তাহিরপুর :: বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেয় এক ব্যবসায়ীর ৪০টি গরু জব্দ এবং বেআইনিভাবে নিলাম দেওয়ার অভিযোগে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ভারপ্রাপ্ত) ও টেকেরঘাট পুলিশ পাড়ির ইনচার্জ এ এস আই সহ ৭জনের বিরদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন এক গরু ব্যবসায়ী। মঙ্গলবার সুনামগঞ্জের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই মামলটি দায়ের করেছেন তাহিরপুর উপজেলার পাশ^বর্তী ধরমপাশা উপজেলার বৌলাম গ্রামের গরু ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম। আদালতের বিচারক শুভদীপ পাল মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার অভিযুক্তরা হলেন, ধরমপাশা উপজেলার রনসি গ্রামের আর্শাদ মিয়া, তাহিরপুর উপজেলার রামসিংপুর গ্রামের সেলিম মিয়া ও মনির মিয়া, টাঙ্গুয়া হাওরে কর্মরত আনসার কাজল, তাহিরপুর থানার টেকেরঘাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এ এস আই আবু মুসা, তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুনতাসির হাসান, তাহিরপুর উপজেলার সুর্যেরগাঁও গ্রামের স্বপন কুমার দাস। মামলায় টাঙ্গুয়া হাওরে কর্মরত আনসার সদস্য ও পুলিশ সদস্যসহ আরও ১০জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

মামলার বাদী শফিকুল তার অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, তিনি একজন গরু ব্যবসায়ী। ২০ বছর ধরে গরু ব্যবসা করে আসছেন। গত ১৫ অক্টোবর তিনি ধর্মপাশা উপজেলার মহেষখলা বাজার থেকে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ৪০টি গরু ক্রয় করেন। এসব গরু ক্রয়ের নির্ধারিত ফি দিয়েছেন এবং ইজারাদারের রসিদও তার কাছে ছিল। এর মধ্যে ১৯টি তার নিজের নামে এবং ২১টি তার ব্যবসায়ীক অংশীদার একই গ্রামের সাজলের নামে কেনা হয়। তারপর গরু গুলো স্থানীয় জালালপুর গ্রামের ইসলামের বাড়ি নিয়ে রাখেন। পরের দিন সকালে বড় একটি স্টিলবডি নৌকা ভাড়া করে গরু গুলো নিয়ে গত ১৮ অক্টোবর নিজের গ্রামের উদ্দেশে রওনা দেন। নৌকাটি টাঙ্গুয়া হাওরের রনসি এলাকায় যাওয়া মাত্রই অভিযুক্ত আর্শাদ শিয়া ও সেলিম নৌকা থামাতে বলেন এবং দুজন  নৌকায় ওঠে তাদের নিজেদের পরিচয় দেন তারা টাঙ্গয়ার হাওর সহব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য। এক পর্যায়ে গরু ব্যবসায়ীদের তারা বলে এসব গরু অবৈধভাবে এনেছেন। এসময় তাদের গরু ক্রয় করার বৈধ কাগজপত্র দেখানোর পরও তারা গরুগুলো না ছেড়ে হাওরে দায়িত্বে থাকা আনসার কাজলসহ আরও কয়েকজনকে নিয়ে আসেন নৌকাতে। তারা নানাভাবে গরু ব্যবসায়ীদের হুমকি দিয়ে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন। কিন্তু গরু ব্যবসায়ী শফিকুল টাকা দিতে অস্বীকার করায় তারা ক্ষুব্ধ হয়ে এসব গরু ভারতীয় বলে জেলে দেওয়ার হুমকি দেয়। এরপর তাদের ফোনে ঘটনাস্থলে আসেন টেকেরঘাট পুলিশ পাড়ির ইনচার্জ এএসআই আবু মোছা সহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য। তারা নৌকাতে এসেও নানাভাবে হুমকি দেন এবং তাদের কাছে টাকা চান।কিন্তু তারা টাকা না দেওয়ায় শেষ পর্যন্ত গরুগুলোসহ তাদের নৌকাটি টেকেরঘাট রেস্ট হাউসের পাশে নিয়ে রাখেন। তখন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুনতাসির হাসান আসেন বোর্ডে নৌকার গরুর কাছে আসেন।

অভিযোগে শফিকুল আরও উল্লেখ করেন, ইউএনও মুনতাসির হাসানের সামনেই তাদের কাছে টাকা চাওয়া হয় এবং তাদের নানাভাবে হুমকি দেওয়া হয়। একপর্যায়ে তারা গরিব মানুষ বলে ছেড়ে দেওয়ার জন্য আকুতি জানালেও এ এসআই মুছা সহ পুলিশ সদস্যরা ক্ষুব্ধ হয়ে গরুগুলির একটি জব্দ তালিকা করেন। এরপর মুনতাসির হাসান জব্দকৃত গরু গুলো সাত লাখ টাকা নিলাম দেখিয়ে অভিযুক্ত স্বপন দাসকে দিয়ে দেন। এরপর সেখান থেকে তাদের বিদায় করে দেওয়া হয়। তাহিরপুর উপজেলার (ভারপ্রাপ্ত) নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির হাসান বলেন, ৩৯টি গরু মালিক ছাড়া পেয়ে জব্দ তালিকা করা হয়। পরে কাস্টমস বিভাগে পাঠালে তারা গরুগুলো ৫লাখ ৯৬ হাজার টাকা নিলামে বিক্রি করে। মামলার বাদী পক্ষের আইনজীব মোহাম্মদ আমিরুল হক বলেন, আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্দ্রের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দিয়েছেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn