গতিতে চলছে। দু’টি মামলায় সাজা হয়েছে। কিছু মামলার বিচার কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে রয়েছে।’

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn